Bangladesh

পুরো বিশ্ব অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় : ইইউ

রাজনৈতিক মতবিরোধে হস্তক্ষেপ করব না, নির্ধারিত সময়ে ভোট : সিইসি

অবাধ সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য-গ্রহণযোগ্য এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় পুরো বিশ্ব বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার টিম খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনেছি। আমরা আশাকরি, গণতান্ত্রিক গ্রহণযোগ্য ও অংগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। পুরো বিশ্বও এটি দেখতে চায়। এ সময় তিনি কোনো প্রশ্ন নিতে চান না বলেও মন্তব্য করেন। তবে, সাংবাদিকরা ভোটের পরিবেশ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে হোয়াইটলি বলেন, না। ধন্যবাদ। চার্লস হোয়াইটলি বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমরা আলাপ করছি। তবে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয় বরং সারা বিশ্বই সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে অনেক বিষয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে আগ্রহী। যে কারণে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ ও জিজ্ঞাসা ছিল। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সারা বিশ্বই হয়ত সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।বিকেল ৩টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে হোয়াইটলির সঙ্গে সাত দেশের রাষ্ট্রদূত, সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক বিভেদ-বিভাজনে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেননি সিইসি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলিসহ সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। এটাকে আমরা বলি ইইউ ডেলিগেশন। তারা আগেও একাধিকবার এসেছেন। তাদের একটা এক্সপার্ট ইলেকশন পর্যবেক্ষণ টিম আসবে বলে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই চারজন এসেছেন। তারা দীর্ঘ সময় আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনেছেন। আমাদের প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এটা তারা জানতেন না। তারা আজও এসেছেন। আমাদের কী কী অগ্রগতি হয়েছে, সেগুলো আমরা তাদের জানিয়েছি। নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার, পিসফুল ও ক্রেডিবল যাতে হয় সেটি নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি- স্পষ্ট করে তাদের জানানো হয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের কমিশনাররা বিগত দুই সপ্তাহ ধরে বাইরে বাইরে ঘুরেছেন। তারা জনগণ ও প্রশাসনকে বিষয়গুলো জানিয়েছেন যাতে প্রশাসন স্থানীয়ভাবে তাদের সব শক্তিকে সমন্বিত করে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করে। তারা (ইইউ ডেলিগেশন) আমাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট। সিইসি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। এটা আমরা খুব স্পষ্ট করে তাদের বুঝিয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের যে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা এটা তারা বুঝতে পেরেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি কোনো মতবিরোধ থাকে, বিভেদ-বিভাজন থাকে সেখানে কোনোভাবেই আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না।

এদিন বৈঠকে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে সংস্থাটির ডেপুটি হেড অব মিশন ব্রেন্ড স্পাইনার, পলিটিক্যাল অফিসার সেবাস্তিয়ান রিগার ব্রাউন, সুইডেনের অ্যাম্বাসেডর আলেকজান্ডার বার্গ ফন লিন্দ্রে, ডেনমার্কের অ্যাম্বাসেডর ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার, স্পেনের অ্যাম্বাসেডর ফ্রান্সিসকো ডি আসিস বেনিতেজ সালাস, ইতালির অ্যাম্বাসেডর আন্তোনিও অ্যালেসান্দ্রো, নেদারল্যান্ডসের অ্যাম্বাসেডর ইরমা ফেন ডুয়েরেন, ফ্রান্সের ডেপুটি হেড অব মিশন গুইলাম অড্রেম ডে কারড্রেল ও জার্মান অ্যাম্বাসির এক প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেয়। গত বুধবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান তারা তারা। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক টিম পাঠাবে, এতে দুইজন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট থাকবেন। যার মধ্যে চারজন ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এসে গেছেন।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। গত ২ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটারসংখ্যা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button