প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশে নির্ধারণ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটের শুরুতে এই লক্ষ্য ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। অক্টোবর থেকে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে অবস্থান করছে। অর্থবছরের শেষে এটি কিছুটা কমে ৯ শতাংশে নামবে। মূল বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের সভায় এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সভা সূত্রে জানা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্প বাদ দিয়ে বাজেট ৩০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকায় প্রাক্কলন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিক বাজেট ৮ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ কম হলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সভায় শুধু বাজেট সংশোধনের বিষয়ে নয়, ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার দিকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রণীত হয়েছিল। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমানে কিছু প্রকল্প পুনরায় শুরু হলেও অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি বন্ডে উচ্চ সুদের হার (১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত) এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি এর প্রধান কারণ। চলতি অর্থবছরে বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে দেশীয় ঋণের জন্য ৯৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের জন্য ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাখা হয়।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের দ্বিতীয় সভা আগামী বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন বাজেট চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হবে। সবমিলিয়ে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই সরকারের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। অভ্যন্তরীণভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে এবং সরকারের ব্যয়েও কৃষ্ণতা দেখা যাবে।