Hot

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা: সন্তুষ্ট নয় বিএনপি, চায় সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ

  • অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তব রোডম্যাপ জানার অধিকার জনগণের রয়েছে : তারেক রহমান
  • সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে নরম-গরমে চাপ অব্যাহত রাখবে বিএনপি
  • দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে: কাদের সিদ্দিকী

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ধারণা দেওয়ার পরও রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি নেতাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যকে সাধুবাদ জানানো হলেও দলটি ধারণায় সন্তুষ্ট নয়।

বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করছে না? সম্ভাব্য দিন-তারিখ ঘোষণা করতে তাদের বাধা কোথায়? নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে দলটি নরমে গরমে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের যে কৌশল নিয়ে রেখেছে, সেটি অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপির নেতারা প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। আবার নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকারের উপদেষ্টারাও একেকজন একেক রকম আভাস-ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। তবে এখানেও প্রধান উপদেষ্টা ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ রেখেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার করতে হয় তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় বিএনপি খুশি হতে পারেনি। নির্বাচন ইস্যুতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাস্তব রোডম্যাপ জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। সরকার কী অর্জন করতে চায় এবং প্রয়োজনীয় সময়সীমা কী। স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন থেকে রাষ্ট্র ও সরকারকে রক্ষা করতে হলে দৈনন্দিন চর্চায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন করা নিয়ম ও বিধান মেনে চলার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।’

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সোমবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি আছি। সংস্কার হবে, তবে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করতে রাজি নই। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, এসব কিছুর সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সরকার দরকার, নির্বাচনের রোডম্যাপ দরকার। আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা দেবে।’

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তি যাতে বাংলাদেশকে দখল করতে না পারে, সেজন্য জনগণের সরকার হতে হবে। নির্বাচিত সরকার হতে হবে। এর জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সেজন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়।’

এর আগে গত রবিবার বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আর কত মাস প্রয়োজন, তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, সেটি অবশ্যই গণ-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী হবে।’

সম্প্রতি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং ভোটার তালিকা সংস্কার করে নির্বাচন করতে তিন-চার মাসের বেশি লাগে না। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।’

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশলের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, সরকারের দায়িত্বশীলদের একেক জনের একক রকম বক্তব্য। ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার বিভিন্ন মত সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে।

গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরে ড. ইউনূস জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তার সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি জানান, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ নির্বাচন হতে পারে।

এর আগে অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকারের আরেক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। তারও আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, নির্বাচন আগামী আঠারো মাসের মধ্যে হতে পারে। তার এ বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছিল, এটি সেনাপ্রধানের নিজস্ব বক্তব্য। নির্বাচন কবে হবে সেটি নির্ধারণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

সরকারের দায়িত্বশীলদের এমন বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। ফলে দিন দিন ধোঁয়াশা ক্রমেই বাড়ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ জানাতে চাপ প্রয়োগের কৌশল নেয়।

দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয় গত সোম ও মঙ্গলবার। ওই দুই সভায়ও আলোচ্যসূচির অন্যতম বিষয় ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য ‘চাপ’ অব্যাহত রাখতে দলটির করণীয় কী। আগেই সিদ্ধান্ত ছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ না হলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হবে বিএনপি। চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। আগামী মাস থেকে এসব সমাবেশ শুরু হতে পারে। একই ইস্যুতে সমমনা দলগুলোকেও মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের।

তবে কোনোভাবেই সেই আন্দোলনকে চরম পর্যায়ে নেওয়ার চিন্তা নেই তাদের। আপাতত নিয়মতান্ত্রিকভাবে নরম-গরমে আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল সামনে রেখে এগোবে বিএনপির শীর্ষ মহল।

দলটির নেতারা মনে করছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা- এ দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। এই অনুধাবন থেকেই দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হচ্ছে।

দলটির স্থায়ী কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সর্বশেষ ২৭ নভেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা না আসলে বিএনপির কর্মসূচির কথা জানানো হয়। সম্ভবত এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা ত্রয়োদশ নির্বাচনের বিষয়ে একটা ধারণা জাতির সামনে রেখেছেন। কিন্তু বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার আভাস বা ইঙ্গিত চায়নি, চেয়েছে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ।’

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা মতে, নির্বাচন হতে দেড় বছর লাগবে। এই দীর্ঘ সময়ে তারা কী কী কাজ করবে সেটিও পরিষ্কার করেনি। তাই দিনক্ষণ না পাওয়া পর্যন্ত বিএনপি তাদের চাপ প্রয়োগের কৌশল থেকে সরবে না।’

জবাবদিহির সরকার জনগণের ক্ষমতা রক্ষা করতে পারে

ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের পোস্টে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বৈষম্য ও বিভাজনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই ঐক্যকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ক্ষমতায়ন ছাড়া জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী বা টেকসই হতে পারে না।’

তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংসদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা রাষ্ট্র ও সমাজ উভয় ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক শক্তি সত্যিকার অর্থে তখনই সুরক্ষিত হয়, যখন জবাবদিহিমূলক সরকার ও কার্যকর সংসদ মিলেমিশে কাজ করে।’ তারেক রহমান স্বীকার করেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে সংস্কার অনিবার্য।

বিজয় দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে উদযাপিত এই বিজয় দিবস নিঃসন্দেহে আরও আনন্দের, গৌরবময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস জনগণের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারের প্রতীক হয়ে থাকবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d