USA

পেন্ডুলামের মতো দুলছে কমলা-ট্রাম্পের ভাগ্য

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা জমে উঠেছে। আর মাত্র ছয় দিন পরই ভোট গ্রহণ। এ অবস্থায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারণায় ঘাম ঝরাচ্ছেন। দু’জনই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোকে টার্গেট করে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি একে অন্যকে ঘায়েল করতে ছুড়ে দিচ্ছেন বাক্যবাণ। তবে বিভিন্ন জরিপে দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তার পাল্লা প্রায় সমান দেখা গেছে।

স্থানীয় সময় সোমবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগানে প্রচারণায় অংশ নেন কমলা হ্যারিস। সেখানে তিনি ভোটারদের উদ্দেশে ‘বিভেদ ও আতঙ্কের পাতা উল্টে দিতে’ বলেন। মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে তরুণদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। কমলা বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রজন্মকে ভালোবাসি। কারণ, এ প্রজন্ম পরিবর্তনের জন্য সক্রিয়ভাবে প্রস্তুত।’ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি পৃথিবীকে রক্ষার আহ্বান জানান। 

অন্যদিকে জর্জিয়ার আটলান্টায় সমাবেশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি কমলা ও তাঁর সমর্থকদের কঠোর সমালোচনা করেন। সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামাকে ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেন তিনি। জর্জিয়ায় ট্রাম্প বলেন, কমলা নতুন ধারা নিয়েছেন। তাঁর প্রচারণা হলো– কেউ ভোট না দিলে তিনি তাকে নাৎসি বলে সম্বোধন করেন।
গত সপ্তাহে কমলা সাবেক জেনারেল জন কেলির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, হোয়াইট হাউসে থাকাকালে জার্মান স্বৈরাচার অ্যাডলফ হিটলারের প্রতি নাৎসি জেনারেলদের আনুগত্যের প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। কার্যত কেলি ছিলেন ট্রাম্পের মেয়াদে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেও মন্তব্য করেন। আটলান্টার সমাবেশে কমলাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ উল্লেখ করে ট্রাম্প নিজেকে ‘নাৎসি নন’ বলে জানান। 

প্রচারণার এ উত্তেজনার মধ্যে বিভিন্ন জরিপের দিকে চোখ রাখছে সচেতন মহল। কিন্তু এসব জরিপে বড় কোনো ব্যবধান চোখে পড়ছে না। কমলা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট নয়। মঙ্গলবার জরিপ সংস্থা ফাইভ থার্টি  এইটের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের চেয়ে কমলা কিছুটা এগিয়ে আছেন। কমলা পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন; আর ট্রাম্পের সমর্থন ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
কার্যত পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, মিশিগান, আরিজোনা, উইসকনসিন ও নেভাদা– দোদুল্যমান এ সাত অঙ্গরাজ্যই ভাগ্য গড়ে দেয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের। এগুলোকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যও বলা হয়। উইসকনসিনে দুই প্রার্থীর ব্যবধান দশমিক ১০ শতাংশও নয়। জরিপে এইসব অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীই সমানে সমান দেখা গেছে।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে কয়েকটি জরিপের ফল তুলে ধরা হয়। এগুলোর কয়েকটিতে কমলা ও কয়েকটিতে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন। গত রোববার প্রকাশিত এবিসি ও ইসসোসের জরিপে ৫১ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ট্রাম্পের ৪৭ শতাংশের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন কমলা। একই দিন সিবিসি ও ইউগোপ তাদের জরিপের ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, কমলা ও ট্রাম্পের ব্যবধান মাত্র ১ পয়েন্ট– যথাক্রমে ৫০ ও ৪৯ শতাংশ। সিএনএন ও এসএসআরএসের জরিপে কমলার চেয়ে ১ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। এ জরিপে ৪৮ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে ও ৪৭ শতাংশ কমলাকে সমর্থন করেন। সিএনবিসির সাম্প্রতি জরিপেও ২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা অনেকটা ভারসাম্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

ডেমোক্র্যাটদের গাজা নীতির সমালোচনায় বার্নি
ভেরমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস প্রশাসনের গাজা নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। এক ভিডিও বার্তায় ভোটারদের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘গাজা ‍যুদ্ধ নিয়ে কমলার অবস্থানে আমার সম্মতি নেই। কীভাবে আমি তাঁকে ভোট দেব?’ তবে একই সঙ্গে ডানপন্থি ট্রাম্প ও তাঁর অনুগামীকে ‘অধিকতর খারাপ’ বলে বর্ণনা করেন তিনি। স্যান্ডার্স বলেন, তারা সিনেট কিংবা কংগ্রেসে গাজায় ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য মানবিক সহায়তার প্রস্তাব আটকে দিতে অতিরিক্ত সময়েও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তিনি জানান, যদি কমলা জেতেন, তাহলে তারা সবাই মিলে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতির পরিবর্তন ঘটাতে কাজ করবেন।  

ট্রাম্প জিতবেন, বলছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ
যুক্তরাষ্ট্রের ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জয় পাবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টোফ ব্যারাউদ। বিশ্বের ‘সবচেয়ে নির্ভুল’ অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ব্যারাউদ কয়েকটি মানদণ্ডের বিচারে এ পূর্বাভাস দিয়েছেন। এক্সে ব্যারাউদ লেখেন, বিভিন্ন সূচক লক্ষ্য করে, যেমন– বেটিং বাজার, ভোট, নির্বাচনী মডেলারদের পূর্বাভাস, আর্থিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প জিতছেন।

কমলার জন্য মাঠে বুশকন্যা বারবারা
রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মেয়ে বারবারা বুশ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি পেনসিলভানিয়ায় সপ্তাহের বেশি সময় কাটান। বারবারা বলেন, তাঁর প্রত্যাশা, কমলা নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নেবেন এবং নারী অধিকার সুরক্ষা করবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button