Hot

পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ সেনা হত্যায় হাসিনা

স্বজনহারা পরিবারের দাবি ‘তদন্ত কমিশন’। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রæতিও ছিল তদন্ত কমিশন গঠনের। কিন্তু হঠাৎ করেই পাল্টে গেল স্বর। বলা হচ্ছে ‘তদন্ত কমিশন’ নয়, পাঁচ দিনের মধ্যে গঠন করা হবে ‘তদন্ত কমিটি’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। ওই দিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পিলখানা হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণাই দেন। এ ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয়। গভীর সন্দেহের সৃষ্টি হয় এই ভেবে যে, ২০০৯ সালে বিডিআর পিলখানায় ৫৭ চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যার ঘটনায় মহল বিশেষকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই কমিশনের পরিবর্তে কমিটি গঠনের কথা বলা হচ্ছে কি-না। ইতিহাসের ট্রাজিক এ ঘটনার ১৫ বছরে ভারতের নাচের পুতুল হাসিনা সরকার বহু আলামত বিনষ্ট করে। অনেক প্রত্যক্ষদর্শীকে পদ্ধতিগতভাবে হত্যা করা হয়। পিলখানার সেনা হত্যাকান্ডকে নিছক ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে বিচারের নামে করা হয় ‘আইওয়াশ’। হাজার হাজার নিরপরাধ জওয়ানকে এখনো আটক রাখা হয়েছে বিচারের নামে। ঘটনার পরপর ‘বিদ্রোহ’ এবং ‘বিস্ফোক দ্রব্য’ আইনে পৃথক দুটি মামলা দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি মামলা হাইকোর্টে ‘আপিল’ শুনানির অপেক্ষায়। আরেকটি এখনো ‘বিচারাধীন’ করে ফেলে রাখা হয়েছে।

এভাবে হাসিনার পুরো শাসনামলজুড়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে প্রকৃত ঘটনা। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে এভাবে নেতৃত্বশূন্য করে দেয়ার ঘটনায় বেশ ক’জন সেনা কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ঘটনার জন্য হাসিনা এবং তার কয়েকজন দোসরকে দায়ী করেছিলেন। পরে সেসব সেনা কর্মকর্তাকে পরবর্তীতে ‘চরমপন্থি জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে দমন করা হয়। কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমানের মতো সেনা কর্মকর্তাকে নির্যাতন করা হয় আয়নাঘরে রেখে। তা সত্তে¡ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম, বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে সেনা হত্যাকান্ড যে পূর্বপরিকল্পিত এবং এর নেপথ্য মাস্টারমাইন্ড যে ভারত- এ তথ্য বেরিয়ে আসে।

সেনা হত্যায় ভারত কিভাবে, কোন পর্যায়ে, কতটা সম্পৃক্ত এটি উদঘাটনে প্রয়োজন ব্যাপক এখতিয়ার সম্পন্ন একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন। দেশ ও জাতির প্রত্যাশা ছিল ভারত-সমর্থিত হাসিনা সরকার উৎখাত হলে এমন একটি কমিশন গঠিত হবে। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারের একাধিক উপদেষ্টা এই মর্মে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রæতিও ব্যক্ত করেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা। বলা হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা। এর ফলে মানুুষ ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এমন প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রæয়ারি পিলখানা সেনা হত্যার ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জমা দেন অভিযোগটি। জমাকৃত অভিযোগ সম্পর্কে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রæয়ারি ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পেয়েছি। এর সঙ্গে তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সঙ্কটের মুখে ফেলার জন্য এবং তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংস করতে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজ আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি। আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছি এর মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান রয়েছেন। আমাদের অভিযোগ খুবই সুস্পষ্ট। দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সঙ্কটের মুখে ফেলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ ও অফিসারদেরকে খুন করা হয়েছে। তাদের লাশে আগুন দেয়া হয়েছে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। এসব কিছুই মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তাই কমিশন গঠনের মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

অভিযোগকারীরা বলেন, হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ধ্বংসের নীল নকশা প্রণয়ন করে।

সেই লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রথম শিকারে পরিণত হয় বাংলাদেশ রাইফেলসে তৎকালীন কর্মরত পেশাদার, সৎ-দক্ষ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর অফিসারদের একটি অংশ। শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের নিজের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে প্রথম ও প্রধানতম অন্তরায়-বিপত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের পরিবারের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

হাসিনা তার পরিকল্পনাধীন স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সহজ ও চিরস্থায়ী করতে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি সকাল ৯টা থেকে পরদিন ২৬ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত পিলখানা সদর দফতরে তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত, নিরস্ত্র সেনাবাহিনীর অফিসার এবং তাদের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে পদ্ধতিগত উপায়ে নারকীয় হত্যাকাÐ চালায়। ভিক্টিম সেনাবাহিনীর অফিসারদের এবং তাদের পরিবার-পরিজনকে আটকাবস্থায় জিম্মি করে, কিছু মৃত সেনাবাহিনীর অফিসারদের লাশ পুড়িয়ে দেয়। লুটপাট চালিয়ে এবং শারীরিক-মানসিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে। সেই সময়কার নৃশংস ওই ঘটনায় ৫৭ সেনা অফিসারসহ সর্বমোট ৭৪ জন শহীদ হন।

অভিযোগকারীরা বলেন, শেখ হাসিনা এ গণহত্যাকে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীসহ সব দেশপ্রেমিক জনগণকে কড়া বার্তা দেয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। এই মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার মাধ্যমে সমগ্র সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতাদর্শ বাস্তবায়ন, লুটপাট, রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাÐের কোনো প্রতিবাদ করার সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে।

শেখ হাসিনা এবং তার দোসর কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার সব শহীদ, আহত-অঙ্গহানি হওয়া ও গুমকৃত ব্যক্তিদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
অভিযোগ দায়েরকালে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শহীদ শাকিল আহমেদের পুত্র ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ, শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী ফেরদৌসী, কর্নেল কুদরত এলাহীর পুত্র সাকিব রহমানসহ অন্তত ২০ শহীদ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

কমিশন গঠনের দাবি শহীদ পরিবারের : আগে থেকেই বিডিআর পিলখানা হত্যাকাÐের নেপথ্য কুশীলবদের খুঁজে বের করতে ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনসহ সাত দফা দাবি জানিয়ে আসছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসব দাবিতে গত ১৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করেন বিডিআরের সাবেক ডিজি শহীদ শাকিল আহমেদের পুত্র ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ। তিনি হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তদন্ত কমিশন করে পর্দার আড়ালে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের বের করে আনার দাবি জানান সেদিন। দাবির মধ্যে রয়েছে, ইতোপূর্বে সম্পাদিত তদন্ত প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা, হাইকোর্টের অনুযায়ী ইনকোয়ারি (তদন্ত) কমিশন করা, অফিশিয়াল গ্যাজেট (প্রজ্ঞাপন) করে ২৫ ফেব্রæয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা, নিহতদের শহীদের মর্যাদা প্রদান, ২৫ ফেব্রæয়ারি জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, পিলখানা ট্র্যাজেডিকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা, এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি ফেরত অথবা ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নির্দোষ কোনো বিডিআর জওয়ানকে শাস্তি না দেয়া। সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা সেনা হত্যাকাÐের সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়। অন্যান্যের মধ্যে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ, সাবেক আওয়ামী এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং সাংবাদিক মুন্নী সাহা।

গতকাল ট্রাইব্যুনালে হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট শেখ হাসিনাসহ ৫৮ জনের নামের তালিকা দেয়া হয়। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে সবার নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ইউনিট।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor