Bangladesh

পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টি : মধ্যমেয়াদি বন্যার কবলে দেশ

বন্যায় তীব্র কষ্টে বানভাসিরা : সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে ভারতের ঢল-বান : উত্তরাঞ্চলের চর-নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, উত্তর-পূর্বে অপরিবর্তিত : মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমে বিস্তৃত হচ্ছে বন্যা ও ভাঙন : পানিবন্দি লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে

অন্যতম প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা উভয় নদের পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের এই অববাহিকায় যুক্ত আরও শাখা নদী, উপনদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দ্রæত পানি বাড়ছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর। ভরা বর্ষাকালে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে টানা অতি বৃষ্টি এবং উজানে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে আসা ঢল-বানের কারণে বন্যা ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ ১০টি নদ-নদী ২০টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের চর, দ্বীপ-চর ও নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে দ্রæতই। নদ-নদী সংলগ্ন সমতলের দিকে বিস্তৃত হচ্ছে বন্যা ও ভয়াবহ নদীভাঙন। সামগ্রিকভাবে মধ্যমেয়াদি বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। ভারী বর্ষণ ও উজানে ভারতের ঢল আরও বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিশেষজ্ঞগণ। গতকাল পাউবো’র বুলেটিনে মধ্যমেয়াদি বন্যা প্রতিবেদনে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই বিস্তার লাভের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

অবশ্য ভরা বর্ষার আষাঢ়ের এ সময়ে মধ্যমেয়াদি বন্যা ‘স্বাভাবিক’ বলছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে উজানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও বন্যার চাপ হ্রাসে টইটম্বুর ব্যারাজ-বাঁধগুলো খুলে ‘অকাতরে’ ভারত পানি ছেড়ে দিয়েছে। ভারতে বিশেষত সিকিম, অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে ভাটেিত বাংলাদেশে বন্যার ধকল পড়েছে বেশি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তাদের জীবনধারণে প্রতিনিয়ত কষ্ট-দুর্ভোগ বাড়ছেই। ডুবে যাচ্ছে ফসলি জমি, বাগ-বাগিচা, শাক-সবজির ক্ষেত-খামার। গবাদি পশু-পাখির খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোণায়) সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ বিভিন্ন নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০টি নদ-নদী ২০টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ জেলাগুলোতে বন্যা পারিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় বন্যার অবনতি হচ্ছে। মধ্যাঞ্চলেও ক্রমেই পানি বৃদ্ধি পেয়ে টাঙ্গাইলের দিকে ধাবিত হচ্ছে বন্যার পানি। এমনকি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেও নদ-নদীগুলোর পানি দ্রæত বাড়ছে। তাছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগেই বন্যা কবলিত সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল অবধি বিপদসমীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো হচ্ছেÑ ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, ঘাঘট, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, পুরাতন-সুরমা, সোমেশ^রী।

অন্যতম বৃহত্তম অববাহিকায় অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টের সবক’টিতেই বিপদসীমার উপর দিয়ে গতকাল বিকাল পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৭৪ সে.মি. এবং চিলমারী পয়েন্টে ৬৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনা নদে পানি আরও বেড়ে গিয়ে দশটি পয়েন্টের মধ্যে ৭টিতেই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৪, বাহাদুরাবাদে ৭৭, সাঘাটায় ৭৩, সারিয়াকান্দিতে ৩২, কাজীপুর ৬, জগন্নাথগঞ্জে ৭১ এবং সিরাজগঞ্জে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের হার্ড পয়েন্টে ভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যমুনার পোড়াবাড়ি পয়েন্টেও পানি বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে। নি¤œাঞ্চলগুলো গ্রাস করছে বন্যার পানি। বিপাকে পড়েছে হাজারো বাসিন্দা ও কৃষক।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নদী ধরলা কুড়িগ্রামে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধায় ঘাঘট নদী বিপদসীমার ২৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কোথাও অপরিবর্তিত রয়েছে, কোথাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা নদী দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে এবং কুশিয়ারা ৪টি পয়েন্টে ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন-সুরমা দিরাইয়ে এবং সোমেশ^রী নদী কলমাকান্দায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদী মৌলভীবাজারে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গতকাল জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বৈশি^ক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলাসমূহের যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী সংলগ্ন নি¤œাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ সময়ে টাঙ্গাইল জেলার কতিপয় পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট নদীসমূহের পানি দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি কতিপয় পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ধরলা ও ঘাঘট নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনেশ^রী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার-করতোয়া, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, ইছামতী-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা এবং ছোট যমুনা নদীগুলোর পানি সময়বিশেষে দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পাউবো’র পর্যবেক্ষণাধীন দেশের ১১০টি নদ-নদীর পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৪টি পানি বৃদ্ধি পায়, ৪৩টিতে হ্রাস পায় এবং তিনটি স্থানে পানি অপরিবর্তিত ছিল। বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ও বিপদসীমায় রয়েছে ১০টি নদ-নদী ২০টি স্থানে। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচলের পাসি ঘাটে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২০ মিলিমিটার।

বন্যার মধ্যমেয়াদি পূর্বাভাস (৪ থেকে ১১ জুলাই) : চলমান বন্যা পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদি এক পূর্বাভাস (৪ থেকে ১১ জুলাই) প্রতিবেদনে গতকাল পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে এবং এর সংলগ্ন গঙ্গা-পদ্মা, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উজানের (ভারতে) বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারী, অনেক সময়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

এ অবস্থায় দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং অন্যান্য নদ-নদীসমূহের পানি কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নুনখাওয়া, হাতিয়া, চিলমারী, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সাঘাটা, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলাগুলোর নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৩ দিন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল জেলার কতিপয় পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

আগামী তিন দিন পর্যন্ত কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ সময়ে যমুনা নদের বাহাদুরাবাদ ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার যথাক্রমে দশমিক ৮০ মিটার এবং এক মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

এদিকে, বন্যার মধ্যমেয়াদি পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, সপ্তাহ শেষে নদ-নদীসমূহের পানি স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে। পরবর্তী সপ্তাহে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীসমূহের পানি সার্বিকভাবে হ্রাস পেতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীগুলোর পানি আগামী ৩ দিন দ্রæত বৃদ্ধি পেয়ে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পানি হ্রাস পেয়ে ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। আগামী ২ দিনে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনেশ^রী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার-করতোয়া, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, ইছামতি-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা, ছোট যমুনা নদীর পানি দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এ সময়ে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।

মেঘনা অববাহিকায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোণা জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তাহ শেষে এ অঞ্চলে পানি ফের সাময়িক বৃদ্ধি পেতে পারে এবং চলমান বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে ৭ জুলাই থেকে সার্বিকভাবে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া পরিস্থিতি : সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রায় সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ফরিদপুরে ৬৪ মিলিমিটার। এ সময়ে ঢাকায় ১৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, দেশের সবক’টি বিভাগের অধিকাংশ স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে তদুপুরী বন্যার শংকা কাটছে না। বিপদসীমার উপরে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ছয়টি পয়েন্টের পানি। চলমান বন্যায় সিলেটে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক। গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকলেও কমেনি নদ-নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৬টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৭০ সে.মি. এবং সিলেট পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ১৫৬ সে.মি, এ নদীর শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি ৪৭, ১০২ ও ১৮ সে. মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১৩ উপজেলায় ৯৬টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত। ১ হাজার ১৬০টি গ্রামের ৬ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৩ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। জেলার ৬৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ২৩৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সিলেটে বন্যা ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কমে আসলে সিলেটেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ৬৪ মি. মি।

অপরদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, গত কয়েকদিন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হয়নি। সিলেটের নদীগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় উজানের পানি ধীর গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান বন্যায় সিলেটের ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা মেরামতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে বন্যার পানি পুরোপুরি না নামলে কাজ করা যাবে না এসব বাঁধের ।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, উজানের ভারতীয় অংশ থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণের কারণে যমুনা নদীর পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সারিয়াকান্দির ইছামারায় ৫০০ মিটার, হাটশেরপুরে ৩০০ মিটার, কর্নীবাড়ীতে ১০০ মিটার, সোনাতলার সুজাতপুরে ১৫০ মিটার, সারিয়াকান্দীর শিমুলতাইরে ৬ মিটার এবং ধুনটের শহরাবাড়ীতে ৬ মিটার ঝুঁকির মুখে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, পানি বাড়ার কারণে সারিয়াকান্দির চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি, চালুয়াবাড়ির চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, দীর্ঘ ৪৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এখনও কোনো ঝুঁকি মুক্ত। ছয়টি পয়েন্টে নদী ভাঙলেও সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইছামারা অংশে। কারণ এই পয়েন্টে নদী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। গত বছর সেখানে এক হাজার ৭০০ মিটার ভেঙে ছিল। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, সারিয়াকান্দী, সোনাতলা, ধুনটের বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের দ্রæত উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, সতর্কতামুলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকারিভাবে ৫০০ মেট্রিকটন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।

স্টাফ রির্পোটার, শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল থেকে জানান, শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘরের পানি নামতে শুরু করেছে। বেশ কিছু বাড়ি ঘর থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমে গেছে। এখন ও নিম্নাঞ্চলের যে সব বাড়ি ঘরে পানি রয়ে গেছে সেসব পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা বেড়ে গেছে। খাদ্য, জ¦ালনী ও গবাদিপশু নিয়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গত বুধবার রাতে কোন বৃষ্টি না থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ নৌকা এবং কলাগাছের ভিড়া বানিয়ে চলাচল করছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রাসেল সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত নৌকায় নিম্নাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।

বুড়িচং (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিনের হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গোমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে থেকে হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বুড়িচং উপজেলার ঘুংগুর নদীর পানি বৃদ্ধিসহ জলাবদ্ধতায় আরো বেশি কৃষকের বীজ তলা ও শাকসব্জীর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বুধবার বুড়িচং উপজেলার গোমতি নদীর গোবিন্দপুর রামপুর ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়- গোমতি নদীর প্রবল স্রোতের সাথে কচুরী পানা সহ অন্যান্য ময়লা আবর্জনা নিয়ে ধেয়ে আসছে ভারতীয় পানি। স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪ হাত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে শুধু গোমতি চর এলাকায় বঙ্গবন্ধু খেলার মাঠ (প্রস্তাবিত) খেলার মাঠ নয় কৃষকদের সকল বীজ তলা আবাদকৃত সকল ধরণের শাকসব্জির ব্যাপক ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে বুড়িচং কালিকাপুর সড়ক, রামপুর সড়ক, রামপুর হয়ে শোভারামপুর সড়কে খানা খন্দক সৃষ্টির পাশাপাশির উপজেলার সদ্য মেরামতকৃত বুড়িচং পীরযাত্রাপুর ভায়া আরাগ আনন্দপুর সড়কের এক পাশের পাকা অংশ ও ধ্বসে পড়ছে। এছাড়া, বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের অবস্থা নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির ফলে গত ৪ দিন ধরে ঘরের ভিতর মাচা ও চৌকি উঁচু করে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি মানুষ। চৌকিতে রান্না-বান্না, চৌকিতেই রাত কাটছে তাদের। বাড়ির চারপাশে থৈথৈ পানিতে অসহায় দিন কাটছে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী মানুষের। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে ১৫০০ মানুষের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল হামিদ শেখ জানান, আমার ওয়ার্ডে ১৫০ ঘরে পানি উঠেছে। এছাড়াও এই ইউনিয়নে প্রায় ৮০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। ফকিরের চরে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮০টি পরিবার আশ্রয় নিলেও তারা বিশুদ্ধ পানি ও ল্যাটিন সমস্যায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, আমি বিষয়টি জানলাম। এখনেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে লোকজনকে পাঠাচ্ছি সমাধানের লক্ষে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী নৌবন্দর পয়েন্টে ৬৩ এবং ধরলার নদীর পানি কুড়িগ্রামের ব্রিজ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, বন্যা কবলিত কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, উলিপুর ও নাগেশ্বরীতে খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকায় এক হাজার ২০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল সহ অন্যান্য বিতরণ করা হয়।

ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের ইসলামপুরে গত কয়েক দিনে অবিরাম ভারী বর্ষণে জেলার ইসলামপুর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক দিনে ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পার্থশী ও পলবান্ধাসহ ৪০ টি গ্রামে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় হুমকিতে রয়েছে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের হাড়গিলা বাঁধসহ কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর, ফসলিজমি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হরগিলা বাঁধটি ভাঙন প্রতিরোধে পানির উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভাঙন প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নেন। এছাড়াও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, দশআনীসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান যমুনার পানি বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে সুন্দরতলী গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িঘর যমুনা গর্ভে বিলীন হয়েছে। সিঁদুরতলী সঃ প্রাথঃ বিদ্যালয় ও মাদরাসার যেকোনো সময় নদী গর্ভে চলে যেতে পারে।

স্টাফ রির্পোটার, শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল থেকে জানান, শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘরের পানি নামতে শুরু করেছে। বেশ কিছু বাড়ি ঘর থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমে গেছে। এখন ও নিম্নাঞ্চলের যে সব বাড়ি ঘরে পানি রয়ে গেছে সেসব পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা বেড়ে গেছে। খাদ্য, জ¦ালনী ও গবাদিপশু নিয়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গত বুধবার রাতে কোন বৃষ্টি না থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ নৌকা এবং কলাগাছের ভিড়া বানিয়ে চলাচল করছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রাসেল সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত নৌকায় নিম্নাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।

লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। বন্যার শঙ্কায় আছেন তিস্তা নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের চরবাসী। এদিকে গত ১৫ দিন থেকে তিস্তার পানি বাড়া কমার কারনে নদী অববাহিকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত ৩ দিনে জেলার ৪টি উপজেলায় ৩৩টি বসতবাড়ি তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী সুনীল রায়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৩ মিটার, যা বিপদসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দিকে এগিয়ে আসছে। বর্ষা শুরু হলেই বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এবারও সেই কাজটিই করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের সড়ক পথ। চরবাসীর যাতায়াতের মাধ্যম হয়েছে নৌকা। হাতীবান্ধার কিসামত নোহালী চরাঞ্চলের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে নদীতে পানি বেড়েছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে বড় বন্যা হতে পারে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, নদ-নদীর পানি খবর সার্বক্ষণিক নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

নেত্রকোনা : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, মদন ও সদর উপজেলায় শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলার আট ইউনিয়নের অন্তত ৬৮টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। নিম্নাঞ্চলের গ্রামের রাস্তা, পুকুর, ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। অতিরিক্ত ঢেউয়ে হুমকিতে রয়েছে নেত্রকোনা-কলমাকান্দা সড়কের একাংশ।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে পানি এখনো বিপদসীমার ৪ দশমিক ৭৯ মিটার নিচে আছে। ওই নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে পানি। কংস নদের পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধুন নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কলমাকান্দার পোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, আমার ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। আরেকটু পানি বাড়লে মানুষজনকে বাড়িঘর ছাড়তে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d