Trending

পশ্চিমা বিশ্বে উৎসবকালীন কেনাকাটায় নভেম্বরে রপ্তানি বেড়েছে ২৭ শতাংশ

চলতি বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার; আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা ৬ শতাংশ কম হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য– পশ্চিমা দেশগুলোয় উৎসবের মৌসুম শুরু হওয়ায় বেড়েছে বিক্রিবাট্টা। উচ্চ এই চাহিদায় ভর করে নভেম্বরে দেশের সার্বিক রপ্তানি আয়– আগের মাস অক্টোবরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে।  

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী,  নভেম্বরে মোট রপ্তানির মধ্যে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা অক্টোবরের ৩.১৬ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।

রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নভেম্বরে দেশে আসা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) আগের মাসের চেয়ে ২.৪ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার তথ্য জানায়। তার একদিন পরেই জানা গেল রপ্তানিতে এই ইতিবাচক ধারার তথ্য। 

চলতি বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার; আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা ৬ শতাংশ কম হয়েছে। করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে স্থগিত চাহিদার ব্যাপক পুনরুদ্ধার হয়, ফলে আগের বছরের নভেম্বরে রপ্তানিতেও চাঙ্গাভাব ছিল। 

পোশাক প্রস্তুতকারকরা জানান, শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে তাদের অতিরিক্ত চালান পাঠাতে হয়েছে। থ্যাংকস গিভিং ডে, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, বড়দিন ও বক্সিং ডে’র মতোন উৎসবের আগে পণ্য মজুত গড়তে বাড়তি এই চালান তাদের সহায়তা করেছে। 

সাধারণত জানুয়ারি পর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে সর্বোচ্চ বিক্রিবাট্টার মৌসুম (পিক সিজন) থাকে, তাই প্রস্তুতকারকরা আশা করছেন, আগামী মাসগুলোতেও রপ্তানিতে ইতিবাচক এই ধারা বজায় থাকবে। 

বিগত কয়েক রপ্তানি তথ্য বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

টিবিএসের সাথে আলাপকালে ডাচ ব্র্যান্ড জি-স্টার র (G-Star Raw) এর কান্ট্রি ম্যানেজার শফিউর রহমান বলেন, পোশাকের প্রায় প্রতিটি ব্র্যান্ড সাধারণত তাদের বার্ষিক বিক্রির ৩০ শতাংশ নভেম্বরেই করে, রপ্তানি বাড়ার যা মূল কারণ।  

ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ব্ল্যাক ফ্রাইডের বিক্রিবাট্টায় কিছু বিপণীর পণ্যসম্ভার শেষ হয়ে যায়, ফলে দ্রুতই তারা সংক্ষিপ্ত লিড টাইমে নতুন মজুত গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়।  

পোশাক খাতের শ্রমিক আন্দোলনের ফলে অক্টোবরে যেসব পণ্যের চালান স্থগিত হয়েছিল, তার একটি অংশও নভেম্বরে পাঠানো হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন শফিউর।   

প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভির বলেন, বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছে বড়দিনের আগে পণ্যের চালান পাঠাতে নভেম্বর মাসে রপ্তানিকারকদের ওপর চাপও ছিল। নভেম্বরে রপ্তানির চিত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে– পোশাক রপ্তানি আবারো গতবছরের ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারে, যা প্রত্যাশিতও। 

আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গেল নভেম্বরে রপ্তানি আয় কম হওয়ার জন্য প্রধানত তিনটি কারণ উল্লেখ করেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। এগুলো হলো– পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদায় গতিমন্থরতা, ইউনিট মূল্যের পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের ফলে নভেম্বরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। 

তিনি আরও বলেন, ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও থ্যাকস গিভিং ডে’র বিক্রিতে কিছু ব্র্যান্ডের পণ্যের স্টক শেষ হয়ে গেছে, তারা এখন নতুন করে পণ্যসম্ভার গড়ে তুলছে, এতে আগামী মাসগুলোয় রপ্তানি বাড়ার বিষয়ে পোশাক খাত বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণই দেখছে। ডিসেম্বরেও আছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব- বড়দিন ও বক্সিং ডে। এই সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর স্টোরে ব্যাপক কেনাকাটা হয়।   

পোশাক খাতের এই নেতা বলেন, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেতে থাকায়– প্রায় ১৮ মাস পরে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ সুদহার বাড়ানো বন্ধ রেখেছে। তারা বলছে, এখন প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল ভিত্তি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানির দাম ও পণ্য পরিবহনের খরচও কমছে। এসব খরচ কমার ঘটনা পৃথিবী যে ব্যবসাবাণিজ্যের একটি অনুকূল অবস্থায় ফিরছে তারও নির্দেশক। 

এদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শ্রম অধিকারের বিষয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও ফারুক হাসান মনে করেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে সরকার। বাংলাদেশ বৈশ্বিক ব্যবসায়িক অংশীদাররা ব্যবসার সাথে রাজনীতিকে মেশাবেন না বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি।  

ইপিবির তথ্যমতে, অক্টোবরে রপ্তানি আয় হয় ৩.৭৬ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল ২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। সে তুলনায়, নভেম্বরে মোট ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে; আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৫.০৯ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে যা ৬.০৫ শতাংশ কম হয়েছে। 

আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিকেএমইএ)-র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির যদি আর অবনতি নাহয়, তাহলে ব্যবসা আগের বছরের মতোন অনুকূল ধারায় ফিরবে।  

এদিকে পোশাকের চালান পাঠানোয় চাঙ্গাভাব থাকলেও, রপ্তানির অন্যান্য প্রধান খাতগুলো প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারাতেই ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য খাত, যেমন হোম টেক্সটাইম ও লেদার খাত।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নেতিবাচক ধারায় রয়েছে– কৃষিপণ্য, পাটপণ্য এবং প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিও।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button