পুরো ইউক্রেন দখল করার ঘোষণা দিলেন পুতিন

রাশিয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছেন, তিনি পুরো ইউক্রেনকে রাশিয়ার অংশ করতে চান। ২০ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গ অর্থনৈতিক ফোরামে তিনি বলেন, ‘সমগ্র ইউক্রেন আমাদের।’ ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বক্তব্যকে ‘মৃত্যু ও ধ্বংসের বার্তা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
পুতিনের মন্তব্যের মধ্যেই ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা সামরিক সহায়তা বাড়াচ্ছে। ন্যাটো মহাসচিব জানিয়েছেন, ইউরোপ ও কানাডা ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে ৩৫-৪০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বিলম্বের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখছে।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের সাথে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, এই সিস্টেমের সরবরাহ কঠিন। কারণ ইসরাইলও সেগুলো পাচ্ছে।
এদিকে, রাশিয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
জেলেনস্কি পুতিনকে ‘সম্পূর্ণ খোলামেলা’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, তিনি শুধু ইউক্রেন নয়, বেলারুশ, বাল্টিক রাষ্ট্র, মলদোভা, ককেশাস ও কাজাখস্তান নিয়েও আগ্রহী।
জার্মান সেনাবাহিনী রাশিয়াকে ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জার্মানি ও ন্যাটো মিত্ররা ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পুতিন ন্যাটো সম্মেলনের সময়ও প্রতিদিন ২০০টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ইউক্রেন দাবি করেছে। ইউক্রেন এখন ৬.৯৫ লাখ রুশ সেনার বিরুদ্ধে লড়ছে। সুমিতে নতুন ফ্রন্ট গড়ে তোলার চেষ্টাও চলছে।
ইউক্রেনের শহরে রাশিয়ার ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
রাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের মনোবল ভাঙতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। ১৯ জুন কিয়েভে রুশ হামলায় ৩০ জন নিহত ও ১৭২ জন আহত হন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, একটি ক্ষেপণাস্ত্র আবাসিক ভবনের সব তলা ভেদ করে বেসমেন্টে পৌঁছে যায় এবং একটি মাত্র হামলায় ২৩ জন নিহত হয়।
ওই রাতেই রাশিয়া ওডেসা ও খারকিভে ২০টিরও বেশি ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করে। ওডেসায় চারতলা ভবনে আগুন ধরে গেলে তা আংশিকভাবে ধসে পড়ে, আহত হন তিনজন উদ্ধারকর্মী। কিয়েভে সোমবারের ড্রোন হামলায় সাতজন নিহত হয়। ডিনিপ্রোপেট্রোভস্কে আরো ২০ জন নিহত ও প্রায় ৩০০ জন আহত হন।
ইউক্রেনের পাল্টা জবাব ও ড্রোন উৎপাদন
ইউক্রেন রুশ অস্ত্র কারখানায় পাল্টা ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। ১৮ ও ২০ জুন শিপুনভ কারখানায় হামলায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ইউক্রেন ড্রোন নকশা ও উৎপাদন বাড়াচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে ইউক্রেনকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। জেলেনস্কি ‘বিল্ড উইথ ইউক্রেন’ প্রকল্পে মিত্রদের অর্থায়নের আহ্বান জানান এবং বলেন ইউক্রেন ৫০০ কিমি পাল্লার ‘সাপসান’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে।
ন্যাটো-ইইউ সদস্যপদে জটিলতা
ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা হলেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এটি আলোচনার বাস্তবসম্মত ফল নয়। যদিও ন্যাটো নেতারা বলেন, ইউক্রেনের সদস্যপদের পথ অপরিবর্তনীয়। তবে ইইউ সদস্যপদের আলোচনায় স্লোভাকিয়ার ভেটোর কারণে নতুন অগ্রগতি হয়নি। একইসাথে তারা রাশিয়ার গ্যাস-তেল নিষেধাজ্ঞাও আটকে দিয়েছে।
জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী ফিকো রাশিয়া থেকে জ্বালানির আমদানি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন।