Hot

প্রচণ্ড ঝড়-বজ্রপাতে ১১ জনের প্রাণহানি

চৈত্রের শেষ সময়ে গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বইছিল তাপপ্রবাহ। আগামী ১৪ এপ্রিল শুরু হবে বাংলা বর্ষ। নববর্ষকে বরণ করবে বাঙালি। বৈশাখ মাস আসার আগেই গতকাল দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়েছে কালবৈশাখী। এতে বিভিন্ন জেলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য’র প্রতিবেদনে-

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় বজ্রপাতে মো. ওবায়দুল্লাহ গাজী নামে মৎস্য চাষীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়ার কোমলপুর গ্রামে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। সে ওই গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে। নিহতের ভাই আবু সুফিয়ান বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওবায়দুল্লাহ পাশের কানাইডাঙ্গা বিলে তার পালিত গরুর জন্য ঘাস কাটতে যায়। সেখানে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর হাওরে বৃষ্টিপাত চলাকালে বজ্রপাতে শহীদ মিয়া নামক এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে খালিয়াজুরী উপেজলার রাজঘাট হাওরে ঘটনাটি ঘটে। মৃত শহীদ মিয়া খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, মৃতের লাশ দাফনের জন্য তাৎক্ষনিক জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঝড় শুরু হয়। এ ঝড়ে গাছচাপায় এক নারী ও ঝড়ে উড়ে গিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন। জেলার ওপর দিয়ে ১৫ মিনিট ঝড়ো গতিতে বাতাস বয়ে যায়। এতে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শত শত গাছ উপরে পড়ে কয়েকশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পৌরসভার প্রায় সব সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে পিরোজপুরের সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার রমজান আলী জানান, এ ঝড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত ১২ থেকে ১৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার লালমোহন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলায় আজ সকালে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শতাধিক বাড়ি-ঘর, গাছপালা, বিদ্যুৎ লাইন, মাঠের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ আকস্মিক ঝড়ে লালমোহন উপজেলায় ঘর চাপা পড়ে হারিস ও বজ্রপাতে বাচ্চু নিহত হন। নিহত দু’জনের পরিবারকে সরকারিভাবে ২৫ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে বাগেরহাটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এসময় কচুয়ায় বজ্রপাতে এক মাদরাসা দফতরি নিহত হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাস-টার্মিনালে একটি সাইনবোর্ড ভেঙে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসের উপর পড়ে এক বাস শ্রমিক আহত হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ রাতের মত অন্ধকার হয়ে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ১৫ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে বাগেরহাট পৌরসভার ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছ চাপা পড়ে অসংখ্য বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামামান জানান, সদর উপজেলার জেলার মারিয়াপল্লীতে ১৫ ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসময় এক নারী আহত হয়। এছাড়া আরো কিছু এলাকায় মসজিদ, মন্দিও ও কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা রাজাপুর সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে । মারা যাওয়া তিনজন হলেন, হেলেনা বেগম , মিনারা বেগম ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা । তাদের মধ্যে হেলেনা বেগমের বাড়ি উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে। আর মিনারা বেগমের বাড়ি সদর উপজেলার শেখেরহাট এলাকায় ও মাহিয়া আক্তার ঈশানারের বাড়ি পোনাবালিয়া গ্রামে। ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে মাঠ থেকে গবাদি পশু আনতে গিয়ে তারা বজ্রপাতে নিহত হয়।

বাউফল : বাউফলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া ৩৫ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে দুইজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে বাউফলে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতসহ ঝড় হয়েছে। এতে তেতুলিয়া নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোণিত কুমার গাইন হতাহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধার ও অনুসন্ধানে কাজ চলছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button