Bangladesh

পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনী সামিটের আজিজ

► ভাই ফারুক খানের মন্ত্রিত্বের দাপটেই হয়েছিলেন বেপরোয়া ► দেশের টাকা নিয়েই সিঙ্গাপুরে ১.১২ বিলিয়ন ডলারের মালিক

ভাই প্রভাবশালী মন্ত্রী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় শীর্ষ ফোরাম প্রেসিডিয়ামেরও মেম্বার। বলা যায়, ক্ষমতার একদম শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান। বাড়তি পাওনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহ আর আশীর্বাদ।

আর কী চাই? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার একেবারে ‘টপে’ থেকে এটিকে মনমতো কাজে লাগিয়েছিলেন গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই আজিজ খান। গত ১৫ বছরে এই ক্ষমতার ঢাল ব্যবহার করে তিনি শুধুই তর তর করে ওপরে উঠেছেন। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ, সরকারি কেনাকাটা, পণ্য ও সেবার সরবরাহ করে সবাইকে পেছনে ফেলে ধনী থেকে আরো ধনী হয়েছেন। বেসরকারি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের মালিক মুহাম্মদ আজিজ খানের পরিচিতি এখন শুধু বাংলাদেশের ধনী হিসেবেই নয়; বরং তিনি এখন সিঙ্গাপুরেরও অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তি।

নাম উঠেছে দেশটির শীর্ষ ৪১তম ধনীর তালিকায়। তথ্য-উপাত্ত বলছে, দুই হাতে টাকা কামিয়েছেন দেশে, আর তা পাচার করে ধনকুবের হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। বলতে গেলে, বিলিয়নেয়ার আজিজ খান প্রায় পুরো টাকাটাই দেশ থেকে পাচার করে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য সূত্র ও তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। অভূতপূর্ব এক ছাত্র অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর ওই সরকারের সুবিধাভোগীরা প্রায় কোণঠাসা। সামিট গ্রুপ তাদেরই একটি। জানা যায়, সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই গ্রুপটির পরিচিতি দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অঘোষিত ‘মা-বাপ’ হিসেবে। তাদের হাতে বিদ্যুতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

এলএনজির নিয়ন্ত্রণও এই গ্রুপের হাতে। তথ্য-প্রযুক্তি, টেলিকম খাতের বড় স্টেকহোল্ডার সামিট গ্রুপ। এগুলোর বাইরেও সরকারের বড় বড় কেনাকাটায় আধিপত্য ছিল এই গ্রুপটির। এর মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে আজিজ খানের সামিট গ্রুপ।

গ্রুপের মালিক আজিজ খান বড় ভাই সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানকে সামনে রেখে ক্রমেই হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের তথ্য মতে, আজিজ খান ১.১২ বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে সিঙ্গাপুরের ৪১তম শীর্ষ ধনীর তালিকায় নাম লেখান। অথচ এই টাকা তিনি বাংলাদেশ থেকে কোনো বৈধ উপায়ে নিয়েছেন বলে কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নেই। বরং এ পর্যন্ত দেশের ২০টি প্রতিষ্ঠানের ২৪টি ভেঞ্চারকে সর্বসাকল্যে ৬৯.৫ মিলিয়ন বা প্রায় সাত কোটি ডলার বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ‘এই টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫.৪৫ মিলিয়ন ডলার বা সাড়ে চার কোটি ডলার বৈধভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর বাইরে আর কাউকে এর চেয়ে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অথচ এই ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আজিজ খানের বা সামিট গ্রুপের নাম নেই। অর্থাৎ আজিজ খান বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ বিদেশে নিয়ে গেছেন তার পুরোটাই অবৈধ। আইনের ভাষায় যাকে অর্থপাচার বলা হয়।’

আজিজ খান শুধু যে সিঙ্গাপুরেরই শীর্ষ ধনী তাই নয়; যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসের ২০২৪ সালে প্রকাশিত নিরীক্ষা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সারিতেও আছেন মুহাম্মদ আজিজ খান। সাময়িকীটির করা ৭৮টি দেশের দুই হাজার ৭৮১ জনের তালিকায় দুই হাজার ৫৪৫ নম্বরে রয়েছেন আজিজ খান। যার মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১.১২ বিলিয়ন ডলার। আয়ের খাত হিসেবে জ্বালানি খাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ বছর বয়সী আজিজ খান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হয়েও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। ছেড়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। আজিজ খান সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী। আগের বছর (২০২৩) সে দেশের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ৪২ নম্বরে ছিলেন। এ বছর এক ধাপ এগিয়েছেন তিনি।

অর্থ পাচারসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে ২০১৬ সালে পানামা পেপারসে সামিট গ্রুপের আজিজ খানের নাম শীর্ষে উঠে আসে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করে। জানা যায়, ক্ষমতার প্রভাব আর আইনি জটিলতায় এখনো শেষ হয়নি অনুসন্ধান।

বাংলাদেশে সামিট গ্রুপের দুর্নীতি

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) দপ্তর থেকে সম্প্রতি সামিট গ্রুপের দুর্নীতির তথ্য বের হয়েছে। মাত্র দুই মাস আগেই বিটিআরসি থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সামিট কমিউনিকেশনস কোনো ফি ছাড়াই তার শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। তবে আকস্মিকভাবেই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। অভিযোগ উঠেছে, সামিট কমিউনিকেশন নতুন শেয়ার ইস্যুর আড়ালে শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রি করছিল।

সামিট কমিউনিকেশন ২০০৯ সালে আত্মপ্রকাশের পর টেলিকম ও ইন্টারনেট সেক্টরের বৃহত্তম কম্পানিতে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠানটি মার্চের শেষের দিকে আবুধাবি ও মরিশাসভিত্তিক দুটি পৃথক কম্পানির কাছে ১৭০ কোটি পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের নতুন শেয়ার ইস্যু করার জন্য বিটিআরসির অনুমোদন চায়। আবেদন অনুসারে প্রতিটি শেয়ার ১২ টাকা দরে মোট ১৪.২০ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করা হবে। এর এক মাস পর এটির প্রাক-অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরের মাসেই সরকারি অনুমোদন আসে। এরপর চলতি বছরের ১২ জুন বিটিআরসি কম্পানিটিকে কোনো চার্জ ছাড়াই শেয়ার ট্রান্সফারের অনুমতি দেয়।

সরকারি অনুমোদনের জন্য পাঠানোর আগে বিটিআরসি আইনি মতামত চেয়েছিল। যেখানে সামিট কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে কোনো চার্জ প্রযোজ্য হবে না বলে মতামত দেওয়া হয়েছিল। তবে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সামিট আসলে নতুন শেয়ার ইস্যু করার আড়ালে শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রি করছিল। ফলে সামিটের ওপর বিটিআরসির আইনি ও লাইসেন্সিং শর্ত অনুযায়ী চার্জ প্রযোজ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামিট কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের ছোট ভাই। ফরিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়েরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফলে সামিটকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ বিটিআরসির কর্মকর্তাদের।

সামিট কম্পানিগুলোর সঙ্গে শেয়ার বিক্রির চুক্তিও বিটিআরসিকে জমা দেয়। সেখানে দেখা যায়, আবুধাবিভিত্তিক কম্পানি গ্লোবাল এনার্জিকে সামিটের যে নতুন শেয়ার দেওয়ার চুক্তি হয়েছে, তার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে একজন হলেন আদিবা আজিজ খান, যিনি ফরিদের বড় ভাই সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের মেয়ে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন শেয়ারের মধ্যে ১১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ৯.৪৪ কোটি শেয়ার ইস্যু করা হয়েছিল। অন্যদিকে ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মূল্যের আরো ৪.৪ কোটি শেয়ার মরিশাসভিত্তিক সেকোইয়া ইনফ্রা টেককে দেওয়া হয়েছিল।

এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতন হলে বিটিআরসি আইন সংস্থাকে আবার চিঠি দিয়ে বলে, তাদের আইনি মতামত শুধুমাত্র উপদেশমূলক; বাধ্যতামূলক নয়। এরপর গত ১৫ আগস্ট সামিট কমিউনিকেশনকে তাদের শেয়ার হস্তান্তরের ফি না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি।

সামিট কমিউনিকেশনের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সামিট কমিউনিকেশনস বিটিআরসির দেওয়া ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা জমা দিয়েছে।’

এসব বিষয়ে সামিটের মালিক আজিজ খান ও ওই গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁদের কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সামিট কমিউনিকেশনের এই অর্থ নয়ছয় করার চেষ্টা এবং পরে অর্থ প্রদান করা, সামিট গ্রুপের ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি উদাহরণ। ফলে এই অর্থ প্রদানকে সামনে রেখে যেন সামিটের ক্ষমতার অপব্যবহারের আড়ালে আর্থিক অনিয়ম ঢাকা না পড়ে।’

এদিকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গত ৭ অক্টোবর সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদ আজিজ খান, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, আঞ্জুমান আজিজ খান, আয়শা আজিজ খান, আদিবা আজিজ খান, আজিজা আজিজ খান, জাফর উদ্দিন খান, মোহাম্মদ লতিফ খান, মোহাম্মদ ফরিদ খান, সালমান খান ও মোহাম্মদ ফারুক খানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, আজিজ খানের ক্ষমতার ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে পরিচিত সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানকেও গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নানান পটপরিবর্তনে ভাগ্য খুলে যাওয়া ফারুক খান ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন কিনে হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। ক্রমান্বয়ে হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি। টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto