প্রথমবার ‘এসপিপি’ নীতিমালা জারি, সরকারি কেনাকাটা টেকসই হচ্ছে
সরকারি কেনাকাটা টেকসই করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ‘টেকসই সরকারি ক্রয় নীতি (এসপিপি) ২০২৩’ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে যুক্ত করা হয়েছে ৭টি সাধারণ বিধান। এছাড়া বলা হয়েছে, সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বিলিয়ন টাকা ব্যয় করে, যা দেশের মোট বার্ষিক বাজেটের ৪০ শতাংশের সমপরিমাণ। কিন্তু সরকারি কেনাকাটা পদ্ধতিতে এখনো টেকসই ক্রয়ের বিভিন্ন দিক বিবেচিত হয়নি। তাই এই নতুন নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১০ ডিসেম্বর জারি করা হয়েছে এ নীতিমালার প্রজ্ঞাপন। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন রোববার বলেন, এ নীতিমালার কারণে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে নানা পরিবতন ঘটবে। এখন আমরা যেভাবে দরপত্র মূল্যায়ন করি বা পণ্য ও সেবা ক্রয় করি, সেখানে আমূল পরিবর্তন আসবে। এ নীতিমালার আলোকে সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনীও আনা হবে। সেই সঙ্গে ই-জিপি গাইডলাইনেও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করছি, নীতিমালা অনুসরণ করে কেনাকাটা করা হলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কার্যকর সরকারি ক্রয় জনগণের কাছে যথাসময়ে মানসম্পন্ন সরকারি সেবা সরবরাহ নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি। সরকারি ক্রয় এবং বিদ্যমান আইনি কাঠামো অনুশীলনের ক্ষেত্রে কিছু ‘মান’ যাচাইয়ের মাধ্যমে সর্বনিম্ন মূল্য চুক্তি অনুসরণ করা হয়। সর্বনিম্ন মূল্য চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যগুলোর সর্বাধিক সুবিধা নিশ্চিত নাও করতে পারে। কারণ, প্রথাগত ক্রয় এবং ক্রয়ের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবেচনা করে না। সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে এখনো টেকসই ক্রয়ের বিভিন্ন দিক (সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও পরিচালন) বিবেচিত হয়নি। প্রত্যাশিত যে টেকসই ক্রয়ের দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত এবং ‘সমগ্র জীবনচক্র ব্যয়’ (ডব্লিউএলসিসি) বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী সুবিধাজনক দরপত্র নির্বাচন সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে। সরকারি টেকসই ক্রয় নীতিমালার আলোকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ক্রয় সেবা দেবে। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে সেগুলো হলো-টেকসই ক্রয়বিষয়ক (সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ) জ্ঞানের বিকাশ।
টেকসই কর্মসূচির বিষয়ে কার্যকরভাবে সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি। সরবরাহ ব্যবস্থায় টেকসইবিষয়ক এজেন্ডার দৃশ্যমানতা ও উপলব্ধির বিকাশ এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ ও টেকসই সরবরাহ সক্রিয়ভাবে পরিচলনা, পরিবীক্ষণ ও প্রতিবেদন করার জন্য চুক্তি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করা।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি ক্রয় তখনই টেকসই বলা যাবে, যখন এটি টেকসই সরকারি ক্রয় চাহিদা, কারিগরি বিনির্দেশ এবং মানদণ্ডগুলোকে একীভূত করবে, যা সম্পদের কার্যকারিতা, পণ্যের মান ও সেবার গুণগতমান বৃদ্ধি এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে সামগ্রিক ব্যয় সমন্বয় করার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিপিটিইউ-এর সাবেক মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন রোববার বলেন, এ পলিসি থাকার কারণে এখন আর দরপত্রের স্পেসিফিকেশন আগের মতো সাদামাটা তৈরি করা যাবে না। স্পেসিফিকেশন তৈরির সময়ই থাকতে হবে পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে যেন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব না পড়ে। এতে পণ্যের দাম হয়তো একটু বেশি দিয়ে কিনতে হবে; কিন্তু সেটি টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই করতে হবে। এজন্য উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, ক্রয়কারী সংস্থা এবং অর্থ বরাদ্দকারীর মধ্যে একটি চেইন তৈরি করতে হবে। কেননা যারা পণ্য দেবেন, তাদের পণ্যও টেসকই হতে হবে। অর্থাৎ পরিবেশ ও সমাজবান্ধব হতে হবে। এক্ষেত্রে কিনতে গেলে দামটাও বেশি দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো-সরকারি কেনাকাটা যদি টেকসই না হয়, তাহলে উন্নয়নও টেকসই হবে না। সেজন্য এ নীতিমালা খুবই যুগোপযোগী হয়েছে। নীতিমালায় যুক্ত করা সাধারণ বিধানগুলো হলো-সরকারি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম করতে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) নীতিমালা প্রণয়ন করছে।
ক্রয়কারী (পিই) টেকসই সরকারি ক্রয় নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং এই নীতির আলোকে (বিভিন্ন সময়ে) নির্ধারিত ও উদ্ভাবিত মাপকাঠি অনুযায়ী টেকসই সরকারি ক্রয় সম্পন্ন করবে। সব ক্রয়কারী টেকসই সরকারি ক্রয়ের জন্য উপযুক্ত শৃঙ্খলা এবং সব সংস্থায় প্রয়োগকৃত যে কোনো অসংগতি আইনি বা নীতিগত শর্ত নিশ্চিত করবে। টেকসই সরকারি ক্রয় টেকসই সংক্রান্ত তিনটি স্তম্ভ যথা: পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নীতি মেনে চলবে। টেকসই সরকারি ক্রয় এমনভাবে পরিচালিত হবে, যা জবাবদিহিতা, ন্যায্যতা, প্রতিযোগিতা, সমানুপাতিকতা এবং স্বচ্ছতাকে উৎসাহিত করে। টেকসই সরকারি ক্রয়নীতি প্রয়োগের সময় অর্থের সর্বোত্তম উপযোগিতা প্রধান বিবেচ্য হবে। এছাড়া টেকসই সরকারি ক্রয়নীতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা এবং আদর্শ ছক এ নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং তা সিপিটিইউ-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।