প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির সাক্ষাৎ
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জাঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স এবং ক্যাথরিন পোলার্ড গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে যৌথভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। জাতিসংঘ সদস্য অস্থিতিশীল দেশগুলোতে শান্তি রক্ষায় অবদানের জন্য তারা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈঠকে তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।আগামী ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের শান্তি রক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে ঢাকায় প্রথম প্রস্তুতি সভা হচ্ছে। গতকাল রোববার ঢাকার একটি হোটেলে দুই দিনের প্রস্তুতি সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে শান্তি রক্ষার কিছু কার্যক্রমে নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব। তবে তিনি নিরাপত্তার কোন কোন ক্ষেত্রে উদ্বেগ রয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি। বাংলাদেশ, কানাডা ও উরুগুয়ে এই প্রস্তুতিমূলক সভার যৌথ আয়োজক। প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে যোগ দিয়েছেন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের লাক্রোয়া এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্সবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথরিন পোলার্ড। এ বছরের ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ঘানার আক্রায় জাতিসংঘের শান্তি রক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জাতিসংঘ শান্তি রক্ষায় নারী’। সভায় শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নারী শান্তি রক্ষা বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতি দেয়া, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনা প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তুতি সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ শান্তি রক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ভিত্তি তৈরি করবে এই প্রস্তুতিমূলক সভা। কিছু শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সদস্যদেশগুলোর উদ্বেগের বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। বৈঠকে টেবিলে উপস্থাপিত জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের এ পর্যন্ত শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে থাকা ৯৬০ নারী যৌন শোষণ ও নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, জাতিসংঘ সফলভাবে তার শান্তিরক্ষা অভিযানের ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের নয়টি শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় ৭,৫০০ বাংলাদেশী নারী-পুরুষ নিযুক্ত রয়েছে। ক্যাথরিন পোলার্ড যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন রোধে ট্রাস্ট ফান্ডে বাংলাদেশের অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। অন্যদিকে গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায় ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ এ এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের (এইচআরডব্লিউ) ওপর দায়িত্ব বিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার। কিন্তু তারা কোনো এক অদ্ভূত কারণে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (শান্তিরক্ষীপ্রধান) জাঁ পিয়ের লাক্রোয়া দুই দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। তার এই সফর সামনে রেখে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় যাচাই–বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়ে ১২ জুন বিবৃতি দিয়েছিল এইচআরডব্লিউ। গত শুক্রবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ নিয়ে বিবৃতি দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে গত ২৫ মে চিঠি দেন ছয়জন কংগ্রেস সদস্য।
ডিক্যাব টকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল সফররত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে এসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ১০ বছর ধরে কাজ করছে। যেখানে ১৬৯ জন জীবন দিয়েছেন। এই অর্জনকে যারা খাটো করে দেখছেন, ব্যর্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তারা বাংলাদেশের বন্ধু নন, শত্রু। এ প্রসঙ্গেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নিয়ে ওই মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ডেকে কথাও বলা হয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, তাদের বলা হয়েছে, কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগে যেন রিভিউ করতে দেয়া হয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা তা করেনি। এরপর থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ‘এনগেজ’ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেস সদস্যদের চিঠির দিকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সামনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের চিঠির সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তার নিজের কাছেও দুটো চিঠির ড্রাফট আছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির লোকজন টাকা নিয়ে চিঠির ড্রাফট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের কাছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের চিঠি কোনো রাষ্ট্রের অবস্থান না। যারা চিঠি দিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, লবিস্ট বা পিআর ফার্মের পেছনে জনগণের করের টাকা ব্যয় করতে চান না। এখন ‘নেলসন মলিন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ ছাড়া বিজিআর নামে পত্রিকায় আর্টিকেল লেখার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের চুক্তি নবায়ন করা হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানের সাথে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল সাক্ষাৎ: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যা পিয়েরে লাক্রোয়া গতকাল সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পরিক কুশল বিনিময় করেন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োগের ব্যাপারে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল-কে অনুরোধ করেন। এসময় মি: লাক্রোয়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তিনি বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক পরিমাণ শান্তিরক্ষী নিয়োগের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনে প্রেরণ করার জন্য বাংলাদেশ এবং বিশেষভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ভবিষ্যতে শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগে বাংলাদেশিদের এবং বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষী নিয়োগের ব্যাপারেও আলোচনা হয়। ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল’কে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে তিনি পরিবার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী হলি চৌধুরী এবং দুই ছেলে রুহানুজ্জামান চৌধুরী ও রুম্মানুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়রকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে সরকারের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।গত ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম (বাবুল) পেয়েছিলেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। মোট ভোট পড়েছে ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত মেয়রকে সিলেটবাসীর ভালোবাসার মর্যাদা দিতে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন। বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যও উদ্ধৃত করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সিলেটবাসীর সঙ্গে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক আছে। তাঁরা যেমন জাতির জনককে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, তেমনি আমাকেও ভালোবাসেন। ভালোবাসেন নৌকা। তাঁদের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। মেয়র বা নগরপিতা নয়, কাজ করতে হবে তাঁদের সেবক হিসেবে।’সৌজন্য সাক্ষাৎকালে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানিয়ে বলেন, আপনি আমার ওপর আস্থা রেখে সিলেট নগরবাসীর সেবক হতে নৌকার মনোনয়ন দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। সিলেটবাসী আপনার জন্য, কেবল আপনাকে, আওয়ামী লীগকে এবং নৌকাকে ভালোবাসেন বলেই আমাকে ভোট দিয়ে বিশাল ব্যবধানে জয়ী করেছেন। তাঁরা আপনার জন্য সব সময় দোয়া করেন এবং সিলেটের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়েছেন।