Bangladesh

প্রকল্পের নামে অর্থ লুটপাট

কমছে না ঢাকার বায়ুদূষণ বায়ুদূষণ রোধে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল পাওয়ার পরও ঢাকার বাতাস বছরের অর্ধেক সময়েই অত্যন্ত দূষিতই থাকছে :: বায়ুদূষণ রোধে ৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প :: আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আবারও আইনগত ব্যবস্থা নেব- অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ :: বায়ুদূষণ রোধে বরাদ্দ অর্থ ভিন্ন খাতে খরচ হচ্ছে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ এখন বাংলাদেশ। গত তিন বছর ধরে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের নাম শীর্ষে রয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকাতেও ঢাকার নাম আছে ওপরের দিকে। তবে এই ক্ষতি মোকাবেলায় বিশ্বের যে ক’টি দেশ বৈশ্বিক তহবিল পাচ্ছে, সেই তালিকাতে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ রোধের ক্ষেত্রে রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। বায়ুদূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশি অর্থ পেয়েছে। বায়ুদূষণ রোধে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল পাওয়ার পরও বাংলাদেশের বাতাসের গুণগতমান বছরের প্রায় অর্ধেক সময়েই অত্যন্ত দূষিতই থাকছে। এর কারণ কী। এতো বিশাল অর্থ পেয়েও পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণ রোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কেন? অনেকের মতে, এই অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থের অপচয় হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে। এর ফলে বায়ুদূষণ রোধের পরিবর্তে অসাধু কর্মকর্তাদেরই পকেট ভারি হচ্ছে। ঢাকার পরিবেশ ও বায়ুদূষণ রোধে ২০১৭ সালে ৮০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) শীর্ষক একটি প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হয়। তবে তাতে বায়ুদূষণের কোন উন্নতি হয়নি। এই প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে ব্যয় এবং লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। বায়ুদূষণের লাগাম টেনে ধরতে এবার (৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রায় ছয় হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করেছে বিশ্বব্যাংক। ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ট্রান্সফরমেশন’ (বেস্ট) শীর্ষক এ প্রকল্পের মাধ্যমেও বায়ুদূষণ রোধ না হয়ে অর্থ লুটপাটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা

বায়ুদূষণের কারণে আমাদের দেশে মানুষের আয়ু গড়ে প্রায় তিন বছর কমছে। এ জন্য বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার বিশ্বে সর্ব্বোচ। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে চতুর্থ প্রধান কারণ এখন বায়ুদূষণ। শিশুদের অ্যাজমা বেড়ে যাচ্ছে, অসুস্থ বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। বায়ুদূষণে দেশে জিডিপির পাঁচ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ প্রধান বড় শহরগুলোয় দূষিত বায়ু অব্যাহত থাকে বছরের পাঁচ মাস। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু বায়ুদূষণের একাধিক উৎস রয়েছে, তাই ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে বায়ুদূষণ মোকাবেলায় বায়ু গুণমান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু বায়ুদূষণ রোধে অপরিকল্পিতভাবে অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাই বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর কিছু হচ্ছে না। শুধু তাই নয় ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। সপ্তাহে দু’বার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার নির্দেশ থাকলেও তা হচ্ছে না। এছাড়া ঢাকার রাজপথে নিয়মিত সকাল বিকাল পানি দেয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এ বিষয়ে আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মনজিল মোরসেদের ইনকিলাবকে বলেন, আদালতের নির্দেশনাই হচ্ছে আইন। সে আইন মানা হচ্ছে না। ঢাকার বায়ুদূষণ এখনো কমেনি। পরিবেশ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে, আমরা আবারও আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে সরকার আন্তরিক নয়। যেসব কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে তা এখন মোটামুটি চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে যথাযথ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় না। এ বিষয়ে আইন করা হলেও তা কার্যকর হয় না। মেয়াদ উত্তীর্ণ বাস দিব্যি বায়ুদূষণ করে ঢাকার রাজপথে চলাচল করছে, দেখার কেউ নেই। অবৈধ ইটভাটা চলছে, বেআইনিভাবে বায়ুদূষণ করে নির্মাণ কাজ চলছে, কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে উদাসীন। অথচ বৈশ্বিক তহবিল থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা এসেছে। তারপরও বায়ুদূষণ রোধ না হওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এই অর্থ গেল কোথায়। এ অর্থ ভিন্ন খাতে বা ভিন্ন ভাবে খরচ হয়েছে এমনটি ভাবাইতো স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিককালে গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ৭১ শতাংশ মানুষ বিষণœতায় ভুগছে। বায়ুদূষণজনিত ক্যান্সারসহ শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগ বাড়ছে। মানুষ দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে এলে তা নিশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভেতরে প্রবেশ করে। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয় ও স্নায়ুগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। অনেকের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ফুসফুস আক্রান্ত ও হাঁপানি হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের শরীরে নানা রোগবালাই যেমন বাসা বাধছে, তেমনি মনের মধ্যেও রোগশোকের জন্ম দিচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে মানুষের বিষণœতা। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

ঢাকার পরিবেশ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাংক ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এর আগে ‘বাংলাদেশে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) শীর্ষক একটি প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৮০২ কোটি টাকা। কেস প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধির বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) সহায়তা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বায়ুদূষণ রোধে এটি কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কেস প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার ফুট ওভার ব্রিজে প্লাটিকের বিভিন্ন ধরনের বাক্সের মাধ্যমে গাছ লাগানো হয়ে ছিল। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে সেগুলো ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক ফুটওভার ব্রিজে এখন শুধু খালি বাক্স চোখে পড়ে গাছের কোন অস্তিত্ব এখন আর নেই। এছাড়া এ প্রকল্পের অর্থ দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ছাউনী নির্মাণ করা হয়েছে। যা বায়ু দূষণ রোধে কোন ভূমিকা রাখে না। মূলত এসব প্রকল্পের মাধ্যমে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা বেপরোয়াভাবে অর্থ লুটপাট করেছে। কেসের পর এবার ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ট্রান্সফরমেশন’ (বেস্ট) শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর কার্যক্রমও হবে প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ, জনবলবৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে নানান প্রশিক্ষণ কর্মশালা। যার মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ লুটপাট হবে কিন্তু বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর কিছুই হবে না।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কেসের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. এসএম মনজুরুল হান্নান খান বলেন, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ৮০২ কোটি টাকার কেস প্রকল্প পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং ডিটিসিএ’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ৪৬৩ কোটি টাকা, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ২৮৪ কোটি টাকা এবং ডিটিসিএ-কে ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কেস প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ু দূষণরোধে কী ধরনের কাজ হয়েছে জানতে চাইলে ড. মনজুরুল হান্নান খান বলেন, সারা দেশ ১৬টি স্থায়ী সার্বক্ষণিক বায়ুমান নির্ধারণী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, ১৫টি মোবাইল বায়ুমান নির্ধারণী কেন্দ্রসহ মোট ৩১টি বায়ুমান নির্ধারণী কেন্দ্রে করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য ১৪ তলাবিশিষ্ট একটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ও আন্তর্জাতিকমানের একটি অডিটরিয়াম করা হয়েছে ও একটি আধুনিক ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor