Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

প্রদীপের নিচে অন্ধকার খবর রাখে না কেউ বেঁচে থাকার সংগ্রামে রাজধানীর বস্তিবাসী

চোখের সামনে অভিজাত শহরের ঝলমলে আলো। তবে এই আলো সবার জন্য নয়। ভাগ্যের দৌড়ে পিছিয়ে পড়া কিছু মানুষের নাম ‘বস্তিবাসী’। বিত্তবানদের বড় বড় দালানের পাশে খুপরি বানিয়ে তারা যে জীবন পার করছেন, এ জীবন যেন এক চোখে দুই দৃষ্টি-ধনী-গরিবের বৈষম্যের ঠিকানা। এক শহরেই বাস। অথচ জীবন তাদের কত নিচে নামাতে পারে, বড় নজির বস্তির জীবন। পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, প্রায় তিন কোটি মানুষের রাজধানী ঢাকায় ৪০ লাখেরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত বস্তিবাসী। ‘বস্তিবাসী’ ট্যাগ তাদের ললাটে যে লেগেছে, তা থেকে আজও বের হতে পারেননি। না পেরেছে কোনো সরকার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে, না পেরেছে কোনো বেসরকারি সংস্থা কিংবা এনজিও।

উলটো এই বস্তিজীবনের সঙ্গে যুক্ত দিনমজুর ও গরিব মানুষকে নিয়ে জমজমাট ব্যবসা করে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, পাতি নেতা, বিদ্যুৎসহ সেবা খাতের কিছু অসাধু লোক, এমনকি থানা-পুলিশের নামও আছে জড়িয়ে। বস্তিকেন্দ্রিক মাদক, চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতরা পায় সুবিধাভোগী দাপটশালীদের আশকারায়। কারণ, বস্তি ঘিরে অবৈধ ব্যবসার সুফল ভোগ করেন তারা। দায় যায় বস্তিবাসীর কাঁধে। ফলে সমাজ তাদের বাঁকা চোখে দেখার যে রেওয়াজ চালু করেছে, সেটি দশকের পর দশক চলছে। যুগান্তরের তরফ থেকে ঢাকার কয়েকটি বস্তির সরেজমিন যে বিবর্ণ চিত্র উঠে এসেছে, তা কষ্টের, বেদনার। সমাজতাত্ত্বিকরা বলেন, আমরা বস্তিবাসীকে বাঁকা চোখে দেখি, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়েছে। কিন্তু এ জীবনের আড়ালে এক দেশে জন্ম নেওয়া মানুষ কীভাবে নাগরিক হয়ে উঠতে পারেননি, তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। এ জীবন থেকে বের করে তাদের সুস্থধারার জীবন দেওয়ার জন্য কেউ কাজও করেনি। তারা দেশের নাগরিক সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার আলো পৌঁছেনি তাদের ভাঙা ঘরে। ফলে তারা হয়ে আছেন তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বস্তিবাসীর একটা বড় অংশ নদীভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্ব হারিয়ে এক কাপড়ে এই নগরে এসে ঠাঁই নিয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে হতভাগ্য এসব মানুষ বড়লোকদের পাশে আশ্রয় নেয়। বেশির ভাগ বস্তিতে নেই ‘বৈধ’ বিদ্যুৎ সংযোগ, ‘বিশুদ্ধ’ পানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। উলটো উচ্ছেদ, ঘনঘন অগ্নিকাণ্ডসহ নানারকম ভয়-আতঙ্কে কাটে তাদের দিন। এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের ২০২৪ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৮৪ শতাংশ বস্তিতে নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, ৬৭ শতাংশ এলাকায় নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা এবং ৫৪ শতাংশ পরিবার নিয়মিত পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যায় ভুগছে।

নিউট্রি-ক্যাপের প্রধান গবেষক মোস্তফা মাহফুজ বলেন, বস্তির শিশুদের ৫৯ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। শিশুদের ২৭ শতাংশের উচ্চতা এবং ২০ শতাংশের ওজন কম। বস্তির ৯১ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত। বস্তির প্রতি চার পরিবারের একটি খাদ্য সংকটে ভোগে। গর্ভবতী মায়েরাও নানা শারীরিক সমস্যয় ভোগেন।

বস্তিশুমারি ২০১৪-এর পরিসংখ্যানে জানা যায়, রাজধানীতে ৩ হাজার ৩৯৪টি বস্তি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৬৩৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৭৫৫টি। বস্তিবাসীর মূল পেশা রিকশা-ভ্যান চালানো। ১৬.৮০ শতাংশ মানুষ এ পেশায় জড়িত। ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৫.৭১, পোশাক কারখানার কর্মী ১৪.৩৫, সেবা খাতের ওপর নির্ভরশীল ১৪.৩৩, নির্মাণ শ্রমিক ৮.৩৮, কুলি বা দিনমজুর ৮.২৭, পরিবহণ শ্রমিক ৮.৩৮ এবং ৬.১১ শতাংশ বস্তিবাসী অন্যান্য কাজ আয়ের প্রধান উৎস।

রংপুরের রত্না বেগম। নির্যাতনকারী স্বামীর সঙ্গে ১৪ বছর আগে ছাড়াছাড়ি হয় তার। বাবার সংসারেও অভাব। এক আত্মীয়ের হাত ধরে পাড়ি জমান ঢাকায়। মিরপুর রূপনগরের ঝিলপাড় চলন্তিকা বস্তিতে হয় ঠাঁই। শুরু করেন গৃহকর্মীর কাজ। পাবনার রোকেয়া বেগমের গল্পও একইরকম। স্বামী মারা যাওয়ার পর চোখে-মুখে দেখেন অন্ধকার। এর মধ্যে নদীগর্ভে চলে যায় ভিটেমাটি। দুই মেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমান ঢাকায়। মিরপুর পল্লবীর একটি বস্তিতে থেকে গার্মেন্টে কাজ করেন মা-মেয়ে তিনজন। এরকম অসংখ্য গল্প লুকিয়ে আছে ঢাকার বস্তিজীবনের পরতে পরতে। পল্লবীর কালাপানি বস্তির বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, বস্তিবাসী বলে আমাদের দিকে নজর নেই এই শহরের কারও। অথচ বস্তি থাকার কারণে শহরের বড়লোকদের বাসার কাজের লোক পেতে সমস্যা হয় না। ওই বস্তির পাশের একটি উঁচু ভবনের বাসিন্দা জোহরা পারভীন বলেন, এই বস্তির মানুষই আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে। বস্তিকে ঘিরে অপরাধের ঘটনাও ঘটে-এমন তথ্যও জানান তিনি।

বিশ্লেষকরা বলেন, বস্তির বেশির ভাগ মানুষ নিরীহ ও পরিশ্রমী। তবে পরিস্থিতির চক্করে পড়ে অপরাধে জড়ায় তাদের একটি অংশ। বস্তির শ্রমজীবী মানুষকে অবহেলার চোখে দেখা হলেও তারাই মূলত শহরের চাকা সচল রাখে। জীবিকার তাগিদে এসব মানুষ বাস-ট্রাক, রিকশা ও বেবি-ট্যাক্সি চালান। গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকের চাকরি, রাজমিস্ত্রি, গৃহকর্মী, ফুটপাতে দোকানসহ নিম্ন-আয়ের পেশায় যুক্ত হন। তাদের পরিশ্রমের সেবা ভোগ করেন নাগরিকরা। আইসিডিডিআর,বি’র এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বস্তির বেশির ভাগ জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। বাকিটা সরকারি সম্পত্তি। মিরপুরের বাউনিয়াবাদ বস্তির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। বাকি জমি সরকারের। মিরপুরে বাউনিয়া বস্তিতে ১৬ হাজার ৫৩২টি পরিবারের বসবাস। ওই বস্তির জনসংখ্যা ৬০ হাজার। আইসিডিডিআর,বি’র ওই গবেষণায় আরও বলা হয়, ঢাকার বস্তিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজার মানুষ বাস করে। ৮০ শতাংশ পরিবার এক কক্ষের ঘরে থাকে। ৯০ শতাংশ পরিবার টয়লেট ও সরবরাহকৃত পানি ভাগাভাগি করে।

আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে শহরের প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে। কিন্তু স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের ফাঁকে পড়ে তারা মৌলিক সেবা থেকেও বঞ্চিত।

সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, বস্তিবাসীর পারিশ্রমিকের বড় অংশ চলে যায় ‘বস্তির মালিক’ ও ‘সিন্ডিকেটের’ হাতে। ঘর ভাড়াসহ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অবৈধ বিলের নামে একেকটি বস্তি থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা তোলা হয়। ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে যায় এই টাকা। জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে শুধু মুখ (ফেস) পরিবর্তন হয়েছে। বদলায়নি বস্তিকেন্দ্রিক দুর্বৃত্তপনা। বস্তির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। রূপনগরের চলন্তিকা বস্তি, বনানীর কড়াইল বস্তি, মহাখালীর সাততলা বস্তি, ভাষানটেক বস্তি, পল্লবীর শহীদবাগ কালাপানি বস্তি, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি বস্তিসহ বিভিন্ন বস্তিতে সরেজমিন ঘুরে এমন তথ্যই মিলেছে। নগরীর বিভিন্ন বস্তি আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদারদের আশ্রয়স্থল হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে।

ভাড়াটে খুনিরাও নানা অপকর্ম করে এসে আশ্রয় নেয় বস্তির খুপরি ঘরে। এছাড়া বস্তিকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসার জাল ছড়িয়ে আছে। রয়েছে ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য। এসব অপরাধের সঙ্গে বস্তির লোকজনকে জড়িত করে সুবিধাভোগীরা।

রূপনগরের ঝিলপাড় চলন্তিকা বস্তিতে সরেজমিন দেখা যায়, কয়েক হাজার পরিবার বাঁশের মাচার ওপর তৈরি করা টিনের ঘরে বসবাস করছেন গাদাগাদি করে। ছোট ছোট একেকটি ঘরে থাকছে তিন থেকে ৬-৭ সদস্যের পরিবার। ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষা বলতে কিছুই নেই তাদের। আলতাফ মিয়া পেশায় রিকশাচালক। দুই ছেলে, দুই মেয়ে, স্বামী-স্ত্রীসহ ৬ সদস্যের পরিবার তার। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে। একসঙ্গে থাকলে লজ্জা লাগে। কিন্তু কী করব। সামর্থ্য নেই আরেকটি ঘর ভাড়া করার। তিনি জানান, একটি ঘরের ভাড়া গুনতে হয় তিন হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে জীবনের হিসাব মেলানো কঠিন।

কালশী পূর্ববস্তিতে পরিবার নিয়ে থাকেন সিরাজগঞ্জের পারভিন বেগম। তিনি জানান, মা মারা যাওয়ার পর ১২ বছর বয়সে এক আত্মীয়ের সঙ্গে ঢাকায় আসেন তিনি। এরই মধ্যে সংসার হয়েছে। আছে ৬ ছেলে-মেয়ে। তাদের নিয়ে এই বস্তিতে বসবাস করেন তারা। পারভিন বেগম ও তার স্বামী চায়ের দোকান চালিয়ে সংসারের চাকা ঘুরান। তিনি বলেন, আমরা বস্তিবাসী শুধু কাজ আর কষ্ট করি। আমাদের কি কেউ মানুষ মনে করে?

সরেজমিন প্রতিটি বস্তিতেই দেখা যায়, ময়লা-আবর্জনার ভিড়ে হারিয়ে গেছে হাঁটার পথও। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অসুখবিসুখও পিছু ছাড়ে না ছিন্নমূল মানুষগুলোর। কলেরা-টাইফয়েড, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ সব সময় লেগেই থাকে এখানে। কালাপানি বস্তির আমেনা বেগম বলেন, বস্তির আশপাশে কোনো মেডিকেল নেই, যে কারণে অসুস্থ হলে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। সরকারি হাসপাতালে গেলেও লাইন ধরতে হয়।

বস্তিশুমারির তথ্য বলছে, সাত কারণে লোকজন এসে আশ্রয় নেন। কেউ নদীভাঙনের শিকার, কেউ কাজের সন্ধানে, তালাকপ্রাপ্ত নারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার মানুষ, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা কিংবা পরিবার ও সমাজ থেকে বিতাড়িত মানুষ। এছাড়া অন্যান্য কারণেও লোকজন বস্তিতে এসে আশ্রয় নেন। জরিপে দেখা যায়, কাজের সন্ধানে ৫০.৯৬, দারিদ্র্যের কারণে ২৮.৭৬, অন্যান্য কারণে ৯.৪১, নদীভাঙনে ৭.০৪, নিরাপত্তাহীনতা কিংবা বিতাড়িত ২.১৫, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ০.৮৪ এবং তালাকপ্রাপ্ত হয়ে ০.৮২ শতাংশ বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, বস্তির অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সব ক্রাইম বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে বিট পুলিশকে শক্তিশালী করা হয়েছে। তাছাড়া সব বস্তিকে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব কায়সার বলেন, বস্তির মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া নানা কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জীবিকার সন্ধানে মানুষজন নগরে এসে বস্তিতে আশ্রয় নেন। এজন্য প্রথমেই গ্রাম উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। গ্রামের মানুষকে বিনা কারণে শহরে আসা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বস্তি টিকিয়ে রাখেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা তাদের স্বার্থে। সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে। নিম্ন-আয়ের মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক বিষয়গুলোর দিকে একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে নজর দিতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
slot demo
bacan4d
bacan4d
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot toto