প্রথম সপ্তাহেই ট্রাম্পকে কেন ‘গডজিলা’ মনে হচ্ছে
দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরে একটি অনন্যসাধারণ প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বকে নাড়া দিয়েছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ সময়ে তাঁকে দেখা গেছে মার্কিন রাজনৈতিক জগৎকে নিজের আদলে পুনর্নির্মাণ করতে।
ট্রাম্প তাঁর দায়িত্বের প্রথম দিন ইতিহাসের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি নির্বাহী আদেশে সই করেন। মার্কিন সরকারের প্রতিটি শক্তিকেন্দ্রের ওপর তিনি তাঁর ক্ষমতা কায়েম করেছেন।
ট্রাম্প তাঁর দায়িত্বের প্রথম দিন অনেকগুলো নির্বাহী আদেশে সই করেন
এর পর থেকে তিনি আপাতদৃষ্টে সর্বত্রই আছেন। তিনি তাঁর ইচ্ছা এবং ‘স্বর্ণযুগ’ সম্পর্কে নিজের রক্ষণশীল-জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণা আরও চাপিয়ে দেওয়ার জন্য একযোগে সবকিছু করছেন।
ট্রাম্পের মোদ্দাকথাটি হলো: প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছে।
২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গাকারীদের জন্য গণহারে ক্ষমা ঘোষণা থেকে শুরু করে অভিবাসন, জেন্ডারসহ বহু বিষয়ে ট্রাম্পের দিস্তা দিস্তা নির্বাহী আদেশ সে কথাই বলছে।
ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের কাছ থেকে আসা কথায় রাজকীয়, এমনকি ঐশ্বরিক ক্ষমতার ভাব আছে।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য ঈশ্বর একটি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা থেকে তাঁকে রক্ষা করেছেন। তিনি তাঁর অভিষেকের একটি অনুষ্ঠানে তরবারি নিয়ে নাচ করেছেন।
ট্রাম্পের সহযোগী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। তিনি ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনকে ‘রাজার প্রত্যাবর্তন’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন।
ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই মার্কিন সরকারের প্রতিটি অংশের ওপর তাঁর ক্ষমতা সুসংহত করেন
বিশ্বমঞ্চে ট্রাম্পের প্রভাবও অনেক বেশি দেখা গেছে। কারণ, তিনি ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সম্প্রসারণের হুমকি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিটিকসের পরিচালক ল্যারি সাবাতো বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, নতুন মেয়াদের শুরুতে নিজের বিস্ময়কর পুনরুত্থানের তেজে উদ্দীপ্ত ট্রাম্পকে দেশ-বিদেশে গডজিলা বলে মনে হচ্ছে।
‘আমরা পুরোদমে ফিরে এসেছি’
ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার আগমন কী নিয়ে আসবে, সে বিষয়ে তাঁর সমর্থক ও সমালোচকদের মধ্যে কোনো সন্দেহ থেকে থাকলে গত সোমবার ওভাল অফিসে একটি কালো মার্কারের কয়েক খোঁচায় তা ঘুচে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে অভিষেকের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প ১ হাজার ৫০০ দাঙ্গাবাজের ক্ষমার আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন।
এই দাঙ্গাবাজেরা সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ট্রাম্পের নির্বাচনী পরাজয়ের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় চার বছর আগে একই ভবনে হামলা করেছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ছিল মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া পরিবর্তনের একটি ঢলের শুরু মাত্র।
প্রথম সপ্তাহে বিশ্বমঞ্চেও ট্রাম্পের প্রভাব অনেক বেশি দেখা গেছে
রিপাবলিকান ট্রাম্পের আদেশের জেরে একটি দীর্ঘ প্রতিশ্রুত অভিবাসনবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। জন্মগত নাগরিকত্ব বাদ দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন সরকার শুধু দুটি লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেবে।
বৈচিত্র্য-সমর্থক সব সরকারি উদ্যোগ ও কর্মচারীদের ট্রাম্প ছেঁটে ফেলেছেন। তারপর অভ্যন্তরীণ সব নজরদারিকে ঝেড়ে ফেলেছেন, যাতে তাঁর আদেশ চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ আর না থাকে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বের করে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই এক সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের বারান্দায় বারবার শোনা গেছে, ‘আমরা পুরোদমে ফিরে এসেছি।’
ট্রাম্পের মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, যেকোনো প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার ১০০ দিনে যা না করেন, ট্রাম্প ১০০ ঘণ্টায় তার চেয়ে বেশি করে দেখিয়েছেন।
বিশৃঙ্খলা-কোন্দলের পরিবর্তে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনগুলোতে সতর্ক পরিকল্পনা, ইস্পাতের মতো শৃঙ্খলা ও ব্যাপক আলোচনা-চালাচালির প্রকাশ ঘটেছে।
আন্তর্জাতিকভাবে ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতার প্রথম সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের একটি বিশাল পর্দায় হাজির হন। সেখানে তাঁর এ উপস্থিতি সমবেত বৈশ্বিক অভিজাতদের উপস্থিতিকে ছাপিয়ে যায়।
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনকে ‘রাজার প্রত্যাবর্তন’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন ইলন মাস্ক
ট্রাম্প অন্য দেশগুলোকে বলেছেন, হয় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরি করো, নয়তো শুল্কের মুখোমুখি হও।
সপ্তাহজুড়ে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড ও পানামা জবরদখলের হুমকি আওড়ে গেছেন। তিনি গ্রিনল্যান্ড ও পানামার সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। উল্টো দিকে জোর গলায় যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কথা বলে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক পিটার লোগ বলেন, ‘ট্রাম্প বলছেন, নিয়ন্ত্রণ আমার হাতেই আছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিটিকসের পরিচালক ল্যারি সাবাতো বলেন, ট্রাম্প তাঁর এই মেয়াদে তথাকথিত সাম্রাজ্যতুল্য প্রেসিডেন্সি পুনরুদ্ধার করতে চাইবেন, যা ১৯৩০-এর দশকে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট থেকে ১৯৭৪ সালে রিচার্ড নিক্সনের পতন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।