USA

প্রথম ১০০ দিনে ট্রাম্প সফল নাকি বেশি দ্রুত চলছেন, কী বলছেন তাঁর সমর্থকেরা

নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভোটে জয়ী হয়ে এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন ট্রাকচালক, অবসরে যাওয়া ব্যক্তি, ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকেই।

গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে ট্রাম্প যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে কতটা সমর্থন আছে তাঁর কট্টর সমর্থকদের? ট্রাম্প তাঁর প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ করতে পেরেছেন বলে তাঁদের মনে হয়? তাঁরা কি এখনো ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক হয়েই আছেন, নাকি তাঁদের মনে হচ্ছে, তাঁরা ভুল করেছেন?

এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বিবিসি ট্রাম্পের পাঁচজন সমর্থকের সঙ্গে কথা বলেছে, যাঁরা সর্বশেষ নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ করেছেন, কতটা বাকি আছে বা তাঁরা ট্রাম্পের কাছে এরপর কী চান, সেসব নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা।

‘যদি এটা কাজ না করে, আমি বলব এটা ভুল ছিল’

লুইজ অলিভেরা বলেছেন, ট্রাম্প তাঁর প্রথম ১০০ দিনে দ্রুত যেসব কৌশলগত পরিবর্তন এনেছেন, তিনি সেগুলোর সঙ্গে আছেন। বিশেষ করে অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্প যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রশংসা করেন লুইজ। ট্রাম্প সীমান্তে নতুন করে বিধিনিষেধের ঝড় তুলেছেন এবং অভিবাসী বিতাড়ন প্রক্রিয়ার গতি বাড়িয়েছেন। ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের এমনকি এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারেও পাঠাচ্ছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘাত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিষয়গুলো লুইজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮০ সালে ব্রাজিল থেকে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন লুইজ। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডাতে বসবাস করেন, বয়স ৬৫ বছর। ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনিও বলেন, সম্প্রতি অভিবাসীরা যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছিলেন, সেটা ‘আক্রমণের’ সমান।

লুইজ মনে করেন, ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বলছেন, এটা আমাদের বাড়ি, আমাদের আঙিনা এবং আপনারা এখানে থাকতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘাত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।

তবে অভিবাসন নীতিতে খুশি হলেও ট্রাম্পের কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে অস্বস্তিতেও ভুগছেন লুইজ। তিনি একটি কফির দোকানের মালিক। বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার কথা বলে ট্রাম্প সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দেশের ওপর যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন লুইজ।

লুইজ বলেন, ‘এটা যন্ত্রণাদায়ক হতে চলেছে। তবে আমার মনে হয় না, তিনি (ট্রাম্প) যেভাবে বলছেন ততটা দ্রুতগতিতে এটা কার্যকর হবে। আমি তাঁর একজন সমর্থক। তবে দিন শেষে, যদি এটা কাজ না করে তবে আমি বলব, এটা একটি ভুল—তিনি খুবই দ্রুত সবকিছু করছেন, বাজারে ভয় ধরিয়েছেন, অর্থনীতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছেন।’

তিনি ‘মেধাভিত্তিক সমাজ’ পুনরুদ্ধার করছেন

২০২৪ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন আমান্ডা সু ম্যাথিস। এই নারীর মনে হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো একমাত্র ট্রাম্পই সমাধান করতে পারবেন। ট্রাম্পের ১০০ দিন সামনে রেখে আমান্ডার মনে হয়েছে, ট্রাম্প নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সাবেক এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে চিন্তিত। তবে আমার মনে হয়, এবার আমাদের নিজের দেশের দিকে তাকানোর সময় হয়েছে। অন্যান্য দেশের সমস্যা ঠিক করতে যাওয়ার আগে আমাদের নিজেদের সমস্যার সমাধান করা দরকার।’

আমান্ডা ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সমর্থন করেন। সর্বোপরি তাঁর মনে হয়, ট্রাম্প সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং তাঁর প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রমে একজন ভোটার হিসেবে তিনি খুশি।

তবে আমান্ডা নিজেকে ট্রাম্পের অন্ধভক্ত মানতে নারাজ। আমান্ডা বলেন, ‘যদি তিনি (ট্রাম্প) জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেন, তবে আমিই প্রথম আপনাকে সেটা বলব।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন

শুল্কের মাধ্যমে ট্রাম্প ‘সম্মান ফিরিয়ে এনেছেন’

ট্রাম্প শুল্ক আরোপ ও উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মূলত এ কারণে বেন মাউরার ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। ৩৯ বছর বয়সী বেন মাউরার পণ্যবাহী ট্রাকের চালক, থাকেন পেনসিলভানিয়ায়।

বেন মাউরার বলেন, ‘অনেক মানুষ ভেবেছিলেন, বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তিনি (ট্রাম্প) ধাপ্পাবাজি করছেন। কিন্তু ট্রাম্প দ্রুত তাঁদের সেই ভুল ভেঙে দিয়েছেন।’

ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর মতো মিত্রদেশ থেকে শুরু করে চীনের মতো প্রতিপক্ষ দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। এসব দেখে দারুণ আনন্দিত বেন।

এটা যন্ত্রণাদায়ক হতে চলেছে। তবে আমার মনে হয় না, তিনি যেভাবে বলছেন, ততটা দ্রুতগতিতে এটা কার্যকর হবে। আমি (তাঁর) একজন সমর্থক। তবে দিন শেষে, যদি এটা কাজ না করে, তবে আমি বলব, এটা একটি ভুল—তিনি খুবই দ্রুত সবকিছু করছেন, বাজারে ভয় ধরিয়েছেন, অর্থনীতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছেন।

লুইজ অলিভেরা, ট্রাম্পের সমর্থক ও ভোটার

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়া নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে বেন বিশ্বাস করেন, তিনি যে কাজ করেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে দীর্ঘ মেয়াদে তিনি লাভবান হবেন।

বেন বলেন, ‘ট্রাম্প (যুক্তরাষ্ট্রের) জন্য সম্মান ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা এখনো এমন শক্তি, যাদের গোনায় ধরতে হবে।’

এমনকি বেন মনে করেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প দারুণ শুরু করেছেন। কারণ, তিনি প্রস্তুত হওয়ার সময় পেয়েছেন এবং এটা এখন দেখা যাচ্ছে।

‘মাস্ককে আমি বুঝতে পারছি না’

ট্রাম্পের বিষয়ে জুন কেরির অবস্থান এখনো একই আছে। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম কয়েক মাসে জুনের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

৭০ বছর বয়সী জুন একজন শিল্পী, থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। এই নারী বলেছেন, তিনি ইলন মাস্ককে নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না।

মাস্ক প্রসঙ্গে কেরি বলেছেন, ‘মাস্ক এমন একটি চরিত্র, যাকে আমি বুঝতে পারছি না। তবে আমি মনে করি, ট্রাম্প তাঁকে যতটা ভরসার মনে করেন, যদি তাঁর ওপর ততটা আস্থা রাখতে পারেন, তবে তিনি নিশ্চয়ই ভালো মানুষ, যাঁর ভালো পরিকল্পনা ও ভালো লক্ষ্য আছে।’

ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সমর্থন করেন আমান্ডা। সর্বোপরি তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রমে তাঁর একজন ভোটার হিসেবে তিনি খুশি।

শুল্কের ‘সাময়িক কষ্টেও’ ট্রাম্পের ওপরই আস্থা

বহু বছর ধরে বিশ্বস্ততার সঙ্গে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন জেরেমি স্টিভেন্স। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প নির্বাচনে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, খুবই আক্রমণাত্মকভাবে সেগুলো পূরণের পথে অগ্রসর হচ্ছেন।’

মেইনে জেরেমির গাড়ির গ্যারেজ ও ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রির দোকান আছে। তাঁর দোকানে আসা ক্রেতাদের অনেকের মধ্যে তিনি ট্রাম্পের অর্থনীতি বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখেছেন।

৪৫ বছর বয়সী জেরেমি মনে করেন, শুল্ক নিয়ে তাঁদের যে উদ্বেগ, তা আসলে ভুল–বোঝাবুঝি থেকে।

জেরেমি মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন যে শুল্ক আরোপ করেছে, তা দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল দেবে।

ট্রাম্পের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে মূল্য চুকাতে হবে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদেরা, বিশ্বজুড়ে বাজারগুলোতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে জেরেমি এখনো বিশ্বাস করেন, সময়ই বলে দেবে ট্রাম্প সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ যন্ত্রণা সাময়িক। এটা কেটে যাবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto