Bangladesh

প্রতিমন্ত্রী জাকিরের ঘুষকাণ্ডে তোলপাড়

এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত: ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নামে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ঘুষকাণ্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন অনেকেই। চাকরিপ্রত্যাশী আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি। ডিবি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে গত রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডে সংস্থার কার্যালয়ে ওই টাকা ফেরত দেন প্রতিমন্ত্রীর লোকজন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাতের নাগালে পেয়েও ছেড়ে দেওয়া এবং গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে মধ্যস্থতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার আপস-মীমাংসার এখতিয়ার পুলিশের নেই বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবহেলা, উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন মতামত পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক পদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ঘুষ গ্রহণকারী ও অপরাধলব্ধ টাকা হাতে পেয়ে আইন অনুযায়ী মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে ডিবির উচিত ছিল ঘুষের টাকাসহ অপরাধীকে দুদকের কাছে তুলে দেওয়া। কারণ এ অপরাধ দুদকের তপশিলভুক্ত।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(১)(এ)(বি) ধারায় ঘুষ গ্রহণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইভাবে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায়ও ঘুষ গ্রহণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এ অপরাধে সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই আইনের ৫(১)(ডি) ধারায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে।

সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অপরাধীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ নিয়েছেন। সূত্র জানায়, ঘুষ নেওয়ার কারণে প্রতিমন্ত্রীসহ ঘুষ গ্রহণকারীরা আইনের আওতায় আসবেন। লাভবান হওয়ার জন্য যারা ঘুষ দিয়েছেন, তারা দণ্ডবিধির ১৬৫(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের নামে নেওয়া ঘুষের টাকা জব্দ করে টাকাসহ অপরাধীদের দুদকের কাছে দিতে পারত ডিবি। তারা দুদক আইন সম্পর্কে জেনেও এখতিয়ারবহির্ভূত তথাকথিত সমঝোতার নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।

এদিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নামে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পরও দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা না করে কমিশন আইনের প্রতি অবজ্ঞা করেছে। ওই অভিযোগে যে কোনোভাবেই হোক প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন ছিল। যারা চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ নিয়েছেন আর যারা ঘুষ দিয়েছেন– উভয়কেই গ্রেপ্তার করা দুদকের দায়িত্ব।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিষয়ে আগে থেকে সরকারের কাছে গোয়েন্দা তথ্য থাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবার তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। দুদক আইনের ১৭(গ) ধারায় দুদককে স্বউদ্যোগে যে কোনো অভিযোগ অনুসন্ধানের ক্ষমতা দেওয়া হলেও কমিশন প্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে আইনের এ নির্দেশনা পালন করেনি। কমিশন বরাবরই বড় কোনো অভিযোগের ব্যাপারে চেয়ে থাকে হাইকোর্টের দিকে। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলে তবেই কমিশনের অনুসন্ধান শুরু হয়।

জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল নয় দুদক
৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন দুদককে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থেকে দুর্নীতি দমনের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পরও সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ নেওয়ার ঘটনা অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয় ভূমিকাই লক্ষ্য করা গেছে।

সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঘুষের বিষয়টি জনসমক্ষে আসার পর দুদক কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে অভিযান পরিচালনার জন্য তাদের এনফোর্সমেন্ট টিমকে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে নির্দেশনা দিলে ঘুষ গ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার করা ও ঘুষের টাকা জব্দ করা সম্ভব হতো।

এ ব্যাপারে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি দুদকের নজরে আনা হলে কমিশন তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টির সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রী জড়িত। তিনি বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দরকার। বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কমিশন এগোবে।
এ বিষয়ে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রধান দুদক মহাপরিচালক রেজওয়ান রহমানের বক্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি শুধু ডিবির ক্ষমতার অপব্যবহার বললে হবে না। এর সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রী জড়িত। তাঁর পরামর্শ ও অংশগ্রহণেই ঘটনাটি ঘটেছে। এই অবৈধ লেনদেনের বিষয় প্রতিমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয়। ঘুষ লেনদেনের পুরো দায়টাই নিঃসন্দেহে প্রতিমন্ত্রীর। ঘুষ গ্রহণে তাঁর অংশগ্রহণ, তাঁর যোগসাজশ এবং ঘুষের ভাগীদার প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন কিনা, এটি অনুসন্ধান করা জরুরি। একই সঙ্গে যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online