International

পুতিন ও ট্রাম্প সাত দিনে যেভাবে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিলেন

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জন রিড যখন ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে বসেন, তখন তিনি এর শিরোনাম দেন ‘দুনিয়া কাঁপানো ১০ দিন’। তাঁর এই বই জগদ্বিখ্যাত হয়ে আছে।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ১০ দিন ছিল অনেক বেশি। তাঁরা এক সপ্তাহেই সবকিছু কাঁপিয়ে দিলেন।

এর শুরুটা হয়েছিল ১২ ফেব্রুয়ারি পুতিন ও ট্রাম্পের এক ফোনালাপের মাধ্যমে। তাঁদের উভয়েরই বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল পুনরায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক সচল করা।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের মাধ্যমে এটা আরও এগিয়ে যায়। একই সঙ্গে [এই সম্মেলনে] ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।

সৌদি আরবে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা ছিল [ট্রাম্প-পুতিনের দৌড়ের] পরবর্তী গন্তব্য। তিন বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রথম সরাসরি বৈঠক।

এটি এমন একটি সপ্তাহ, যা [যুক্তরাষ্ট্রের] প্রথাগত মিত্রদের বড় ঝাঁকুনি দিয়েছে। [ট্রাম্পের উদ্যোগের] জবাব তৈরি করতে ইউরোপ ও ইউক্রেনের নাভিশ্বাস উঠেছে। ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়াকে তার প্রত্যাশিত অবস্থানে নিয়ে গেছে; বৈশ্বিক রাজনীতির চূড়ায়। কোনো ছাড় না দিয়েই নিজেকে এই অবস্থানে নিতে চেয়েছিল মস্কো।

সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এই প্রথম দুই দেশের নেতারা বৈঠকে বসলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এই প্রথম দুই দেশের নেতারা বৈঠকে বসলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বুধবার সকালে রাশিয়ার সংবাদপত্রগুলোতে একটি ছবিই প্রাধান্য পেয়েছে। তা হলো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রিয়াদে আলোচনার টেবিলে।

ক্রেমলিন রাশিয়ার জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে চায় যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়াকে একঘরে করার পশ্চিমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর উষ্ণ সম্পর্কের সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভের ওপর ঘৃণা উগরে দিয়েছেন।

ক্রেমলিনপন্থী ট্যাবলয়েড মস্কোভস্কি কমসোমোলেৎস লিখেছে, ‘ট্রাম্প জানেন, তাঁর [রাশিয়াকে] ছাড় দিতে হবে। কারণ, তিনি এমন একটি পক্ষের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন, যারা ইউক্রেনে জিততে চলেছে।’

‘তিনি ছাড় দেবেন। তবে সেই ছাড় আমেরিকার ক্ষতি করে নয়, তা হবে ইউরোপ ও ইউক্রেনের মূল্য চুকানোর মধ্য দিয়ে।’

‘দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপ একধরনের দম্ভের মধ্যে ছিল। তাঁরা নিজেদের সভ্য জগৎ ও স্বর্গের উদ্যান মনে করতেন। কিন্তু তার পরনে যে পিরান (ট্রাউজার) নেই, সেটা তাঁরা খেয়াল করতেও ভুলে গিয়েছিলেন।…এখন আটলান্টিকের ওপারে তার পুরোনো সহযোদ্ধা তাকে সেটা দেখিয়ে দিল…।’

তবে মস্কোর রাস্তাঘাটে আমি সেই ধরনের [পত্রিকার মতো] উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখিনি।
বরং মানুষ (টেলিভিশন) দেখছিলেন এবং ট্রাম্প আসলেই রাশিয়ার নতুন সেরা বন্ধুতে পরিণত হবেন কি না এবং ইউক্রেন যুদ্ধ তিনি আদৌ শেষ করতে পারবেন কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে

মস্কোর বাসিন্দা নাদেজহদা আমাকে বললেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী মানুষ। তিনি অর্থ বানাতেই আগ্রহী। আমার মনে হয় না তিনি কোনো তফাত গড়তে পারবেন। পরিস্থিতি বদলাতে হলে অনেক কিছু করা দরকার হবে।’

গিওরগি নামের একজন বলেন, ‘সম্ভবত সেসব আলোচনা [সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত] সহায়তা করবে। আমাদের শত্রু হওয়া বন্ধ করার জন্য এটাই সেরা সময়।’
ইরিনা নামের একজন বলেন, ‘ট্রাম্প কাজের মানুষ। তিনি উদ্যমী। কিন্তু তিনি কি যেকোনো কিছুই করবেন?’

ইরিনা বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখি, এসব আলোচনা শান্তি আনবে। এটা [সৌদিতে আলোচনা] প্রথম পদক্ষেপ। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হতে পারে। এখানে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। এর পেছনে বিশেষ সামরিক অভিযান [ইউক্রেন যুদ্ধ] কিছুটা দায়ী এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিরও দায় রয়েছে।’  

পুতিন ও ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেছেন। তাঁদের দুটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে বৈঠক করেছে। শিগগির প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্টিভ রোজেনবার্গ ২০০৩ সাল থেকে বিবিসির মস্কো সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন শেষে ২০২২ সালে তিনি বিবিসির রাশিয়াবিষয়ক সম্পাদক হন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto