‘পোষা নয়’, ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়িতে কেন রোবট কুকুর
কুকুরটির নাম ‘স্পট’। তবে এটি আসল কুকুর নয়। এটি একটি রোবট। বানিয়েছে বোস্টন ডায়নামিকস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্পটকে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়িতে। সিক্রেট সার্ভিসের হয়ে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কুকুরটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অভিজাত পাম বিচ এলাকায় রয়েছে ট্রাম্পের গলফ রিসোর্ট মার–এ–লাগো। নিউইয়র্কের বাইরে এখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ট্রাম্প। আর এই রিসোর্টের প্রাঙ্গণে টহল দেয় রোবট কুকুর স্পট।
স্পট দূরনিয়ন্ত্রিত অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত। কুকুরটির কাছে কোনো অস্ত্র নেই। তবে এটির পায়ে লেখা রয়েছে, ‘এটা পোষ্য নয়’। এর মধ্য দিয়ে মূলত ট্রাম্পের বিশাল এই সম্পত্তিতে টহলের কাজে নিয়োজিত স্পটের কাছাকাছি আসা লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
মার–এ–লাগোতে স্পটের টহল দেওয়ার একটি ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হয়েছে। এতে অনেকেই কুকুরটিকে শান্ত, চতুর, ভয়ংকর—এমন নানা বিশেষণে অভিহিত করেছেন। এমনকি কুকুরটি গভীর রাতে টেলিভিশনের পর্দায় আমেরিকানদের রসিকতার অন্যতম খোরাক হয়ে উঠেছে। যদিও স্পটের কাজ হাসির কোনো বিষয় নয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মেলিসা মিচেলসন বলেন, ‘কেউ রোবট কুকুর পোষার জন্য আগ্রহী হন, এমনটা আমার জানা নেই। এটি দেখতে মোটেও ফুটফুটে নয়।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়ি মার–এ–লাগো। ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
বিগত মাসগুলোয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলার সময় ট্রাম্প দুবার হামলার শিকার হয়েছেন। পেনসিলভানিয়ার বাটলার এলাকায় গত জুলাইয়ে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রথমবার। দ্বিতীয়বার এই মার–এ–লাগোতে, গত সেপ্টেম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের যোগাযোগপ্রধান অ্যান্থনি গুগলিয়েলমি এক বিবৃতিতে বিবিসিকে বলেন, ‘নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাপদ রাখা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
নিরাপত্তার কাজে রোবোটিক কুকুরের ব্যবহার নিয়ে সিক্রেট সার্ভিসের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করেছিল বিবিসি। তবে ‘প্রায়োগিক নিরাপত্তার উদ্বেগের’ কারণে এর জবাব দেওয়া হয়নি। এমনকি ট্রাম্পের বাড়িতে কবে থেকে স্পট কাজ করছে—সেটাও জানানো হয়নি।
বোস্টন ডায়নামিকস–ও সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এড়িয়ে গেছে। তবে জানিয়েছে, তাদের তৈরি রোবট কুকুর স্পট নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করছে সিক্রেট সার্ভিস।
রন উইলিয়ামস একসময় সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্ট ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিরাপত্তা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠান টালোন কোম্পানিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। রন উইলিয়ামস বলেন, ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনা সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রযুক্তি হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে এনেছে। যাতে আগেভাগে ঝুঁকি শনাক্ত ও তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
রন উইলিয়ামসের মতে, মার–এ–লাগো এত বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত যে, সেখানে মানুষের একার পক্ষে টহল দেওয়া তুলনামূলক কঠিন। এর বিপরীতে রোবট কুকুর অনেক বেশি এলাকাজুড়ে পাহারা দিতে সক্ষম।
তবে শুধু সিক্রেট সার্ভিস একাই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে সামরিক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নিরাপত্তার কাজে রোবট কুকুরের ব্যবহার ক্রমেই বাড়াচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগ গত বছর নিজেদের নিরাপত্তা দলে রোবট কুকুর যুক্ত করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চলমান যুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারে রোবট কুকুর ব্যবহার করছে ইউক্রেন।