পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ‘নাজুক’
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ‘নাজুক ও ভঙ্গুর অবস্থায়’ উপনীত হয়েছে বলে মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেছে আঞ্চলিক এই রাজনৈতিক দল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর অর্ধবার্ষিক (জানুয়ারি–জুন ২০২৩) প্রতিবেদনে জনসংহতি সমিতি আরও বলেছে, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার একনাগাড়ে সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না করে উল্টো চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থপরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। যে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি হয়ে উঠছে ‘অত্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর’।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জুন পর্যন্ত) পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি সই করা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১১৩টি ঘটনায় পাহাড়ের ১ হাজার ৩৯২ জনের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এসব ঘটনায় ৮০টি বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া পৃথক ঘটনায় হত্যার শিকার হয়েছেন দুজন।
নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছেন একজন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ছয়জন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত৵ চুক্তি সই হয়। গত বছর এই চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হয়। এই চুক্তির ফলে পাহাড়ে দুই দশকের সশস্ত্র লড়াইয়ের অবসান হয়। ৭২টি ধারাসংবলিত পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার ও জনসংহতি সমিতি ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে।
কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরকারী অপর পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মতে, ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছরের ৯ মার্চ কুয়াকাটায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সপ্তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পূর্ববর্তী সভাগুলোর মতো সপ্তম সভায় দেখা গেছে, চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নেই। সরকারের অসহযোগিতা ও গড়িমসির কারণে বর্তমানে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিও অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হতে বসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।