Bangladesh

পাঁচ বছরে সড়কে শেষ দেড় শতাধিক পরিবার

চলতি বছরের এপ্রিলে ঝালকাঠির বারেক মৃধার দুই মেয়ে বাবার বাড়িতে ঈদ করেন। ছুটি শেষে তাঁরা একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে (প্রাইভেট কার) করে বরিশাল যাচ্ছিলেন। পথেই একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটিকে চাপা দেয়। এতে গাড়ির চালকসহ বারেক মৃধার দুই মেয়ের পরিবারের সবাই নিহত হন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে সড়কে দেড় শতাধিক পরিবার পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।

নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। তারা নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে পরিবারভিত্তিক প্রাণহানির এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্স আরোহী হিসেবে একসঙ্গে পুরো পরিবার বা এক পরিবারের একাধিক সদস্য নিহতের ঘটনা বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে ১২৩টি দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী ২৪৬ জন স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। আর ৮৪টি দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী ১৬৮ জন বাবা-ছেলে প্রাণ হারিয়েছেন।

অটোরিকশা দুর্ঘটনায় ৩৫২টি পরিবারের ১ হাজার ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ১৩৭টি, তিনজন নিহতের ঘটনা ৭৮টি, চারজন নিহতের ঘটনা ৬২টি, পাঁচজন নিহতের ঘটনা ৩৮টি, ছয়জন নিহতের ঘটনা ২৬টি আর সাতজন নিহতের ঘটনা ১১টি।

মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ৭৫টি পরিবারের ২৮০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ১৬টি, তিনজন নিহতের ঘটনা ২২টি, চারজন নিহতের ঘটনা ১৭টি, পাঁচজন নিহতের ঘটনা ১১টি, ছয়জন নিহতের ঘটনা ৮টি আর ১১ জন নিহতের ঘটনা ১টি।

ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) দুর্ঘটনায় ৭৬টি পরিবারের ২৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ২৪টি, তিনজন নিহতের ঘটনা ২১টি, চারজন নিহতের ঘটনা ১৭টি, পাঁচজন নিহতের ঘটনা ১৪টি।

অ্যাম্বুলেন্সে দুর্ঘটনায় ১৮টি পরিবারের ৭০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের তিনজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে নয়টি, চারজন নিহতের ঘটনা পাঁচটি, পাঁচজন নিহতের ঘটনা তিনটি, আটজন নিহতের ঘটনা একটি।

দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে পাঁচটি বিষয় চিহ্নিত করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি বলছে, পরিবারের সবার একসঙ্গে বেড়াতে বা কোনো কাজে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কে অটোরিকশার চলাচল বেড়ে যাওয়া, অধিকাংশ মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস না থাকা, চালকদের অদক্ষতা ও বিশ্রামহীন থাকা এবং ট্রাফিক আইন না মানার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে।

এ ধরনের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে চারটি সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সেগুলো হলো মোটরসাইকেল আরোহীদের ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করা, ট্রাফিক আইন মেনে মোটরযান চালানো, মহাসড়কে বিভাজক ও ‘সার্ভিস রোড’ নির্মাণ এবং সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চলাচলে নজরদারির ব্যবস্থা করা।

এ ছাড়া সার্বিকভাবেও দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কোনোভাবেই কমছে না। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গত অক্টোবরে জানিয়েছিল, গত সাড়ে পাঁচ বছরে দেশে প্রায় ৩৩ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার ৩৮৪ জন নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি একই মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ বছরে দেশে ৬০ হাজার ৯৮০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৮ জন। আহত ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d