প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নারী
দেশে পেশাগত ও কারিগরি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারী এখনও পিছিয়ে আছে। দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫৮ শতাংশ, নারী ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামের নারী বেশি পিছিয়ে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির আশানুরূপ উদ্যোগ না থাকায় নারী পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে এসেছে। গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩ প্রকাশ করা হয়। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী দেশে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ২০২৩ সালে ছিল ৪৫.৫ শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ৪১ শতাংশ। ২০২৩ সালে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পুরুষদের মধ্যে ৫১.৯ শতাংশ, নারীদের মধ্যে ৩৯.৭ শতাংশ। ৫ বছরের ঊর্ধ্বে গ্রামের নারীদের মধ্যে ৩৫.৯ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শহরে এই হার ৫১.৯ শতাংশ।
১৫ বছরের ঊর্ধ্বে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০.১ শতাংশ। এই বয়সে শহরের নারীদের মধ্যে ইন্টারনেট গ্রহীতা ৫৬ শতাংশ, গ্রামে ৩৮.৩ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য আরও বলছে, দেশের প্রায় ৬৩ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ২০২০ সালে ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ মোবাইল ব্যবহারকারী
নারী কমেছে। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী পুরুষ ৮৬ শতাংশের বেশি।
সারাবিশ্বে প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ কম। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩ অনুসারে, এআই প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ নারী। ২০১৬ সাল থেকে এআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৪ শতাংশ বেড়েছে।
২০২১ সালের ১ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘জেনারেশন ইকুইটি ফোরাম’-এ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘টেক স্টার্টআপ ও ই-কমার্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ‘শী পাওয়ার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে ২১টি জেলায় ১০ হাজার ৫০০ নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। অন্য ৪৩টি জেলায় ‘হার পাওয়ার’ প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ২৫ হাজারের বেশি স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে বলে আইসিটি বিভাগ জানিয়েছে।
তবে প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে এসব উদ্যোগ খুব বেশি কার্যকর হচ্ছে না। সরকারি হিসাব বলছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে যারা পড়াশোনা করে তাদের ২৯ শতাংশ নারী। কর্মক্ষেত্রে মাত্র ১২ শতাংশ নারী তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যাদের অধিকাংশই প্রাথমিক বা মধ্যম পর্যায়ের কর্মী। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অবস্থান ১ শতাংশেরও কম। এ ছাড়া তথ্য প্রযুক্তিতে নারী উদ্যোক্তা ২ শতাংশেরও কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নরীদের দক্ষ করে গড়ে না তোলায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী কম। প্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ যত বাড়বে, বৈষম্য তত কমবে। প্রযুক্তি খাতে নারীকে এগিয়ে নিতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই প্রযুক্তিতে নারীদের অংশ গ্রহণ বাড়বে ।