প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র? জরিপ কি বলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে। গত জুলাইয়ে বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন। মূলত এরপর থেকেই ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলকান উভয় শিবিরেই নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে বেশ জোর প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে সরাসরি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। বিতর্ক সামনে রেখে দুই প্রার্থীই ইতোমধ্যে নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করেছেন বলে জানা গেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আসলে কী হবে? মার্কিন নাগরিকরা কি প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রেসিডেন্টকে বেছে নেবেন? নাকি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসাবেন?
নির্বাচনী জরিপের একটির ফলাফলে কমালা হ্যারিস এগিয়ে রয়েছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকেও নির্বাচনী দৌঁড়ে বেশ পিছিয়ে ছিলেন রিপাবলকান প্রার্থী ট্রাম্প। কিন্তু গত জুনে টেলিভিশন বিতর্কে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের খেই হারানোর ঘটনায় বেশ সুবিধা পান ট্রাম্প। পরে বাইডেনকে সরিয়ে ডেমোক্র্যাটরা হ্যারিসকে প্রার্থী করলেও দৃশ্যপটে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা।
কিন্তু নতুন একটি নির্বাচনী জরিপের ফলাফল ভিন্ন কথা বলছে। মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজের ওই জরিপে দেখা গেছে ট্রাম্পের চেয়ে জনসমর্থনে বেশ খানিকটা এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। সম্প্রতি শিকাগোতে নিজ দলের সম্মেলনের পর প্রায় ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। গত ২২ আগস্টের ওই সম্মেলনে মার্কিন নাগরিকদের জন্য নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হ্যারিস।
অন্যদিকে ট্রাম্পের পক্ষে জনসমর্থন রয়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষের। গত ২৩ আগস্ট আরেক রিপাবলকান প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে সমর্থন দেওয়ার পরও জনসমর্থনে খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ যৌথভাবে আরেকটি জরিপ চালিয়েছে, যার ফলাফল গত রোববার প্রকাশ করা হয়েছে।সেখানে বলা হচ্ছে, জনসমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। জরিপে তিনি ৪৮ পয়েন্ট পেয়েছেন। অন্যদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমলা হ্যারিস এক পয়েন্ট কম পেয়ে সামান্য পিছিয়ে আছেন।
বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ৫৯ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। আবার সিবিএস ও ইউগভের একটি জরিপের ফলাফলে ট্রাম্প ও হ্যারিসের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও নতুন এসব জরিপের ফলাফলে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ এখানে ভোটারদের কাছে প্রার্থী হিসেবে কে কতটা জনপ্রিয় সেটাই উঠে এসেছে।
তাছাড়া ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে থাকে সেখানে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া অনেক সময় কাজে নাও আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু অঙ্গরাজ্য রয়েছে যেখানে অধিকাংশ সময়ে একই দল জয়লাভ করে থাকে। তবে এমন অনেক অঙ্গরাজ্যও আছে যেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে দুই প্রার্থীর যে কেউ বিজয়ী হতে পারে। মূলত ওইসব রাজ্যের ফলাফলই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্ধারণের ক্ষেত্রে পার্থক্য গড়ে দিয়ে থাকে।
জরিপের ফলাফল বলছে, উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ৫৯ বছর বয়সী হ্যারিস। আর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে নেভাদা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা এবং অ্যারিজোনায়। এসব অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর জনসমর্থন প্রায় সমানে সমান বলে জানা যাচ্ছে।
৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার রাতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবিসি নিউজের এই বিতর্কের জন্য ইতোমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এবিসি নিউজের দুই উপস্থাপক ডেভিস মুইর ও লিনসে ডেভিসের প্রশ্নের উত্তরে তারা প্রায় ৯০ মিনিট ধরে কথা বলবেন। লাখ লাখ মানুষ মার্কিন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যকার এই বিতর্ক দেখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত জুনের শেষের দিকে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপর ভোটার জরিপে বেশ পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি দলের ভেতরেই চাপে পড়ে যান তিনি। একপর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী দৌঁড়ে যোগ দেন কমলা হ্যারিস। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাট পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান বাইডেনসহ অন্য ডেমোক্র্যাট নেতারা। সে সময় বাইডেন বলেন, গণতন্ত্রকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আমরা আমেরিকাকে রক্ষা করার জন্য লড়ছি