পূর্ব ইউরোপে দাবদাহ : বিশ্বে খাদ্য সরবরাহে যে প্রভাব ফেলবে
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে দাবদাহ ও পানিস্বল্পতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিকাজ। এতে কৃষিপণ্য সরবরাহও ব্যহত হচ্ছে। বিশ্বের কৃষিপণ্য উৎপাদনের শীর্ষ দেশের একটি হলো ইউক্রেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে জুলাই মাসে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে।
পূর্ব ইউরোপের আরেক দেশ রুমানিয়ার অবস্থাও অনেকটা তাই। খরায় ভুগছে দেশটির বেশ কিছু অঞ্চল। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে পরাগায়নপ্রক্রিয়া, যা প্রত্যাশিত খাদ্যশস্য উৎপাদনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
ইউক্রেনের হাইড্রোমেটেরিওলজি সেন্টারের টাটিয়ানা আডেমেংকো বলেন, জুলাই মাসের ১০ দিন তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে ২০ থেকে ৩০ ভাগ কম হতে পারে।’
এদিকে রুমানিয়ার কৃষিমন্ত্রী ফ্লোরিয়ান বারবো কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চাওয়ার কথা ভাবছেন।
যা বলছেন বিশ্লেষকরা
পূর্ব ইউরোপের কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে জার্মানি অবশ্য খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত নয়। কারণ জার্মানি মূলত প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে থাকে।
পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেন জার্মানির খাদ্যপণ্য আদমদানির তালিয়ার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
তবে ইইউর কিছু সদস্য দেশ এই পরিস্থিতি ক্ষতির মুখে পড়ছে, জানালেন জার্মানির ক্লোপেনবার্গের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান কাক টের্মিনহান্ডেলের স্টেফান বাখ। এই বিশ্লেষক বলেন, ইউরোপের দেশ স্পেন এই পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটি কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি করে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অন্যান্য উৎস থেকে অধিক পণ্য আমদানি করতে হবে বলেও মত দেন তিনি। তবে চলমান পরিস্থিতির জন্য শস্য সরবরাহে এখনই কোনো সমস্যা তৈরি হবে না বলেও মনে করেন তিনি। কারণ হিসেবে এই বিশ্লেষক বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক শস্য সরবরাহের পরিমাণ অনেক অনেক বড়।
একই কথা বলছে আরেক ইউরোপীয় গবেষণা সংস্থা স্ট্র্যাটেজিস গ্রেইনস। যদিও তাদের ধারণা, ২০২৪-২৫ মৌসুমে রুমানিয়াতে খাদ্যশস্য উৎপাদন এক- চতুর্থাংশ কমে আসতে পারে। তবে সংস্থাটি তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে যেই তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে খাদ্যপণ্যের পরিমাণ খুব সামান্যই কমতে দেখা গেছে।
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে কৃষকদের খরার সমস্যা ও উচ্চ তাপমাত্রা, সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ—সব মিলিয়ে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজার বিশ্লেষক স্টেফান বাখ বলেন, কূটনৈতিক তৎপড়তার কারণে সমুদ্রপথে শস্য পরিববহন চালু হয়েছে, যা অনেকটাই নিরপাদ। ‘এক বছর ধরে কোনো বড় সমস্যা ছাড়াই জাহাজ চলাচল সম্ভব হচ্ছে।’
তবে এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য বেশি উদ্বেগের হলো পরিবহন ও ইনস্যুরেন্সের খরচ বৃদ্ধি।
আন্তর্জাতিক বাজারে কী প্রভাব?
যদিও পূর্ব ইউরোপের এই দাবদাহের সময় বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, তবে বাজারে কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। পানামা খালে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বড় বড় জাহাজের পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে গাজায় যুদ্ধ চলার সময় সুয়েজ খালকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের খাদ্যপণ্য পরিবহনে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন বিশ্লেষক স্টেফান বাখ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই লাখ ৭০ হাজারের বেশি টন খাদ্য ইইউতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশেষ করে জার্মানির জন্য এর দুটি অর্থ রয়েছে। একটি হলো, শস্য উৎপাদনরকারী কৃষকরা উচ্চমূল্য আশা করতে পারেন। আর অন্যটি হলো, পশুখাদ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করতে পারেন পশু খামারিরা।’
তবে কয়েক বছর আন্তর্জাতিক খাদ্যের বাজারে তৈরি হওয়া সংকটের সময়ের মতো শস্যের দাম বৃদ্ধি এখনই প্রত্যাশিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।