Science & Tech

পৃথিবীতে ২০ বছরের মধ্যে প্রথম ‘চরম’ সৌর ঝড়ের আঘাত

পৃথিবীতে শুক্রবার দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৌর ঝড় আঘাত হেনেছে।

এতে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া থেকে ব্রিটেনের আকাশে দর্শনীয় বর্ণিল আলোর ঝলকানি দেখা যায়। এটি অব্যাহত থাকলে সপ্তাহান্তে স্যাটেলাইট এবং পাওয়ার গ্রিডের বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বেশ কয়েকটি করোনাল মাস ইজেকশনের (সিএমই) কারণে সূর্যের করোনা অঞ্চলে প্লাজমা এবং চুম্বক ক্ষেত্রের বিষ্ফোরণে বিপুল ভর ও শক্তি প্রবল বেগে মহাশূন্যের দিকে ছিটকে বেরিয়ে আসে। যার প্রথমটি গ্রিনিচ মান সময় ১৬০০টার পরে সূর্য থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার এ কথা জানিয়েছে।

২০০৩ সালের অক্টোবরের প্রথম ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় ‘হ্যালোইন স্টর্মস’ সুইডেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন ঘটায় এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্যুৎ পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে এবারের এই ঝড়কে একটি ‘চরম’ ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় হিসেবে উন্নীত করা হয়।

আগামী কয়েক দিনে আরো সিএমই এই গ্রহকে ধাক্কা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোপের উত্তরাঞ্চল এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অরোরার ছবি পোস্ট করা হচ্ছে।

ব্রিটেনের হার্টফোর্ডের একজন থিঙ্ক ট্যাঙ্কার ইয়ান ম্যানসফিল্ড এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমরা এইমাত্র বাচ্চাদের জাগিয়েছি পিছনের বাগানে নর্দার্ন লাইট দেখার জন্য! স্পষ্টভাবে খালি চোখে এটি দৃশ্যমান।’

ফটোগ্রাফার শন ও’ রিওর্ডান এক্স-এ ছবিসহ একটি পোস্টে বলেছেন, ‘আজ ভোর ৪টায় তাসমানিয়ার আকাশে স্বর্গীয় দৃশ্য দেখা গেছে।’

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারণে সম্ভাব্য ব্যাঘাতের জন্য কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে স্যাটেলাইট অপারেটর, এয়ারলাইন্স এবং পাওয়ার গ্রিডকে অবহিত করেছে।

সৌর ঝড়ের গতি আলোর গতি থেকে ভিন্ন। সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে ৮ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সিএমই আরো স্থির গতিতে ভ্রমণ করে। কর্মকর্তারা সিএমই’র বর্তমান গতি গড়ে প্রতি সেকেন্ডে আট শ’ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) হিসাব করেছেন।

একটি বিশাল সানস্পট ক্লাস্টার থেকে এই সিএমই নির্গত হয়েছে যা আমাদের গ্রহের চেয়ে ১৭ গুণ প্রশস্ত। সূর্য ১১-বছরের একটি চক্রের শীর্ষে পৌঁছে করোনা অঞ্চলে প্লাজমা এবং চুম্বক ক্ষেত্রের বিষ্ফোরণে বিপুল ভর ও শক্তি প্রবল বেগে মহাশূন্যের দিকে ছিটকে বেরিয়ে আসে।

ইংল্যান্ডের ব্রেকসায়ারে রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেস ফিজিক্সের অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়েনস এএফপি’কে বলেন, সিএমই প্রভাবগুলো মূলত গ্রহের উত্তর এবং দক্ষিণ অক্ষাংশে অনুভূত হবে। তারা কতদূর প্রসারিত হবে ঝড়ের চূড়ান্ত শক্তির ওপর নির্ভর করবে।

তিনি বলেন, ‘আমার পরামর্শ হবে আজ রাতে বাইরে যান এবং দেখুন কারণ আপনি যদি অরোরা দেখতে পান তবে এটি বেশ দর্শনীয় হবে।’ কারো কাছে যদি সূর্য গ্রহণকালের সানগ্লাস থাকে। তবে তারা দিনের বেলায় সূর্যের ‘সানস্পটের’ স্থানটিও দেখতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া এবং আলবামার মতো জায়গাগুলো থেকেও অরোরা দেখা যাবে।
এনওএএ -এর ব্রেন্ট গর্ডন জনসাধারণকে খালি চোখে অরোরা দেখতে না পেলেও ফোন ক্যামেরা দিয়ে রাতের আকাশ ক্যাপচার করার চেষ্টা করতে উৎসাহিত করেছেন।

ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সাথে যুক্ত অস্থির চৌম্বক ক্ষেত্র দীর্ঘ তারে বিদ্যুৎ প্রবাহ প্ররোচিত করে। এতে পাওয়ার লাইনসহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। মহাকাশযানও উচ্চ মাত্রার বিকিরণের ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও বায়ুমণ্ডল এটিকে পৃথিবীতে পৌঁছানো থেকে বাধা দেয়।

নাসা’র একটি নিবেদিত দল রয়েছে যারা মহাকাশচারীর নিরাপত্তার দিকে নজর রাখছে। এ ধরণের ঝুঁকিতে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের মধ্যে এমন জায়গায় যেতে হবে যেগুলো ভালোভাবে সুরক্ষিত।

কবুতর এবং অন্যান্য প্রজাতি যাদের অভ্যন্তরীণ জৈবিক কম্পাস রয়েছে তারাও প্রভাবিত হতে পারে।

নাসার জেড প্রপালশন ল্যাবরেটরি জানায়, কবুতর হ্যান্ডলাররা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সময় পাখিদের বাড়িতে ফিরে আসার সংখ্যা কমে যাওয়া লক্ষ্য করেছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button