প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছর বেশির ভাগের ঐকমত্য, ভিন্নমত বিএনপি’র

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর পদে সর্বোচ্চ ১০ বছরের প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। জামায়াতে ইসলামী, গণ-অধিকার পরিষদ, গণ-সংহতি আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এ প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তবে বিএনপিসহ তিনটি দল এতে আপত্তি জানিয়েছে। ফলে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আলোচনার পরবর্তী ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আরও বৃহত্তর ঐকমত্যের লক্ষ্যে দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের পঞ্চম দিনের আলোচনা শেষে এমনই জানিয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপি, এলডিপি’র একটি অংশ ও এনডিএম এই তিনটি দল ছাড়া বাকি সকল দল প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছরের ব্যাপারে একমত। ভিন্ন ভিন্ন কারণে তাদের মতভেদ রয়েছে। তিনটি দলের অবস্থান এই বিষয়ে তিন রকম। দ্বিতীয় আলোচনা হয়েছে সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম আলাপ আলোচনার পরে যে জায়গায় আসা গেছে- সেটা হলো আজকের আলোচনায় বিভিন্ন দলের যে সেন্টিমেন্ট বা প্রস্তাব তার প্রতিফলন ঘটিয়ে, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট প্রস্তাব হাজির করা হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চলমান সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে আমরা আগের ঘোষিত ৩১ দফা পুনরায় উপস্থাপন করেছি। সেখানে আমরা প্রস্তাব করেছি, কেউ যেন পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। আমরা আরও বলেছি, মেয়াদ ও বার বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ কতো সময় পর্যন্ত একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন-তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। তবে দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত্ত দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। এটি আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) এবং উচ্চকক্ষ এই তিনটি বিষয় পরস্পর সম্পর্কিত। তাই এগুলোর ওপর একসঙ্গে আলোচনা করলে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিজ নিজ দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তাদের চূড়ান্ত অবস্থান জানাবে। এরপরই পরবর্তী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বৈঠকে সংবিধানের মূলনীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, গণতন্ত্র ও সামাজিক সুবিচার এই চারটি বিষয়কে সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমরা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চাই।
তিনি বলেন, আমরা যদি জনগণের ম্যান্ডেট পাই, তাহলে সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’, ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’, ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’ এই বিষয়গুলোকে মূলনীতি হিসেবে সংযোজন করবো। আমরা আহ্বান জানাই, ন্যূনতম কিছু বিষয়ে সবাই যেন একমত হতে পারি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, কোনো ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবে না- এ বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি। তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত জানাবেন। কমিশনের পক্ষ থেকে ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’, ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সামাজিক সুবিচার সংবিধানের মূলনীতিতে যুক্ত করতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছি। এ ছাড়া সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বহাল রাখার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে, তবে কিছু বামপন্থি দল এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যেন দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। সেখানে দু তিনটি দলের ভিন্ন মতের কারণে আলোচনা উঠেছে মেয়াদের পরিবর্তে একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ কতো বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন তা নিয়ে।