USA

পেন্টাগনে বড় অস্থিরতার আভাস

প্রথম মেয়াদে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন প্রত্যাবর্তনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে বড় ধরনের অস্থিরতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষায় দেশের অভ্যন্তরে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে পারেন। পাশাপাশি তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পৃথক সত্তাকে ক্ষুণ্ন করে সরাসরি তাঁর অনুগত করে ফেলতে পারেন। প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে এমনটা মনে করা হচ্ছে। তখন তিনি ক্রমাগত নানা নিয়ম ভেঙেছেন এবং পেন্টাগনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। তাদের অনেকেই ছিলেন ট্রাম্পেরই নিয়োগ দেওয়া চাকরিজীবী।

বৃহস্পতিবার দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, সময় বদলালেও ট্রাম্পের মধ্যে কোনো পরিবর্তনের আভাস দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁকে বারবার বলতে দেখা গেছে, ‘ঘরের শত্রু’দের বিরুদ্ধে তিনি সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করবেন। এ ছাড়া তিনি ২০২১ সালে বিশৃঙ্খলা করে আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য দায়ী সেনা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করবেন। চ্যাপেল হিলে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার অধ্যাপক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড কন বলেন, দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সামরিক বাহিনী যে সবচেয়ে বড় বিপদ মোকাবিলার শঙ্কা করছে, তা হলো– দ্রুত সময়ে তাদের পেশাদারিত্ব ধ্বংসকরণ, যা বাহিনীটির মানকে খাটো করবে এবং তাদের প্রতি মার্কিনিদের যে সম্মান আছে, তা ক্ষুণ্ন করবে। 

রিপাবলিকান প্রার্থীর মুখপাত্র ক্যারোলাইন লিভিট বলেন, গত মঙ্গলবারের ভোটের মাধ্যমে মার্কিনিরা ট্রাম্পকে তাঁর অঙ্গীকার পূরণের অনুমোদন দিয়েছেন, যা তিনি নির্বাচনের প্রচারণার মাঠে করেছিলেন। তিনি এসব অঙ্গীকার পূরণ করবেন।

প্রথম মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের জন্য বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি জনসমক্ষে সতর্ক করেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এসপার, জেনারেল (অব.) মার্ক এ মিলি, তৎকালীন সরকারের চিফ অব স্টাফ ও হোয়াইট হাউস প্রধান জন কেলি এবং জেনারেল (অব.) জিম ম্যাটিস। পরে ২০২০ সালের জুনে ম্যাটিস এক নিবন্ধে ট্রাম্প সম্পর্কে বলেন, তিনি জীবনে দায়িত্ব পালনকালে অনেক প্রেসিডেন্ট দেখেছেন; কিন্তু ট্রাম্পই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট যিনি মার্কিনিদের একত্র করার চেষ্টা করেননি। মার্কিন প্রশাসনের সামরিক-বেসামরিক এসব কর্মকর্তার প্রায় সবাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন করে সামরিক বাহিনীকে বেআইনি আদেশ দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। 

প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প পেন্টাগনের বাজেট বাড়িয়েছিলেন, যা মার্কিন মিত্রদেরও প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি বারাক ওবামা সরকারের আরোপ করা যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সীমাবদ্ধ থাকার কিছু নিয়ম ঢিলেঢালা করেন। এ পদক্ষেপকে বেশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। তথাপি তাঁর সরকারের প্রতিষ্ঠানবিরোধী আচরণ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার করে, বিশেষ করে যখন তিনি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে চলা মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরা তাঁর সমালোচনা করেন। স্থলাভিষিক্ত করার বিষয়টি আমলে না নিয়েই ট্রাম্প ট্রান্সজেন্ডার সেনাদের ওপর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। 

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে মার্কিন সেনাদের বড় ধরনের গতিবিধি প্রচার করতেন। এর মধ্যে উত্তর সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারও ছিল, যা সেখানে অংশীদার বাহিনীর জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যখন মার্কিন কর্মকর্তারা তালেবানের সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়া নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্প ব্যক্তিগত উদ্যোগে সে দেশ থেকে সেনাদের সরিয়ে আনতে শুরু করেন। বিষয়টিকে সেনা কমান্ডাররা একেবারেই অপ্রথাগত হিসেবে দেখেছেন।

বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, পেন্টাগনের পেশাদার কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর সদস্য রাজনীতি এড়িয়ে চলতে চান। তাদের অনেকেই এখন ট্রাম্পের প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আতঙ্কে আছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প বিশৃঙ্খল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা তাদের চাকরি চালিয়ে যাওয়া কঠিন করে তুলবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button