Hot

‘পাখিরা নীড় থেকে বের হয়, শিশুরা ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যায়, আমি যাই কোর্টে ’

উত্তরের সুবজ, শ্যামল, শান্ত, নির্ভেজাল জনপদ রংপুরের সন্তান হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র।

রাজনীতিতে পদার্পণ করে দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব ও সভাপতির। এখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। রাজনীতিবিদ হিসেবে এক বিরল ইতিহাস গড়েছেন (অনেকের মতে) হাবিব-উন-নবী সোহেল। ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৫১টি মামলা হয়েছে এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে- এটি গ্রিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের লিস্টে স্থান পাওয়ার মতো তথ্য। দীর্ঘকায় গঠন ও শান্ত স্বভাবের রাজনীতিবি সোহেলের এখন সকাল-দুপুর কাটে কোর্টের বারান্দায়।

তিনি জানান, গাড়ী পোড়ানো, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ী ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দান, পুলিশের কাজে বাধা দানসহ এমন অসংখ্য অভিযোগে ৪৫১ টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যার সবই রাজনৈতিক মামলা। যখন সৈরশাসক ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের বিরুদ্ধে যেকেউ প্রতিবাদ করলেই এ ধরনের মামলা হয়। যেমন- ময়লার গাড়ি ভাঙচুর মামলার মধ্যেও আমি আছি। একবার মামলা দেয়া হয়েছে বৈদ্যতিক খুটির উপর উঠে স্কু ঢিলা করে দিয়েছে এমন অভিযোগে।

একের পর এক মামলায় বিপর্যস্ত এই বিএনপি নেতা বলেন, প্রতিদিন ভোর বেলা পাখি উঠে নীড় থেকে বের হয়, বাচ্চা ইউনিফর্ম পড়ে স্কুলের দিকে যায় আর আমি কোর্টের দিকে রওনা দেই। সপ্তাহের দুই দিন বাদ দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই আমাকে কোর্টে যেতে হয়। এটা কোনো লাইফ স্টাইল হতে পারে না। এটা স্বাভাবিক জীবনের একটা বড় বাধা। প্রতিদিন কোর্টে যেতে হয়। আর কোর্ট তো কেমন, সেখানে থাকে শত শত মানুষ চলাফেরা, নিত্যদিনই ভিড় ঠেলে উপরে উঠতে হয়। আবার কখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় বিচারপতি সাহেবরা সময় মতো আসেন না। তারা দেরি করে বসেন, সেই সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। আবার একই সময়ে ৭/৮টা করে মামলার হাজিরা দিতে হয়।এক কোর্ট থেকে দৌড়ে আরেক কোর্টে যাওয়া, সিএমএম কোর্ট থেকে জজ কোর্টে যাওয়া, জজ কোর্ট থেকে আবার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যাওয়া এভাবেই দিনের একটা বড় অংশ এমন যন্ত্রণার মধ্যে চলে যায়। কোর্টে দিনভর দৌড়াদৌড়ি করার পর অন্য কোনো কাজ করার মতো শারীরিক ও মানসিক শক্তি থাকে না।

হাবিব-উন-নবী সোহেল তার যাপিত জীবনের দৈনন্দিন সূচি তুলে ধরে বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় বের হই। যেদিন ৮/৯টা মামলা থাকে সেদিন বেশি সময় লেগে যায়। কোনো কোনো দিন সাক্ষী আসেন সেদিন সময় বেশি লাগে। অনেক সময় ২টা, ৩টাও বেজে যায়। যেদিন সাক্ষী না থাকে সেদিন প্রায় ১টা পর্যন্ত থাকতে হয় কোর্টে। দুপুর পর্যন্ত কোর্টে চলে গেলে তারপর আর কোনো কাজ করার সময় থাকে না।

ব্যক্তি জীবনের মতো পারিবারিক জীবনেও মামলা-গ্রেফতারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যখনই আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হয় তখনই পুলিশ বাড়িতে হানা দেয়া শুরু করে। এজন্য অনেক সময় আত্মগোপনেও থাকতে হয়েছে। ১৮’র নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিন আমাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। গ্রেফতার হয়ে গেলে তো হয়েই গেলাম তখন তো আর কাজ কর্ম করা হয়না। সে সময় আত্মগোপনে থেকেই রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বরে নয়াপল্টনের ঘটনা পর আমার পরিচিত সবার বাড়ি গিয়ে ডিবি পুলিশ আমাকে খুঁজেছে। আমার পরিচিত, আত্মিয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের এটা তাদের গা-সয়ে গেছে। তারা জনে যে পুলিশ এসে আমার খোঁজ করবে। তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

সোহেল বলেন, আমরা যারা সত্যের পক্ষে অবস্থান নেই বরাবরই সৈরশাসকরা আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন করে। বহু আগে থেকে এমন চলার কারণে আমার পরিবারের সবাই এখন কিছু মনে করে না। প্রায়ই পুলিশ বাসায় এসে জিজ্ঞাসা করে কোথায় গেলাম না গেলাম। নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি তাদের হতে হয়। বাচ্চারাও ছোট সময় থেকেই বাবার নিরাপত্তার জন্য অনেক সময় সংবাদ সম্মেলন করেছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এতো মামলা, বার বার কারাগারে যাওয়া, নির্যাতন কোন কিছুতেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে আমার মতো সারাদেশের নেতাকর্মীরা একইরকম মামলা, হামলা, গ্রেফতারকে তুচ্ছ করে দিয়ে অংশ নিচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেই আমরা নির্ভার হবো।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button