USA

প্রথম সাক্ষাৎকারে সাবধানী ছিলেন কমলা হ্যারিস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যেটিক পার্টি থেকে প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম সম্প্রচারমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কমলা হ্যারিস। সিএনএনকে দেওয়া তাঁর সে সাক্ষাৎকারকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথম সাক্ষাৎকারে তাঁর ভূমিকা কেমন ছিল তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ।

বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাক্ষাৎকারের সূচনাপর্বটি শক্তিশালী ছিল না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলে প্রথম দিন কী করবেন, সে সম্পর্কে কথা বলতে কমলাকে হোঁচট খেতে হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের জবাব জটিল, বিশদ ও বিভ্রান্তিমূলকভাবে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় কমলা হ্যারিসের মধ্যে। এতে বিরোধীরা তাঁকে নিয়ে বিদ্রূপ করে বলেন, ‘ওয়ার্ড সালাদস’ (শব্দের সালাদ)। যদিও সাক্ষাৎকারে এটি বড় কোনো বিষয় ছিল না। তবু, প্রশ্নের জবাব আরও সংক্ষেপে দিলে সেটি হতো তাঁর নৈপুণ্যেরই প্রদর্শন। যেমন, অর্থনীতি থেকে শুরু করে ভূমি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাধারণ ও শ্রমজীবী মার্কিনিদের জীবন সহজতর করতে তিনি কী করতে চান, সেটি তুলে ধরতে পারতেন।

রানিং মেট টিম ওয়ালজকে সঙ্গে নিয়ে সিএনএনের সাক্ষাৎকারে অংশ নেন কমলা। এ সময় কমলাকে শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী বলে মনে হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় কমলা নিজের কোনো লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেননি।

গত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে প্রার্থিতা চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন কমলা। তখন থেকে এ পর্যন্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালার বিষয়ে তাঁর অবস্থানের পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে কমলা বলেন, তাঁর মূল্যবোধ পাল্টায়নি। এরপর কমলা আশ্বস্ত করেন, তিনি আর প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য ফ্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা অবৈধ অভিবাসনকে অপরাধের আওতামুক্ত বিবেচনা করাকে সমর্থন করেন না।

সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে কমলা নমনীয় বলে রিপাবলিকানরা যে অভিযোগ করে আসছেন, সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় কৌঁসুলি হিসেবে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। নির্বাচনী সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার সময়ও কমলাকে প্রায়ই এ অভিজ্ঞার কথা বলতে শোনা যায়। সমাবেশে কমলা প্রায়ই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ থাকা প্রসঙ্গেও কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারের সঞ্চালক ডানা ব্যাশকে কমলা বলেন, ‘আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে বন্দুক, মাদক ও মানবপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তদেশীয় অপরাধী সংগঠনগুলোর বিচার করেছি। আমিই এ প্রতিযোগিতায় থাকা একমাত্র ব্যক্তি; যাঁর সীমান্তবর্তী অঙ্গরাজ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আইন প্রয়োগের অভিজ্ঞতা আছে।’

অভিবাসী ইস্যু

এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিবাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে কমলা বেশি গুরুত্ব দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটারদের অনেকে অভিবাসনসংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন; যদিও দক্ষিণ সীমান্তে অনথিভুক্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উচ্চ হার ঠেকাতে বাইডেন প্রশাসনকে খুব কমই উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে।

কমলা হ্যারিসকে বিশেষ করে মধ্য আমেরিকান অভিবাসন সংক্রান্ত মূল কারণগুলো মোকাবিলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাইডেন। তবে রিপাবলিকানদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের প্রবেশের হার বেড়ে যাওয়ার জন্য কমলা দায়ী। তাঁরা কমলাকে ‘সীমান্ত জার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারে কমলা বলেন, বাতিল হয়ে যাওয়া সীমান্ত সুরক্ষা বিলটি তিনি নতুন করে উত্থাপন করবেন। তাঁর দাবি, প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া বিলটি সিনেটে ট্রাম্পের কারণে বাতিল হয়েছে। কারণ, ট্রাম্প রিপাবলিকানদের বলেছিলেন, তাঁরা যেন এ বিলে সমর্থন না দেন। কেননা, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ভেবেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন যদি অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় তবে তা রাজনৈতিকভাবে তাঁকে (ট্রাম্প) ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বাস্তবে, রিপাবলিকানদের ওই পদক্ষেপ ডেমোক্র্যাটদের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে। কেন অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার ঠেকাতে বাইডেন প্রশাসনের কেন এত সময় লাগছে, সেই প্রশ্ন উঠলে রিপাবলিকানদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিতে পারছেন তাঁরা। কমলা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি আবারও আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেবেন।

বাইডেন প্রশাসনের দায়

৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী কয়েক সপ্তাহ কমলা ব্যস্ত প্রচার চালিয়ে যাবেন। এ সময় তাঁকে সাবধানে পথ চলতে হবে। তাঁকেই ঠিক করতে হবে যে প্রচারে তিনি কি বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের ভূমিকার কথা বলবেন, নাকি নিজেকে পরিবর্তনকামী প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করবেন।

তবে সাক্ষাৎকারে কমলাকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি অনুগত থাকতে দেখা গেছে। বাইডেন প্রশাসনের নীতিমালা থেকে নিজেকে আলাদা করার চেষ্টা করেননি তিনি। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, পেনশনভোগীদের চিকিৎসাপত্রে উল্লিখিত ওষুধের খরচ কমাতে তিনি যদি কৃতিত্ব নিতে চান, তবে তাঁকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির দায়ও নিতে হতে পারে। এ জায়গায় খুব কৌশলে এগোতে হবে তাঁকে।

কমলার প্রচারশিবির প্রায়ই একটা কথা বলে থাকে। তা হলো, ‘আমরা পেছনে ফিরছি না।’ সাক্ষাৎকারে কমলা বাইডেনের প্রতি তাঁর আনুগত্য দেখালেও বারবারই বলছিলেন, ‘গত দশকের পাতা ওলটানোর এটাই সময়।’ এর পর এটি ব্যাখ্যা করে কমলা বলেন, এক দশক বলতে তিনি এক দশকের তিক্ততা ও বিভক্তির কথা বলেছেন, বাইডেন-কমলা প্রশাসনের সাড়ে তিন বছরের শাসনব্যবস্থার কথা বলেননি।

ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে অবস্থান

কমলা হ্যারিসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এমন কোনো আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া ট্রাম্পের জন্য কঠিন। তাই কমলাকে নিয়ে অপমানসূচক কথা বলে থাকেন তিনি। ট্রাম্প তাঁর (কমলার) বর্ণপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, কমলা এখন কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচিত হতে চাইছেন।

এ প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে কমলা বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প সেই পুরোনো, গৎবাঁধা কথাবার্তা বলছেন। ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে সরাসরি না জড়ানোটা নিশ্চিতভাবেই কমলার একটি কৌশল।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারীর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা নিয়ে খুব কম কথাই বলেছেন কমলা। সিএনএনকে কমলা বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, বর্ণ-লিঙ্গনির্বিশেষে তিনি কাজটি করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য।

কমলার সাক্ষাৎকারের বিষয়ে ইতিমধ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প এক শব্দে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘একঘেয়ে।’

এদিকে, কমলার প্রচারশিবির তাঁর সাক্ষাৎকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button