International

পাকিস্তানে হত্যা মিশনে জড়িত ভারত ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট একটি ভয়ঙ্কর তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০০১ সাল থেকে পাকিস্তানের প্রায় অর্ধডজন মানুষকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড এনালাইসিস উইং (র) হত্যা করেছে। কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে খালিস্তানপন্থি নেতাদের হত্যার অপারেশন পরিচালনা করা হয়, এক্ষেত্রেও একই রকম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওই পত্রিকা এ খবর প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানের ভেতরে ঘটানো হলেও তাতে সরাসরি ভারতীয় নাগরিকরা অংশ নেয়নি। তবে পাকিস্তানের অপরাধী অথবা আফগানিস্তানের অপরাধীদের শুটার হিসেবে ভাড়া করা হয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, র-এর পক্ষে ভাড়া করা হয়েছিল দুবাইভিত্তিক ব্যবসায়ীদের। তারপর ওইসব ব্যবসায়ী আলাদা আলাদা টিম নিয়োগ করে নজরদারি করতে, হত্যাকাণ্ড ঘটাতে এবং হাওলার মাধ্যমে পাওনা পরিশোধে। এভাবে ২০২২ সালে হত্যা করা হয় জহুর মিস্ত্রিকে। অভিযোগ আছে ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এলারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ছিনতাইকালে ভারতীয় একজন যাত্রীকে তিনি হত্যা করেছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে তাদেরকে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলেছেন, তানাজ আনসারী হিসেবে পরিচিত একজন নারী প্রকৃতপক্ষে ছিলেন ভারতীয় একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। মিস্ত্রিকে হত্যা অপারেশনে তিনি জড়িত ছিলেন। জহুর মিস্ত্রিকে শনাক্ত করতে তিনি দু’জন পাকিস্তানিকে ভাড়া করেন। হত্যা মিশন চালাতে ভাড়া করেন দু’জন আফগান নাগরিককে। উপরন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার অন্য তিনজনকে ভাড়া করা হয় হত্যায় জড়িতদের কাছে কমপক্ষে ৫৫০০ ডলার পরিশোধ করতে। একই সূত্রকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ভারতীয় এজেন্ট ওই নারী সৈয়দ খালিদ রাজার হত্যাকাণ্ডে জড়িত। খালিদ রাজা ১৯৯০-এর দশকে কাশ্মীরে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৬ সালে পাঠানকোট হামলার মূলহোতা বলে পরিচিত শাহিদ লতিফকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সিয়ালকোটে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই সময় বলা হয় এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।

কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, শ্রমিক মুহাম্মদ উমাইর নামে একজনের নেতৃত্বে একদল মানুষ হত্যা করে লতিফকে। পরে উমাইরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বীকার করেন যে, লতিফকে হত্যার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে দুবাই থেকে। তিনি দুবাইয়ে সেভ হাউজের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে দেন। ওই নিরাপদ হাউসে পরে পাকিস্তানি এজেন্টরা অভিযান চালায়। তারা সেখানে গোয়েন্দা বিষয়ক তথ্য পান। কিন্তু সেটা ভাড়া নেয়া দুই ভারতীয়কে খুঁজে পাননি। ওই দুই ভারতীয়ের নাম অশোক কুমার আনন্দ সালিয়ান এবং যোগেশ কুমার। এ অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে ওয়াশিংটন পোস্টকে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অতীতের সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডে তাদের ভূমিকার কথা নিশ্চিতও করেনি আবার প্রত্যাখ্যানও করেনি ভারত কর্তৃপক্ষ। তারা শুধু বলেছে, হত্যাকাণ্ড তাদের সরকারের নীতি নয়। 

কানাডায় খালিস্তানপন্থি নেতা হরদিপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে আরেক নেতা গুরপাতওয়ান্ট সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র সাজানোর জন্য আট মাস আগে ‘র’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তারপর ওয়াশিংটন পোস্ট তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা রিপোর্ট প্রকাশ করে যে, পাকিস্তানের মাটিতে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার। বিদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকা নিয়ে ২০২৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সাইরাস কাজি বলেছিলেন, পাকিস্তানের মাটিতে তাদের দু’জন নাগরিককে হত্যার সঙ্গে ভারতীয় এজেন্টদের যোগসূত্রের বিষয়ে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ আছে। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই পত্রিকায় আরও বলা হয়, বিদেশের মাটিতে যাকেই ভারত শত্রু মনে করবে তাদেরকে টার্গেট করার একটি নীতি গ্রহণ করেছে নয়াদিল্লি। এমনিতেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজমান। তার ওপর ২০১৬ সালে ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে কুলভূষণ যাদবকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন একতরফাভাবে, আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করে বাতিল করে ভারত। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন জারি করে। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও কঠিন আকার ধারণ করে। কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তব্ধ হয়ে যায়।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button