Bangladesh

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর: প্রাপ্তি কম, প্রত্যাশা অনেক?

ভারত সফরের পরপরই চীন সফর করে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে তিনি ভারসাম্য বজায় রাখতে চেয়েছেন৷

বাংলাদেশের তিস্তা মহাপকিল্পনা প্রকল্পে চীনের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ এখন কম। ভারত আগ্রহ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ এখন সেই দিকেই ঝুঁকছে।

বাংলাদেশের তিস্তা মহাপকিল্পনা প্রকল্পে চীনের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ এখন কম।ভারত আগ্রহ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ এখন সেই দিকেই ঝুঁকছে। তবে দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক কূটনীতিতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেকরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ জুলাই চীন সফরে যান। তিন দিনের সফর শেষে ফিরে আসেন ১০ জুলাই। এই সফর চারদিনের হওয়ার কথা ছিল। ১১ জুলাই দেশে ফেরার কথা থাকলেও সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি আগের দিন রাতেই দেশে ফেরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ বেশি অসুস্থ হওয়ার কারণে চীন সফরের সব অনুষ্ঠান অপরিবর্তিত রেখে শুধু ১১ তারিখ সকালের পরিবর্তে ১০ জুলাই রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।’

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ২১টি সমঝোতা স্মারক সই এবং সাতটি প্রকল্পের ঘোষণা এসেছে। আর চার ধরনের প্রকল্পে ঋণের আশ্বাস দিয়েছে চীন।

বুধবার বিকেলে বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় অব্যাহতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।’

বুধবার সকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সাথে বৈঠক হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেই বৈঠকে বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ইউয়ান অর্থনেতিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।

বাংলাদেশ ও চীন যে ২১টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তার মধ্যে আছে: ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার। চায়না ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকিং এবং বিমা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই। বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রফতানিতে প্রটোকল সই। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তা। বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহায়তা।বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ বিষয়ে আলোচনার একটি সাইনিং অব মিনিটস (কার্যবিবরণী) সই। চীনের সহায়তায় ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ-চায়না মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের চিঠি বিনিময়। এর বাইরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশ বিদ্যমান ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশকে যে এক বিলিয়ন ইউয়ান সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রতি দেয়া হয়েছে তা প্রায় ১৪০ মিলিয়ন ডলারের সমান।কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, চীনের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সহযোগিতা পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।

তবে এর আগে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টে শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের ২৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে সরকারের সঙ্গে অনুদান, ঋণ এবং বেসরকারি খাতে আরো কিছু সমঝোতার আওতায় সব মিলিয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয় চীন । তা থেকে এখন পর্যন্ত আট বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

চীন সফরের আগে প্রধানমন্ত্রী গত ২১ ও ২২ জুন ভারত সফর করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার বলেন, ‘আসলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভারত ও চীন সফরকে কত চুক্তি হলো, বাংলাদেশ কার কাছ থেকে কত সহায়তা পেলো- আমি সেই বিবেচনা থেকে এটা দেখি না। আমার কাছে বিবেচনা হলো, এই অঞ্চলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি তার একটা ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি। চীন আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠছে। ফলে একটি সফরে কী হলো তা দিয়ে সব কিছু বিবেচনা করা যায় না। আরেকটি জিনিস মনে রাখতে হবে- কেউ তো আমাদের জন্য দানছত্র খুলে বসেনি। আমরা আমাদের দিক থেকে চাইবো। চীন তার স্বার্থের দিক থেকে চাইবে। সেই দিক থেকে আমার মনে হয় যে, বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। তবে এটা সত্য এর আগে যখন চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন বিপুল সহায়তার কথা শোনা গেছে। তার পুরোটা হয়তো এখনো আসেনি, পাইলাইনে আছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গত ১০ বছর ধরে ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যমূলক কূটনীতি রক্ষা করে চলছে। আমরা মনে হয়, স্বল্প সময়ের মধ্যে এই দুই দেশ সফর সেই ভারসাম্যমূলক সম্পর্কেরই বহিঃপ্রকাশ। ভারত এবং বাংলাদেশ একই বলয়ের দেশ। একই সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সম্পর্কের দেশ এই উপমহাদেশে। অন্যদিকে চীন একটি পরাশক্তি এবং অর্থনৈতিক শক্তি। এই দুই দেশকে গুড বুকে রেখে বাংলাদেশের যে এগিয়ে চলার নীতি আমার মনে হয় এটা ঠিক আছে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক প্রধান এবং চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ তো চীন, ভারত, ইউএই, সৌদি আরব এরকম চার-পাঁচটি দেশের কাছে সহায়তা চেয়েছিল। তাদের মধ্যে চীনই তো একমাত্র দেশ, যারা সাথে সাথে দিলো। আর এটাই তো শেষ নয়। তারা তো বলেছে, একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। তারা দেখবে আরো কিভাবে সহায়তা দেয়া যায়। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন এসেছিলেন তখনো প্রায় সব মিলিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের নানা ধরনের সহায়তার কথা হয়েছে। তার মধ্যে আমরা কতটুকু ব্যবহার করতে পেরেছি। সেটাও দেখতে হবে।’

‘চীন তিস্তা মহাপরিকল্পনায় শুরুতে আগ্রহী থাকলেও এখন ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর বাংলাদেশের কাছে কাছে ভারত এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। এর কারণে হয়তো প্রকল্পটি ঝুলে যাবে। কিন্তু চীন তো বলেছে যে, বাংলাদেশ তার দেশের কল্যাণের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাতেই তারা সমর্থন দেরে। এই প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে কাজ করতেও তাদের আপত্তি নেই,’ বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একটা অন্যরকম উচ্চতায় আছে। সবাই বলে তিন পাশে, আমি বলি ভারত আমাদের চারপাশে। কারণ, বঙ্গোপসাগরও তারা আমাদের প্রতিবেশী। তার মধ্য দিয়েও আমাদের অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। চীন বলেন, রাশিয়া বলেন- সেটা ভারতকে বুঝিয়ে বা গুডবুকে রেখেই আমাদের করতে হবে। এবং সেটা আমরা করছি।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর সফল হয়েছে। পরারাষ্ট্রমন্ত্রী তো এটা বলবেনই। তবে আমরা বাহ্যিকভাবে যেটা দেখি, কিছুদিন আগে আমরা শুনেছিলাম পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ইউয়ান ঋণ পাওয়া যাবে বাজেট সাপোর্টের জন্য। সেই তুলনায় এক বিলিয়ন ইউয়ান তো মাত্র সর্বোচ্চ দেড়শ মিলিয়ন ডলার। সত্যি কথা বলতে এটা একেবারেই হাস্যকর। কথা হলো প্রধানমন্ত্রী ভারতে যখন গিয়েছেন, তখন কিছু দিয়েছেন। রেল ট্রানজিট দিয়েছেন। আর তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চীনের আগ্রহ থাকলেও সেখানে এখন ভারত ঢুকে পড়েছে। চীন বাদ। প্রধানমন্ত্রী যখন চীন যান, তখন তো চীনকে তার দেওয়ার মতো কিছু ছিল না। আসলে লেনদেন বা স্বার্থের ভিত্তিতেই তো সম্পর্ক হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d