পাইলটের বিচক্ষণতায় প্রাণে বাঁচলো ৭১ যাত্রী

কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে দুপুর দেড়টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৪৩৬ ফ্লাইট (ড্যাশ ৮-৪০০)। ফ্লাইটে শিশুসহ ৭১ জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া দুইজন পাইলট ও দুইজন ক্রু ছিলেন। সবমিলিয়ে ওই ফ্লাইটে যাত্রী ও বিমানের স্টাফসহ ৭৫ জন অবস্থান করছিলেন। ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড ছিলেন ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে টেক অফের সময় এয়ারক্রাফটের ল্যান্ডিং গিয়ারের একপাশের একটি চাকা যান্ত্রিক কারণে খুলে গেছে। পরে পাইলটের বিচক্ষণতা ও দক্ষতায় বিমানটি দুপুর ২টা ২২ মিনিটে নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করে। প্রাণে বেঁচে যান সকল যাত্রী। তবে চাকা খুলে যাওয়ার খবরে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা আতঙ্কিত হলেও নিরাপদ ছিলেন। এ ঘটনায় বিমানের চিফ অব সেইফটি ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বিমানের প্রকৌশল শাখা থেকে আরও একটি কমিটি গঠন করা হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৫শে অক্টোবর সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইটের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। ৮ বছর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বার্তায় জানায়, দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা বিমানের ফ্লাইট বিজি-৪৩৬, যাতে ৭১ জন যাত্রী ছিলেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পথে বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ার চাকার সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানানো হয়। তাৎক্ষণিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে।
এদিকে, কী কারণে বিমানের চাকা খুলে পড়লো এ নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। কারণ যেকোনো বিমান উড্ডয়নের আগে টেকনিক্যাল সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই উড়ার অনুমতি দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে বিমানের ওই ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে সেগুলো করা হয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও সামনে এসেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে বলে বলা হয়েছে বিমানের তরফে। তবে কী ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল এক্ষেত্রে কারও গাফিলতি ছিল কিনা- সে বিষয়ে কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন তানভির খুরশিদ বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তবে বিমানের বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, পেছনের এক চাকাতেও বিমান জরুরি অবতরণ করতে পারে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ.বি.এম রওশন কবীর বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে টেক অফের সময় এয়ারক্রাফটের ল্যান্ডিং গিয়ারের একপাশের একটি চাকা যান্ত্রিক কারণে খুলে যায়। ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং ঢাকায় জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। এর পরেই ফ্লাইটটি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় শাহজালালে। প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সবকিছু। কিন্তু পাইলট জামিল বিল্লাহ ও তার ক্রুদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় ফ্লাইট দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঢাকায় নিরাপদে অবতরণ করে। তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ’র রয়েছে ৮ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইং অভিজ্ঞতা। অবতরণের পরে যাত্রীরা পাইলট, ক্রুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. সাফিকুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দু’টি চাকার মধ্যে থেকে একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। পরে একটি চাকা দিয়েই নিরাপদে অবতরণ করে। আমাদের পক্ষ থেকে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।