পাকিস্তান সরকার ইমরান খানের দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে
ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, ‘আমরা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, সংবিধানের ১৭ নম্বর আর্টিকেলে সরকারকে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে যাবে।’
ইমরান খানের দল পাকিস্তান পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। পিটিআইর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রম’র অভিযোগ এনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার।
সোমবার (১৫ জুলাই) তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তারা আর্টিকেল ৬ এর অধীনে দলটির প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভি এবং জাতীয় পরিষদের (এনএ) প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই পদক্ষেপ কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলকে জাতীয় পরিষদে একক বৃহত্তম দল হতে বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত শনিবার ইমরান খানকে ইদ্দত মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নতুন আটকাদেশ জারি করায় তিনি মুক্তি পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী তারার বলেন, দেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়, তবে পিটিআইয়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি বিদেশ থেকে পিটিআইয়ের তহবিল সংগ্রহের মামলা, ৯ মে’র দাঙ্গা এবং গোপন তারবার্তা (রাষ্ট্রীয় গোপন নথি প্রকাশ) ইস্যু প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, সংবিধানের ১৭ নম্বর আর্টিকেলে সরকারকে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে যাবে।’
তারার বলেন, আপনারা রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করতে গিয়েছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ১৫ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন।
তিনি বলেন, ‘আরিফ আলভি, ইমরান খান ও কাসিম সুরির বিরুদ্ধে আর্টিকেল ৬ এর অধীনে মামলা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়ার পর আর্টিকেল ৬ অনুযায়ী বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হবে।
এছাড়া সংরক্ষিত আসনের বিষয়েও সরকার আইনের আশ্রয় নেবে বলে জানিয়েছেন তারার।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির জাতীয় নির্বাচনের আগে পিটিআই-এর নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিকে স্বীকৃতি দেয়নি জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। এমনকি নির্বাচনে পিটিআইয়ের দলীয় প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহার করতেও দেওয়া হয়নি।
কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৯২াট আসন পেয়েছে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রাথীরা।তবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ায়, সরকার গঠন করদত পারেনি দলটি।
কী আছে আর্টিকেল ১৭-এ
পাকিস্তানের সংবিধানের আর্টিকেল১৭ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘সরকারি চাকরিতে না থাকা পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার বা সদস্য হওয়ার অধিকার থাকবে। তবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতার স্বার্থে আইনের মাধ্যমে সেই দলের ওপর যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতার জন্য ক্ষতিকর পদ্ধতিতে গঠিত হয়েছে বা এ ধরনের কাজ করছে, কেন্দ্রীয় সরকার এমন ঘোষণা দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’
কী আছে আর্টিকেল ৬-এ
সংবিধানের আর্টিকেল ৬-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বলপ্রয়োগ বা শক্তি প্রদর্শন করে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক উপায়ে সংবিধান রহিত করিলে বা বাতিল করিলে বা স্থগিত করা বা স্থগিত রাখার চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করলে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে দোষী হবেন।’