পাড়ি জমালো ‘শক্ত পালের’ কার্গো, লক্ষ্য কার্বন নিঃসরণ কমানো
জাহাজটিতে রয়েছে দুটি উইন্ডউইং, এদের উচ্চতা ১২৩ ফিট করে। এই দৃঢ় পালগুলোতে যে পদার্থ ব্যবহৃত হয়েছে, তা ‘উইন্ড টারবাইন’ তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।
প্রথমবারের মতো সাগরে পাড়ি জমিয়েছে শক্ত পালযুক্ত এক কার্গো জাহাজ। এর একেকটি পালের উচ্চতা ১০ তলা বাড়ির সমান। এর লক্ষ্য হল, জাহাজ শিল্পে ব্যবহৃত কার্বনের নিঃসরণ কমিয়ে আনা।
‘পিক্সিস ওশান’ নামের ওই জাহাজে ‘উইন্ডউইংস’ শ্রেণির পালগুলো পরীক্ষা করা হবে। এটি এমনভাবে নকশা করা যাতে প্রচলিত বায়ু শক্তির সহায়তায় জ্বালানির পাশাপাশি জাহাজ শিল্প থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
পাল নির্মাতাদের অনুমান বলছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কার্গো জাহাজ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ‘ডিকার্বনাইজ’ করা সম্ভব। পাশাপাশি, ২০৫০ সাল নাগাদ সামুদ্রিক খাত থেকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার কথাও উল্লেখ করা হয় অনুমানে। এ ছাড়া, কোনো বিকল্প জ্বালানির যুক্ত হলে এই আনুমানিক হ্রাস আরও বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
ওই জাহাজে যুক্ত করা হয়েছে দুটি উইন্ডউইং। এদের উচ্চতা ১২৩ ফিট করে। এই দৃঢ় পালগুলোতে যে পদার্থ ব্যবহৃত হয়েছে, তা ‘উইন্ড টারবাইন’ তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। আর এগুলো কার্গো জাহাজের ডেকের সঙ্গে যোগ যায়। এর ফলে, তুলনামূলক পুরোনো জাহাজ থেকে ঘটিত পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। আর জাহাজটির প্রথম যাত্রাপথ হল চীন থেকে ব্রাজিল।
এই প্রকল্পে একজোট হয়ে কাজ করেছে যুক্তরাজ্যের পাল নির্মাতা কোম্পানি ‘বার টেকনোলজিস’, সিঙ্গাপুরের ‘কারগিল ওশান ট্রান্সপোর্টেশন’, জাপানের ‘মিতসুবিশি কর্পোরেশন’ ও নরওয়েভিত্তিক ‘ইয়ারা মেরিন’।
“সামুদ্রিক শিল্প থেকে ‘ডিকার্বনাইজ’ করা খুবই জটিল।” –বলেন কারগিলের প্রেসিডেন্ট জ্যান ডিলেম্যান।
“আর এতে ব্যবহার করার মতো তেমন প্রযুক্তিও নেই। তাই জাহাজ শিল্পের সুবিধাভোগী হিসাবে আমাদেরও সাধ্যমতো উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে করে এই শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি।”
২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনার লক্ষ্যে জুলাই মাসে একমত হয়েছিল জাহাজ শিল্প।
মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুসারে, এই ‘নন-বাইন্ডিং’ চুক্তি মূলত ফাঁপা বুলি। তবে, বিভিন্ন দেশের সরকারের নিজস্ব মাপদণ্ড তৈরির বেলায় এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিভিন্ন ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ও অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা উপকূলীয় দেশগুলো শেষ মূহুর্তে এই বিষয়ে চাপ না দিলে চুক্তিটি আরও শিথিল হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত, বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমিয়ে আনার পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা কমিয়ে আনার এই লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে।
এনগ্যাজেট বলছে, বায়ু শক্তির সহায়তায় ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোয় সহায়তা করতে পারে। তবে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করা চ্যালেঞ্জের বিষয়।
“গত এক বছরে আমরা এই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে দ্বিগুণ হতে দেখেছি।” –বিবিসিকে বলেন সামুদ্রিক পরিবহন সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষক কোম্পানি ‘ক্লার্কসনস রিসার্চ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিফেন গর্ডন।
“তবে, এটা খুবই ছোট পরিসরে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক জাহাজের বহর ও নতুন জাহাজের অর্ডার মিলে মোট জাহাজের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ১০ হাজার হবে। আর নতুন জাহাজ সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে আমরা বায়ু সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখেছি একশটিরও কম।”