Trending

পাচারের অর্থ ফেরাতে বড় বাধা ‘লেয়ারিং’

বিদেশে টাকা পাচারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লেয়ারিং করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে অন্য এক দেশে, পরে সেই দেশ থেকে নিরাপদ কোনো দেশে টাকাগুলো পাচার করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে সরাসরি শেষ গন্তব্যে টাকা পৌঁছেনি। এই অবস্থায় যেকোনো বিদেশি কোর্টে এসব টাকা বাংলাদেশ থেকে এসেছে তা প্রমাণ করা কঠিন হবে।

আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একজন কর্মকর্তা এ কথা জানান। তিনি আরো বলেন, এই লেয়ারিংই হচ্ছে টাকা ফেরত পাওয়ায় বড় বাধা। কোনো দেশই চায় না তার দেশে বিনিয়োগ হওয়া টাকা ফেরত দিতে।

পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে অন্তত পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা। দ্বিতীয় ধাপে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ। তৃতীয় ধাপ, সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে অভিযোগ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আদালতে মামলা। চতুর্থ ধাপে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাচারকারীর বিরুদ্ধে দেশের আদালতের রায় এবং শেষ ধাপে টাকার গন্তব্য দেশের আদালতে আন্তর্জাতিক আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা করে পাচারকারীর বিরুদ্ধে রায় এলেই অর্থ ফেরানো সম্ভব।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আট মাস পার হলেও পাচারের অর্থ ফেরানোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ তদন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের বয়স সাত মাস পার হয়েছে। এই সময় যথেষ্ট নয়। সাত মাসে জব্দ করা হয়েছে দেড় সহস্রাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সেখানে পাওয়া গেছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অর্থ ও শেয়ার।

বিএফআইইউ প্রধান নিয়োগের পর গতি হারিয়েছে পাচারকারী শনাক্তের কাজ।

গত ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের সম্মেলনকক্ষে ‘অর্থপাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং ইস্যু’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আমরা বিদেশি ল ফার্ম নিয়োগ করেছি। কারণ আমরা সিস্টেমেটিক্যালি এ ধরনের সমস্যা আগে ফেস করিনি। এটা শুধু দেশের আইনে হবে না, বিদেশিদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এসব অর্থ ফেরত আনতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে এখনো অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে গঠন করা হয়েছে ‘স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্স’। তারা প্রতিবেদন তৈরির পর বিদেশি আইনজীবী বা ল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এই কাজ সম্পন্ন হবে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে আড়াই শতাধিক তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি ও দুদকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০টির অডিট রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে একটা একটা করে মামলা করা শুরু করেছে দুদক। অভিযুক্তদের সবাই বিগত সরকারের আমলে অবৈধ সুবিধা নেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। খুব শিগগির বাকিগুলোর অডিট সম্পন্ন করে দুদক ও সিআইডিতে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা।

গত ডিসেম্বরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্ত সংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করে সরকার। নতুন প্রজ্ঞাপনে বাড়ানো হয়েছে টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি। এত দিন কার্যপরিধিতে তিনটি বিষয় থাকলেও এবার করা হয়েছে ছয়টি। এগুলো হলো বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা; পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে হওয়া মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া; বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া; জব্দ বা উদ্ধার সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ, বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য আহরণ করা এবং পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ সোয়া চার লাখ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, টাকা পাচার হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। মূলত টাকাটা পাচার হয়েছে যে ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক প্রভাববলয়ে ছিল, তাদের মাধ্যমে। ওই সব ব্যাংকের ঋণ নিয়ে তা মেরে দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গত ১০ বছরে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ও কেনাকাটায় দুর্নীতি। শুধু মেগাপ্রকল্পেই নয়, ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে ১০০ বা ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পেও।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েই এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। টাকা কবে ফেরত আসবে, সেটা পরের কথা। তবে তারা এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমি মনে করি, তা ঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে একটা ভালো তদারকি দেখা যাচ্ছে।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। আর টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে বিএফআইইউ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী টাস্কফোর্সের কাজ সমন্বয় করবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor