Bangladesh

প্রকাশ্যে নৌকায় ৪৩ সিল মারা সেই আজাদ আবারো ভোটের মাঠে

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে ৫৭ সেকেন্ডে নৌকায় ৪৩ সিল মারা সেই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনকে ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা গেছে।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) আজাদ সদরের নৌকা প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকুর পক্ষে দিঘলি ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ, পোস্টার ঝুলানো ও মাইকিংসহ গণসংযোগে অংশ নেন।

ভোট নিয়ে সবক্ষেত্রেই আজাদের সরব উপস্থিতি ছিল। তার উপস্থিতিতে এবারো সেই সিল মারার ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা ও প্রতিপক্ষের সমর্থকরা। তবে এবার তাকে কেউ ‘শিবির কর্মী’ বলছেন না। এবার তাকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেই পরিচয় দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ ব্যাপারে আজাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।

৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনের পরদিন আজাদের নৌকায় সিল মারার ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরালের ঘটনায় ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু জানিয়েছেন, আজাদ শিবির কর্মী।
ওই ঘটনা নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তখন দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী জাবেদও আজাদকে শিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বক্তব্য দিয়েছেন। তাকে কিভাবে ছাত্রলীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর আজাদ ফের ভোটের মাঠে সরব হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী জাবেদ বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আজাদের বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা হতে দিব না। সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। কোনো জাল ভোট হবে না।

গতবারের ঘটনায় আজাদকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকুর আখ্যা দেয়া শিবিরকর্মীর বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদ বলেন, উপনির্বাচনের অনেক আগে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় আজাদকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সভাপতি তাকে চিনত না। এজন্য ভুল করে শিবির কর্মী বলেছেন।

তখন ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদও আজাদকে শিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কেন তাকে শিবির বলব। আমাকে কেন আবার সেদিকে টানছেন। সে ছাত্রলীগ করতো। দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

দিঘলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াদুদ লিটন বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় থাকলেও আজাদকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ভোটের মাঠে তাকে নিয়ে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না। সুষ্ঠু ভোট হবে, এতে শঙ্কা নেই। আজাদ ছাত্রলীগ করতো। কখনোই শিবিরের সাথে জড়িত ছিল না। কে বা কারা তাকে শিবির আখ্যায়িত দিয়েছে, তা আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু এবং চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবকে একাধিকবার কল করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

নৌকার বিপক্ষে ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সাত্তার।

তিনি বলেন, যেখানে আমার সমর্থক বেশি, সেখানে নৌকার কর্মীরা তাদেরকে কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহ করছে। হুমকি দিচ্ছে। তবে আজাদকে নিয়ে কোনো শঙ্কা করছি না। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করলেই হবে।

এদিকে ৪ জানুয়ারি বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই দাবি করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাকিব হোসেন।

আজাদের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি ইতোমধ্যেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আজাদের মতো কেউ থাকলে অন্য প্রার্থী কখনোই সুষ্ঠু ভোট আশা করতে পারে না। তার মারা ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ভোট বহিঃবিশ্বে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। শুনেছি এবারো তিনি নৌকার পক্ষে ভোট করছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্মীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভোটকেন্দ্রে কোনো অনিয়ম করতে দেয়া হবে না। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কঠোর বার্তা দেয়া রয়েছে। ভোটগ্রহণের প্রত্যেকটি কক্ষ তিনি পর্যবেক্ষণে থাকবেন। কোনো ঘটনা ঘটলেই আমাদেরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর নির্দেশ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ১১৫টি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ ব্যালট বইয়ে নৌকা মার্কায় অনবরত সিল মারেন। এ ঘটনার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে ১১ নভেম্বর আজাদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায় চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। আজাদ সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ খাগুড়িয়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে। ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর গঠিত চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি করা হয়। গত ৮ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ। এর আগে তিনি দিঘলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button