পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলোকে পিটিআই’র খবর অপসারণের নির্দেশ
পাকিস্তানের একটি বেসরকারী গণমাধ্যমের শীর্ষ সদস্য সাংবাদিক মেহমুদের (ছদ্মনাম) ফোনে মঙ্গলবার একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা আসে। বার্তা প্রেরকের নাম তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বার্তাটি পড়েন। মেহমুদ আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘মূলত, ব্যক্তিটি আমাদের কিছু নির্বাচনী কাজ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, আমরা যেন কোনোভাবেই পিটিআই-এর পতাকা ব্যবহার না করি বা দল সমর্থিত প্রার্থীদের সাথে তাদের সম্পর্ক উল্লেখ না করি। এটি স্পষ্টভাবে আমাদেরকে প্রার্থীদের শুধুমাত্র স্বতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করতে এবং তারা কোন দলের সাথে সম্পর্কিত তা না দেখাতে নির্দেশ দিয়েছে।’
এমন একজন কর্মকর্তা মেহমুদকে বার্তাটি প্রেরণ করেছেন, যিনি পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন, যেটি একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে দেশটির ৭৫ বছরের অস্তিত্বের তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি এবং পর্দার আড়ালে থেকেও দেশ শাসন করেছে, এমনকি যখন বেসামরিক সরকারগুলো ছিল তখনও ক্ষমতার বেশিরভাগ অংশকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। মেহমুদ এবং অন্যান্য সংবাদকর্মীরা আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন যে, দেশের ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা কার্যকরভাবে পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির খবর প্রচারের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রতিষ্ঠিত পিটিআইকে ব্যাপকভাবে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু দেশটির ক্রিকেটের মহানায়ক ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁসের অভিযোগে কারারুদ্ধ রয়েছেন। তিনি অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদে আস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইমরান খান এবং পিটিআই ব্যাপক দমন-পিড়নের শিকার হয়েছে। পিটিআই-এর কয়েক হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কয়েকশ’ নেতা দল ছেড়েছেন, অনেকে সামরিক বাহিনীর চাপের মুখে।
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য ইমরান খান এবং তার দলের কয়েক ডজন নেতার মনোনয়নপত্র পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বাতিল করে দিয়েছে। সম্প্রতি, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট পিটিআইকে তার নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট নিষিদ্ধ করার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে বহাল রেখেছে এবং দলের অনেক প্রার্থীকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাড়াতে বাধ্য করেছে। পাকিস্তানি গণমাধ্যম ইতিমধ্যেই খানের বক্তৃতা বা সমাবেশের সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত ছিল। কিন্তু এখন, পিটিআই-এর খবর প্রচারের উপর বিধিনিষেধ আরও বিস্তৃত হয়েছে।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে একটির নির্বাহী প্রযোজক তার পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে তাদের নামের সাথে পিটিআই দলের পতাকা না দেখাতে এবং জোর দিতে বলা হয়েছে যে তারা শুধুমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী।’
এখন, ইমরান খান এবং তার দল ভীতি ও হয়রানির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি, পিটিআই-পন্থী হিসাবে চিহ্নিত সংবাদ কর্মীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। একাধিক সাংবাদিককে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ধরে নিয়ে গেছে, প্রায়ই ব্যাখ্যা ছাড়াই, এবং কয়েকদিন এমনকি কয়েক মাস ধরে আটকে রেখেছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হেয়েছে। শুধু সাংবাদিকরাই নন যারা এই প্রচার নিষেধাজ্ঞার অভিযোগ করছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে যে পাকিস্তান সরকার প্রচার মাধ্যম এবং ব্যক্তিদের উপর চাপ বাড়িয়েছে।