Bangladesh

পেট্রোলিয়াম, গ্যাস, এলএনজির বকেয়া পরিশোধের জন্য বাড়তি ঋণ চাইছে জ্বালানি বিভাগ

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ক্রুড তেল আমদানির বিল নিষ্পত্তি করতে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি) থেকে বাড়তি ৯০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সংস্থাটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) ১.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।

গ্যাস ও এলএনজি উৎপাদন ও ক্রয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র সংস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) এই প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহকারী ও গ্যাস উৎপাদনকারীদের বকেয়া পেমেন্ট মেটানোর জন্য ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।

অন্যদিকে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহকারীদের বকেয়া পেমেন্ট নিষ্পত্তির জন্য বিপিসি বাড়তি ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। বিপিসিকে আগেই ১.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আগামী ২৩ জুলাই একটি সভা করবে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (ফাইন্যান্স, অ্যাডিশনাল চার্জ) মো. আলতাফ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এলএনজি সরবরাহকারী ও স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদনকারী আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন পড়েছে, সেই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই এই ঋণ চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এলএনজি ও গ্যাস সরবরাহকারীদের বিল পরিশোধের জন্য ডলার প্রয়োজন, যা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধান বাধা। সেজন্যই আমরা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। এ ঋণ আমাদের বকেয়া পরিশোধে সহায়ক হবে।’ 

চলতি মাসের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭,১৮১ কোটি টাকার ঋণ চেয়ে না পাওয়ার পর ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের কাছে ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা।

আলতাফ হোসেন বলেন, পেট্রোবাংলার আর্থিক অবস্থা ভালো, ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না। পেট্রোবাংলার আয় ও ব্যয়ের হিসাব বিশ্লেষণ করলেই সেটি প্রমাণ হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে দীর্ঘমেয়াদি ও স্পট মার্কেট এলএনজি সরবরাহকারী এবং শেভরন ও টুলোসহ আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর পাওনা ৫৭০ মিলিয়ন ডলার।

পেট্রোবাংলা এসব বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় কয়েকটি স্পট মার্কেট এলএনজি সরবরাহকারী বলে দিয়েছে, বকেয়া পেমেন্ট পাওয়ার আগপর্যন্ত তারা আর কোনো চালান পাঠাবে না।

বাংলাদেশ বর্তমানে দুটি দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহকারী, কাতারগ্যাস ও ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল-এর (ওটিআই) পাশাপাশি টোটালএনার্জিস, ভিটল ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভর-এর মতো স্পট সরবরাহকারীদের কাছ থেকে এলএনজি আমদানি করে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পেমেন্ট-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে এলএনজি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে দেশের গ্যাস সরবরাহ নেটওয়ার্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প কার্যক্রম ও গ্যাসের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার।

পরিশোধিত জ্বালানির বিল পরিশোধের জন্য ঋণ চায় বিপিসি

ক্রুড তেলের আমদানি বিল পরিশোধের জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গ্রুপের সদস্য ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ঋণ নেওয়ার পুরনো ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের। ১৯৯৭ সাল থেকে বিপিসি সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে।

তবে এই প্রথম পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানি বিল মেটানোর জন্য ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের কাছ থেকে ঋণ নিতে যাচ্ছে বিপিসি। 

বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ টিবিএসকে বলেন, চলমান ডলার সংকটের ফলে বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণেই ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের কাছে বাড়তি অর্থ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাড়তি ঋণটা আমাদেরকে পরিশোধিত জ্বালানির বিল পরিশোধ করতে সাহায্য করবে, যা পরিস্থিতিকে সহজ করবে।’

সাম্প্রতিক এক প্রেস রিলিজে ঋণদাতা সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারকে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

বিপিসির পরিচালক (অর্থ) কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ঋণ নেওয়ার অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো সংস্থাটি ছয় মাস বিলম্বে ঋণ পরিশোধের সুবিধাসহ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) প্লাস ২%-এ ঋণ দেয়। সোফর হলো সুদহার নির্ধারণের মাপকাঠি। সোফরের মাধ্যমে শুধু মার্কিন ডলারে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেই সুদহার নির্ধারিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সোফরের সঙ্গে বাড়তি মার্জিন যোগ করে সুদ নির্ধারণ করে। 

বর্তমানে বিপিসি প্রায় ৭ মিলিয়ন টন পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করে। দেশে মোট জ্বালানির চাহিদা প্রায় ১০ মিলিয়ন টন।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা আমদানি করে পেট্রোলিয়াম পণ্যের বাকি চাহিদা মেটায়।

বিপিসির অফিশিয়াল তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে সংস্থাটি ১.৪৭ মিলিয়ন টন ক্রুড তেল ও ৫.৫৬ মিলিয়ন টন পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d