প্রতিমন্ত্রী জাকিরের এ কেমন নির্মমতা
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সরকারি বাসভবনে নির্মম মারধরের শিকার হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ তিন ব্যক্তি। এ ঘটনার পর উল্টো থানায় লিখিতভাবে প্রতিমন্ত্রীর বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ খবরকে ‘উদ্ভট, অলীক ও কল্পনাপ্রসূত’ বলে দাবি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
হামলার শিকার আবু সুফিয়ান বিশ্বাস বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও খুলনা জেলা শাখার আহ্বায়ক। অন্য দু’জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আবু সুফিয়ান খুলনা জেলা পুলিশের সদস্য।
জানা গেছে, চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ৪৮ সন্তানের কাছ থেকে ৯৪ লাখ টাকা নেন প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়রা। প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের উপস্থিতিতে তাঁর চাচা সম্পর্কের লিটন ও ড্রাইভার মোমিনের কাছে টাকা দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রীই তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে বলেছিলেন। চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর এ বাবদ আরও বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আর এ কাজের সমন্বয় করেছিলেন আবু সুফিয়ান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরও চাকরি না হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখা করেন আবু সুফিয়ানসহ অন্যরা। এ সময় প্রতিমন্ত্রী তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত পাননি ভুক্তভোগীরা। গত মে মাসে ৪৮ জনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন আবু সুফিয়ান। এতে চরম ক্ষুব্ধ হন প্রতিমন্ত্রী।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি জাকির। এতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের অভিযোগ ভূমিকা রাখতে পারে সন্দেহ করে প্রতিমন্ত্রী তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। গতকাল টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে তাদের প্রতিমন্ত্রীর বাসায় ডাকেন কল্লোল। বেলা ১১টায় প্রতিমন্ত্রীর মিন্টো রোডের ১১ নম্বর সরকারি বাসায় যান আবু সুফিয়ান, নাছির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, তারা প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের কক্ষে ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে চলে আসেন জাকির হোসেন। এ সময় কর্মচারী ও বাসার নিরাপত্তায় থাকা সাত-আটজন ওই কক্ষে প্রবেশ করে দরজা আটকে তিনজনকে পেটাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে নাছির ও জাহিদ প্রধান ফটক দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আবু সুফিয়ান পাশের দেয়াল টপকে ডিবি কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন।
এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর বাসার অফিস সহায়ক মো. মমিন রমনা থানায় আবু সুফিয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে সেটা জিডি বা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রমনা থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও জেনেছি। তবে তা ডিবি দেখভাল করছে।’
সমকালের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, প্রতিমন্ত্রী জাকিরের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে টাকা লেনদেনের অভিযোগ নতুন নয়। গত শুক্রবার প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয় লিটনের বাসায় তিন-চার ব্যক্তি পাওনা টাকা ফেরত চাইতে টাঙ্গাইল থেকে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে লিটনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার ফোন করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রণালয়ের অস্বীকার
গত রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিনের পাঠানো প্রতিবাদপত্রে দাবি করা হয়, মরধরের খবর উদ্ভট, অলীক ও কল্পনাপ্রসূত। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম পর্বের পরীক্ষা হওয়ায় ভিড় ও তদবির এড়াতে প্রতিমন্ত্রীর মিন্টো রোডের বাসায় অপরিচিত কাউকে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধ করা হয়। তারপরও গতকাল কতিপয় ব্যক্তি প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে হাউসগার্ড বাধা দেয়। কিন্তু তারা বাধা অগ্রাহ্য করে বাসার ভেতর প্রবেশ করে এবং গার্ডদের সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি ও ধস্তাধস্তি করতে থাকে। এক পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর সময়ে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকসহ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।