Bangladesh

পুলিশের অক্টোবর নভেম্বর উদ্বেগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের মহাসমাবেশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচি ঘিরে এ উত্তাপ আরও ছড়িয়ে পড়েছে। নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঘিরে বিরোধীদের রাজনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশল ঠিক করে রাখছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রস্তুতির পাশাপাশি এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে মহড়াও হয়েছে।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, তারা নিশ্চিত হয়েছে যে, মহাসমাবেশ ঘিরে দেশের পরিস্থিতি জটিল করে তুলবে সরকারবিরোধী একটি প্রভাবশালী মহল। আর ওই মহলটিকে দুয়েকটি দেশ উসকে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। রাজনৈতিক এ উত্তেজনা নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে তারা।

সরকারের শীর্ষ মহলও বলছে, আন্দোলনের নামে আবারও জ¦ালাও-পোড়াও চালানোর পাঁয়তারা চলছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে সংঘর্ষের কথা মনে করে দিচ্ছে কেউ কেউ। সমাবেশের নামে তারা রাস্তায় বসে পড়ে ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও নিয়ন্ত্রণের কৌশল নির্ধারণে পুলিশের শীর্ষ কর্তারা নিয়মিত বৈঠক করছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে শুধু অসুস্থতা ছাড়া পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে (এপিবিএন) সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কয়েকটি জেলা থেকে বাড়তি পুলিশ সদস্য আনা হচ্ছে ঢাকায়। পাশাপাশি রিজার্ভ পুলিশ ও র‌্যাবকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আনসারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাছাড়া অভিযান আরও বেগবান করা হচ্ছে। আজকালের মধ্যে ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় বিশেষ অভিযান, যানবাহন, বাসাবাড়ি, হোটেল ও মেসগুলোতে নজরদারির পাশাপাশি তল্লাশি চালানোর কথা রয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশের সবকটি ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বরের প্রস্তুতির বিষয়ে এ বৈঠকে আলোচনা হবে জানা গেছে।

বিএনপি অভিযোগ করেছে, দলটির নেতাকর্মীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। কোনো ঘটনা না ঘটলেও নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অভিযানের সময় স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ রাস্তায় না করার অনুরোধ জানাবে পুলিশ। সোহরাওয়ার্দী, ধূপখোলা মাঠ ও পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে

সমাবেশ করতে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে দেবে না বলে পুলিশ পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে জামায়াতকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশের দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের মূল কারণ, ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার পর অবস্থান বা অবরোধের চেষ্টা করলেই গন্ডগোল বেধে যাবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে তারা মাঠে থাকবে, তাই দুপক্ষের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তারা তথ্য পেয়েছেন যে, বিএনপি একটি প্রভাবশালী দেশের ইন্ধনে মহাসমাবেশের পর সারা দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চায়। পাশাপাশি হরতাল বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলনে যাবে। বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা চালাবে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

পুলিশ বিএনপিকে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেবে এ কথা জানিয়ে তারা বলেন, কোনো কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাস্তায় সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় থাকলে শেষ মুহূর্তে একাধিক শর্ত দিয়ে অনুমতি দেওয়া হবে। তবে তা নির্ভর করছে সরকারের হাইকমান্ডের ওপর। অনুমতি দেওয়া হলেও সমাবেশ নির্দিষ্ট সময় ও সীমানার মধ্যে থেকে করার বিষয়ে শর্ত থাকবে।

এসব শর্ত দিলেও পুলিশের মধ্যে উৎকণ্ঠা আছে জানিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তাদের উদ্বেগের কারণ বিএনপির টার্গেটই হলো পরিস্থিতি ঘোলাটে করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েক দফা নির্ধারিত বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া র‌্যাব মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, ইউনিট প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সর্বশেষ রবিবার দিনব্যাপী পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি শোডাউন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা, রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের বিষয়টিও সামনে এসেছে। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ছুটি বাতিল, আশপাশের জেলা থেকে বাড়তি পুলিশ আনার বিষয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকার ৫০টি থানার ওসি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও আলাদাভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারা নজরদারি শুরু করেছে। পুলিশের সাইবার ইউনিটও তৎপরতা শুরু করেছে। কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য কয়েক ধাপে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্তসংখ্যক রায়ট কার, অ্যান্টিপারসোনেল কার (এপিসি), জলকামান, আর্মাড ক্যারিয়ার ভ্যান, পর্যাপ্ত রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসসহ দাঙ্গা দমনের যাবতীয় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেজন্য আমরা কাজ করছি। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে তাদেরই আমরা আটক করছি। সমাবেশের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ও নভেম্বর মাস নিয়ে আমাদের মধ্যেও কিছুটা উদ্বেগ আছে। আমরা সতর্ক, যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সমাবেশের কথা বলে কোনো রাজনৈতিক দল যদি রাস্তায় বসে যাওয়ার পরিকল্পনা করে, তাহলে তাদের হটিয়ে দিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। আশা করি তারা কেউ ভুলপথে পা বাড়াবে না।’

তিনি আরও বলেন, সচিবালয়সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাড়তি নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের। যাদের নামে মামলা আছে বা রাজনৈতিক দলের যেসব নেতাকর্মীর নামে ওয়ারেন্ট আছে, তাদের ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতি ও রবিবার মাঠপর্যায়ের কিছু পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পিপারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের মহড়া দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা হলে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তার কৌশলও বলে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে যেন হয় সেদিকেই আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমরা কাউকে কোনো ধরনের সুযোগ দেব না। আইনের মধ্যে যা আছে তাই করা হবে। তবে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। এ বিষয়ে কেউ ছাড় পাবে না।’

জেলার কয়েকজন পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। হোটেল মালিকদের বলা হয়েছে অপরিচিত কেউ যেন হোটেলে থাকতে না পারে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। থানার পুলিশ সদস্যদের সতর্কভাবে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করার আদেশ দেয় হাইকোর্ট। দলটির নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। বিগত নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলটি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে। কিন্তু বর্তমানে টানাপড়েনের কারণে দলটি এককভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে জেলায় জেলায় গোপন কমিটিও করে ফেলেছে তারা। পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট সারা দেশে জামায়াতের কর্মকান্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীরা অংশ নিতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d