পৃথিবীর সব বরফ গলে গেলে কী হবে

জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রের তাপমাত্রাও। এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ ও বড় বড় হিমবাহও দ্রুত গলে যাচ্ছে। আর তাই দীর্ঘদিন ধরেই বরফ গলে যাওয়ার হার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। বরফ গলে যাওয়ার সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্কও করেছেন তাঁরা।
যদি পৃথিবীর সব বরফ গলে যায়, তবে আমাদের গ্রহের ছবি বদলে যাবে। মহাকাশ থেকে যে নীল গোলক দেখা যায়, তা আর দেখা যাবে না। সব বরফ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কতটা বাড়বে আর তা কোন কোন অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর সব বরফ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ মিটার বেড়ে যাবে। এই বিপুল পরিমাণ জলরাশি উপকূলীয় অঞ্চল ও নিচু দ্বীপরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলার বর্তমান যে হার, তা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক শতাব্দীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও বরফ গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফের স্তূপ গলে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭০ মিটার পর্যন্ত বাড়ে, তবে বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং জনবহুল এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এ ছাড়া ভেনিস, নিউইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, সাংহাই ও মুম্বাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রভাব দেখা যাবে। বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। মালদ্বীপ, কিরিবাতি, টুভালুর মতো অনেক ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যাবে।
শুধু শহর বা দ্বীপরাষ্ট্র নয়, উপকূলীয় কৃষিজমি ও মিঠা পানির উৎসও লবণাক্ত পানির কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেবে। এতে পৃথিবীর অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। যদিও এই মহাবিপর্যয় একদিনে ঘটবে না। বরফ গলে যাওয়ার বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।