প্যাকেটজাত ডিমের দাম বাড়ছে নীরবে, পুষ্টি গুণ ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারি কোনো নজরদারির ব্যবস্থা নেই
বাজারে বিক্রি হওয়া প্রচলিত সাধারণ ডিমের তুলনায় বিভিন্ন কম্পানির প্যাকেটজাত ডিমের দাম আগে থেকেই তুলনামূলক বেশি। এসব প্যাকেটজাত ডিমের দাম নীরবেই বেড়ে যাচ্ছে। দাম বেড়ে এখন বিভিন্ন কম্পানির প্যাকেটজাত সাধারণ ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকায়, যা আগে ১৭৫ টাকা ছিল। তবে প্রচলিত মুরগির ডিমের চেয়ে অর্গানিক, ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত ডিমগুলো উচ্চহারে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ও সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খোলা সাধারণ ডিমের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত সাধারণ ডিম ও ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উচ্চবিত্তরা সাধারণত এসব প্যাকেটজাত ডিমগুলো কিনে থাকেন। দাম বেড়ে প্যারাগনের প্যাকেটজাত সাধারণ ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ছিল ১৮৫ টাকা। কাজী ফার্মের প্যাকেটজাত করা সাধারণ ডিম প্রতি ডজন ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দেড় মাস আগেও বিক্রি হয় ১৭৫ টাকায়। কোয়ালিটি ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত সাধারণ ডিম ডজন ১৮৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন কম্পানির ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬৫ টাকায়। বেশি দামে বিক্রি হলেও এসবের পুষ্টি গুণ ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারি কোনো নজরদারির ব্যবস্থা নেই। উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে ডিমের পুষ্টিমান নির্ধারণ ও উৎপাদন খরচ অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করছে বলেও জানা গেছে।
তবে সুপারশপ ও বাজারের খুচরা দোকানগুলোতে খোলা প্রতি ডজন ডিম ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যারাগনের ওমেগা-থ্রি নামে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ টাকায়। পূর্ণভা ও কোয়ালিটি ব্র্যান্ডের ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ প্রতি ডজন ডিম যথাক্রমে ২৬৫ টাকা ও ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্বপ্ন সুপারশপ ও জিনিয়াস সুপারশপের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেন, ‘কাজী ফার্ম, প্যারগন ও পূর্ণভাসহ বেশ কয়েকটি কম্পানি সম্প্রতি প্যাকেটজাত ডিমের দাম বাড়িয়েছে। প্রথমে দু-একটি কম্পানি দাম বাড়ানোর পর আস্তে আস্তে সব কম্পানিই এখন দাম বাড়াচ্ছে।’
নিয়মিত সুপারশপ থেকে প্যাকেটজাত ডিম কেনেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘অর্গানিক ও এক্সট্রা ভিটামিন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ দেখিয়ে বিভিন্ন কম্পানি সাধারণ ডিমের চেয়ে দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে আমাদের পকেট কাটছে। খোলাবাজারে সাধারণ ডিম প্রতি ডজন যেখানে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় পাওয়া যায়, সেখানে প্যাকেটজাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ প্রতি ডজন ডিম ২৪০ থেকে ২৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আবার কিছু কম্পানি সাধারণ ডিম শুধু সিল মেরে প্যাকেটজাত করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’
সুপারশপ মীনা বাজারের ম্যানেজার (প্রকিউরম্যান) রফিকুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, ‘প্যাকেটজাত ডিমের দাম বেশ কিছু কম্পানি বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তর নতুন করে খোলা ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় এখন প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি করছি। যদিও এই দামে ডিম বিক্রি করায় আমাদের লস হচ্ছে। কারণ আমাদেরই এখন আরো বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল দুই হাজার ৩৩৮ কোটি। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল দুই হাজার ৩৩৫ কোটি। দেশে উৎপাদিত এই ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। খাওয়ার পাশাপাশি ডিমের একটি বড় অংশ ব্যবহার করে বাচ্চাও ফোটানো হয়। এর মধ্যে কাজী ফার্মস, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগসহ ১০ কম্পানিও ডিম উৎপাদন করে।