পৃথিবী গোল না হয়ে বর্গাকার হলে কী হতো

পৃথিবী পুরোপুরি গোল না হলেও অনেকটা কমলালেবুর মতো। যদি কোনো মহাজাগতিক কারণে পৃথিবীর আকার বর্গাকার হতো, তাহলে আমাদের আশপাশের পরিচিত জগৎ বেশ বদলে যেত। বর্গাকার পৃথিবীর অভিকর্ষ ক্ষেত্র বর্তমানের গোলাকার পৃথিবীর মতো সুষম হতো না। তখন বর্গক্ষেত্রের কেন্দ্র ও প্রান্তের অভিকর্ষের তীব্রতা থাকত আলাদা। কেন্দ্রের দিকে অভিকর্ষের তীব্রতা সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়ায় সবকিছুকে ভেতরের দিকে টানত। অন্যদিকে, প্রান্তের অভিকর্ষ দুর্বল হওয়ায় ভূপৃষ্ঠের আকারে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যেত। তখন কেন্দ্রের দিকে ভূমি স্ফীত এবং প্রান্তের দিকে চাপা হতো। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর শরীর এই অসম অভিকর্ষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারায় মেরুদণ্ড ও পেশির ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ত।
পৃথিবী বর্গাকার হলে বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রের ভিন্ন আচরণ দেখা যেত। অভিকর্ষের ভিন্নতার কারণে কেন্দ্রে ঘন বায়ুমণ্ডল দেখা গেলেও কোনার দিকে থাকত পাতলা বায়ুমণ্ডল। এর ফলে বায়ুপ্রবাহের ধরন সম্পূর্ণ বদলে যেত। শুধু বায়ুমণ্ডলই নয়, অভিকর্ষের টানে কেন্দ্রের দিকে বেশি জমা হতো পানি, ফলে পৃথিবীর কেন্দ্রে বিশাল অভ্যন্তরীণ মহাসাগর তৈরি হতো। আর বিভিন্ন প্রান্ত সম্ভবত শুষ্ক ও অনুর্বর থাকত।
বর্গাকার পৃথিবীর ভূগঠন ও ভূ-আলোড়নের বেশ নাটকীয় পরিবর্তন হয়ে যেত। তখন টেকটোনিক প্লেটের ওপর ভিন্ন ভিন্ন চাপের কারণে নতুন ধরনের পর্বতমালা ও আগ্নেয়গিরির দেখা মিলত। ভূমিকম্পের ধরন ও তীব্রতায়ও পরিবর্তন আসত। এমনকি প্রাণীর আকার, আকৃতি ও শারীরবৃত্তীয় গঠনে ভিন্ন অভিকর্ষের প্রভাব দেখা যাওয়ায় লম্বা ও দুর্বল প্রাণীদের পৃথিবীতে টিকে থাকা কঠিন হতো।
বর্গাকার পৃথিবীতে আলো ও তাপ বিতরণের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসত। সূর্যের আলো সরাসরি কেন্দ্রে পড়ার কারণে সেখানে তীব্র তাপ অনুভূত হতো। অপর দিকে বিভিন্ন প্রান্তে সূর্যের আলো তির্যকভাবে পড়ায় তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকত। ঋতু পরিবর্তনের ধরনও বদলে যেত পৃথিবীর।