Hot

‘পুলিশ লীগ’র দাপটে পোশাক বদল

‘অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই, পুলিশকে চটিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারব না’ -সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী * সরকারের চার কোটি টাকা গচ্চা

‘এই পোশাক কে বানাতে বলেছে। অনুমতি দিয়েছে কে? আইজিপি স্যার কিন্তু খুব মাইন্ড করেছেন। অবিলম্বে পোশাক খোলেন। তা না হলে সবার খবর আছে।’ নারকোটিক্সের (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) জন্য সরকার নির্ধারিত ইউনিফরম বদল করতে এভাবেই হুমকি দেন অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ। তবে তিনি একা নন; নেপথ্যে ছিলেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ তথাকথিত ‘পুলিশ লীগ’র একাধিক কর্মকর্তা। যারা বিদায়ি ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর হিসাবে সবার কাছে পরিচিত।

শুধু তাই নয়, যে কাপড়ের পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে, সেটিও ছিল নিম্নমানের। অর্থাৎ কাপড়ের নির্ধারিত মানদণ্ড নিশ্চিত করা হয়নি-যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরি টেস্টে প্রমাণিত। আর পুলিশকে খুশি করতে অহেতুক এই পোশাক পরিবর্তন করায় সরকারের ক্ষতি হয় চার কোটি টাকার বেশি। এক্ষেত্রে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’-এই নীতি অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ পুলিশকে খুশি করতে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পোশাক পরিবর্তন হলো, আবার এই পোশাক সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ-সদস্যকে (এমপি)। যিনি বেনামে এই কাজ পেয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এবং যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উল্লিখিত সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। আরও জানা গেছে, তৎকালীন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপে নারকোটিক্সের পোশাক পরিবর্তন করায় পরস্পর ঠাণ্ডা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে সরকারি সংস্থা দুটি। এর সবকিছুই প্রকাশ্যে ঘটে। কিন্তু সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা নীরব থাকার কৌশল বেছে নেন। ‘এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই-পুলিশকে চটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না।’

সূত্র জানায়, ২০২১ সালে নারকোটিক্সের জন্য কোরিয়ান পুলিশের আদলে একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিফরম চূড়ান্ত করা হয়। এতে টার্কিশ ব্লু শার্ট, ডিপ নেভি ব্লু প্যান্টের সঙ্গে মিলিয়ে কালো ব্যারেট ক্যাপ এবং লোগোযুক্ত ব্যাজ নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন পোশাকে মাঠে নামে নারকোটিক্স। কিন্তু তৎকালীন এসবি (পুলিশের বিশেষ শাখা) প্রধান মনিরুল ইসলামসহ কিছু আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তা নারকোটিক্সের পোশাক দেখে রীতিমতো তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। পুলিশের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে-এমন অভিযোগ তুলে অবিলম্বে পোশাকের রং বদলের জন্য চাপ দেন তারা।

ভিত্তিহীন দাবি : উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব (পরে সচিব) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি যাছাই বাছাই শেষে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় পুলিশ এবং নারকোটিক্সের পোশাকের রং সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই পুলিশের আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এতেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষান্ত হননি। বরং তাদের কেউ কেউ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এ পর্যায়ে মনিরুল ইসলামের নির্দেশে বর্তমান অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ নারকোটিক্সের পোশাক বদলের মিশনে নামেন।

সূত্র জানায়, পুলিশ ক্যাডারের ২২ ব্যাচের কর্মকর্তা তানভীর মমতাজ ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট প্রেষণে নারকোটিক্সে যোগ দেন। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হওয়ায় আওয়ামী লীগ আমলে তিনি ব্যাপক প্রভাবশালী র্ছিলেন। ফলে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েই তিনি রীতিমতো ক্ষমতার ছরি ঘোরাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে নারকোটিক্সের ইউনিফরমের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। ঘোষণা দেন আইজিপি এবং মনির স্যারের কড়া নির্দেশ-এই পোশাক নারকোটিক্সের কেউ পারতে পারবে না।

প্রকাশ্যে অপমান : অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভের মধ্যে ২৬ মার্চ সকালে খোদ নারকোটিক্সের প্রধান কার্যালয়ে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এদিন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক আবুল হোসেন, রবিউল ইসলাম ও মাসুদ হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে অপদস্থ করা হয়। সেরিমোনিয়াল পোশাকে (এক ধরনের স্যুট) অফিসে আসায় তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন তানভীর মমতাজ। একপর্যায়ে সবাইকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তারা ইউনিফরম ছেড়ে সিভিল পোশাকে এলে অফিসে ঢুকতে সক্ষম হন।

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক মাসুদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পোশাক দেখার পরপরই পরিচালক অপারেশন তানভীর মমতাজ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি সবাইকে ডিজি মোস্তাইন বিল্লাহ ফারুকীর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে গেলে আমাদের ইউনিফরম খুলে সিভিল পোশাক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত ফারুকী নিজেও পুলিশের বিপক্ষে যেতে সাহস করেননি।

সেদিনের কথা মনে করে ভুক্তভোগী উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম আবেগঘন কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, সেদিন আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এ কারণে ওই স্মৃতি আমরা ভুলে যেতে চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এখন গুনে গুনে দিন পার করছি। চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলেই আমি স্বেচ্ছাঅবসরের আবেদন করব।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একই এলাকার (গোপালগঞ্জ) বাসিন্দা হওয়ায় পুলিশের সাবেক প্রতাপশালী আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং এসবি তৎকালীন প্রধান মনিরুল ইসলামের সঙ্গে তানভীরের ব্যাপক ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাদের নাম ভাঙিয়ে ডিজিসহ নারকোটিক্সের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের রীতিমতো হুমকি দেন তিনি। বলেন, বেনজীর স্যার এবং মনির স্যারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে আপনাদের চাকরির ক্ষতি হবে। পদোন্নতি পাবেন না। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একেবারে চুপসে যান।

ক্ষতি : একপর্যায়ে পুলিশের একতরফা আপত্তির মুখে নারকোটিক্সের পোশাকের রং বদলে দেওয়া হয়। বাতিল করা হয় কয়েক হাজার তৈরি পোশাক। এতে সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা যায়। সারা দেশে বিতরণের জন্য তৈরি চার কোটি টাকার বেশি পোশাক ফেলে দিতে হয়। তবে আর্থিক ক্ষতির চেয়েও নারকোটিক্সের জনবলের মানসিক ক্ষতি হয় বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এ সময় পোশাক ছাড়াই নারকোটিক্স সদস্যরা মাঠে উিউটি করতে বাধ্য হন। এছাড়া সিভিল পোশাকে সাক্ষী দিতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে বিচারকের ভর্ৎসনার শিকার হন। এমনকি দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় মাদকবিরোধী অভিযান সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এতে অনেকের মনোবল ভেঙে যায়। কেউ কেউ হতোদ্যম হয়ে পড়েন।

এক ঢিলে দুই পাখি : কোনো ধরনের ভেটিং ছাড়াই নারকোটিক্সের জন্য নতুন করে আইভরি রংয়ের শার্ট এবং কালো প্যান্ট চূড়ান্ত করা হয়। ২৮ মে নতুন রং নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর তড়িঘড়ি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে কাজ পায় পলওয়েল মার্কেটভিত্তিক পুলিশের পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জারা টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্স। এছাড়া নেপথ্যে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন সিম গ্রুপ নামের এক টেক্সটাইল কোম্পানি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জারা টেইলার্সকে সিম গ্রুপ থেকে কাপড় নিতে বাধ্য করা হয়। কারণ তানভীর মমতাজের সঙ্গে সিম গ্রুপের মালিক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেনের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। এ ছাড়া তানভীর তেজগাঁওয়ের টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেন। একসময় চাকরি করতেন বেক্সিমকো টেক্সটাইলে। পরে পুলিশের চাকরিতে এসেও তিনি ইউনিফরম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে তাকে বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়তে হয়।

সূত্র বলছে, জারা টেইলার্স সিম গ্রুপের কাপড়ে তৈরি ইউনিফরম সরবরাহ শুরু করে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই কাপড়ের মান নিয়ে সারা দেশ থেকে অভিযোগ আসতে থাকে। বিশেষ করে রঙ চটে যাওয়ার ভূরি ভূরি অভিযোগ আসে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে দীর্ঘ সময় পোশাক পরে থাকতে অস্বস্তির কথা জানান। এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে অনেকে ইউনিফরম ছাড়াই সিভিলে ডিউটি শুরু করেন।

নিম্নমান : সম্প্রতি নারকোটিক্সের চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মরত এক উপ-পরিচালক তার নামে ইস্যুকৃত এক সেট ইউনিফরম নিয়ে ঢাকায় যুগান্তর অফিসে হাজির হন। কাপড় দেখিয়ে তিনি বলেন, সাদা চোখেই দেখা যায় এগুলো নিম্নমানের। তিনি এ-সংক্রান্ত দরপত্রের একটি ফটোকপি দিয়ে বলেন, এখানে সুনির্দিস্ট শর্ত আছে পোশাকের জন্য উন্নতমানের কাপড় দিতে হবে। কিন্তু এখন নিম্নমানের কাপড়ে তৈরি ইউনিফরম পরে মাঠে ডিউটি করা যাচ্ছে না।

এ পর্যায়ে কাপড়ের বাস্তব মান যাচাইয়ে সরবরাহকৃত ইউনিফরম পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় যুগান্তরের অনুসন্ধান সেল। এজন্য রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের মান যাচাইয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান টিইউভি রেইনল্যান্ডের ল্যাবরেটরিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ইউনিফরম জমা দেওয়া হয়। নির্ধারিত ফি দিয়ে কাপড়ের পাঁচটি উপাদান পরীক্ষা করতে বলা হয়। ২৬ জানুয়ারি নমুনা গ্রহণ করে নির্ধরিত পরীক্ষার পর ৩০ জানুয়ারি টিইউভি থেকে ফলাফল পাওয়া যায়। এতে ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে আসে।

ল্যাব টেস্ট : লাইট ফাস্টনেস নামের একটি পরীক্ষায় সরবরাহকৃত কাপড় নির্ধারিত মান অর্জনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। ল্যাবরেটরি টেস্ট রিপোর্টে বলা হয়, ‘কালার ফাস্টনেস টু লাইট ফেইল’। অর্থাৎ এ ইউনিফরম পরে রোদে ডিউটি করলে কাপড়ের রঙ চটে যাবে। এছাড়া কম্পোজিশন পরীক্ষাতেও কাপড়ের নিম্নমান প্রমাণিত হয়। এতে দেখা যায় দরপত্রের নির্ধারিত মাত্রা কটনের পরিবর্তে ব্যাপকভাবে পলিস্টার এবং ভিসকোস জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে খসখসে জাতীয় কাপড় শরীরে অস্বস্তি তৈরি করে।

নিম্নমানের কাপড়ে তৈরি ইউনিফরম সরবরাহের অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানার জন্য ২৮ জানুয়ারি দুপুরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হয় যুগান্তরের এই প্রতিবেদক। রাজধানীর পল্টন এলাকার পলওয়েল মার্কেটে গেলে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে কথা বলেন ঠিকাদার জাহিদ মজুমদার। তিনি দাবি করেন ‘কাপড় নিয়ে যা কিছু হয়েছে তার সবকিছুই প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানেন। তিনি কিছুই জানেন না।’ জাহিদ বলেন, ‘আমি ছোটোখাটো ব্যবসা করি। এসব নিয়ে বড় কর্মকর্তাদের নাম বললে ব্যবসা করতে পারব না।’

জোর করে নারকোটিক্সের পোশাকের রং পরিবর্তন এবং সিম গ্রুপের মাধ্যমে কাপড় সরবরাহের অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য অতিরিক্ত ডিআইজি তানভির মমতাজের মোবাইল নম্বরে শনিবার রাতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বক্তব্য জানতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু এতেও তার সাড়া মেলেনি।

নিম্নমানের কাপড় সরবরাহ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য সম্প্রতি বারিধারা ডিওএইচএস এলাকায় সিম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে গেলে জানানো হয় কোম্পানির মালিক মোজাফফর হোসেন ছাড়া এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে পারবেন না। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই তিনি অফিসে তেমন আসছেন না। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তাও তাদের কারও জানা নেই। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d