Trending

প্রশ্নবিদ্ধ এডিআরের সিদ্ধান্ত: বিএটি’র ১৫৭ কোটি টাকা ভ্যাট মওকুফ

গত বছর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) ১৫৭ কোটি টাকার ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) মওকুফ করা হয়।

পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে এডিআরের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেখতে পায়, বিরোধটি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে এডিআরের আওতায় ফেলে প্রতিষ্ঠানটিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন মওকুফকৃত ভ্যাট আদায়ে এনবিআর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১০-২০১৫ সাল পর্যন্ত তামাক পাতা ক্রয়ের বিপরীতে বিএটিকে ১৫৭ কোটি টাকা উৎসে ভ্যাট পরিশোধে পৃথক দুটি দাবিনামা জারি করে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট)।

এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে ২০১৩ ও ২০১৬ সালে পৃথক দুটি রিট মামলা দায়ের করে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে বিএটি বিরোধগুলো এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আদালতে আবেদন জানায়। এর প্রেক্ষিতে আদালত ২৩ সেপ্টেম্বর বিরোধটি এডিআরে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী এক মাস পর ১১ অক্টোবর এলটিইউ-ভ্যাটে এডিআরে বিরোধটি নিষ্পত্তির আবেদন জানায় বিএটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এডিআরে এলটিইউ-ভ্যাটের প্রতিনিধি ছিলেন তৎকালীন উপকমিশনার (বর্তমানে জনপ্রশাসনে বদলির অপেক্ষারত) মুহাম্মদ ইমতিয়াজ হাসান, বিএটির তৎকালীন হেড অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স শেখ শাবাব আহমেদ ও প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র লিগ্যাল কাউন্সেল সৈয়দ আফজাল হোসেন এবং সহায়তাকারী হিসাবে ছিলেন উদয়ন বড়ুয়া।

এডিআরে অংশ নেওয়া সবপক্ষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধটি ‘সম্পূর্ণভাবে নিষ্পত্তিকৃত’ হিসাবে ১০ নভেম্বর ঐকমত্যে পৌঁছায়। অর্থাৎ ভ্যাটের ১৫৭ কোটি টাকা মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশে এডিআরের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত আইন ও বিধির আলোকে নেওয়া হয়েছে কি না তা পর্যালোচনা করতে এনবিআর ৪ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে।

ভ্যাট নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানাকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-ঢাকা (দক্ষিণ) ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী, ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. আব্দুর রউফ এবং ঢাকা (দক্ষিণ) ভ্যাট কমিশনারেটের উপকমিশনার শহীদুজ্জামান সরকার।

এনবিআর গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনের ৪১ (গ)(১) এবং ৪১ (গ)(২) ধারা অনুযায়ী বিরোধীয় বিষয়টি এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তিযোগ্য ছিল না। কিন্তু ৪১ (জ)(১) ধারা অনুযায়ী বিষয়টি এডিআরে নিষ্পত্তিযোগ্য মর্মে বিবেচনার একটি অবকাশ থেকে যায়।

যেহেতু বিরোধীয় বিষয়টি ‘আইনগত বিষয় বা তার ব্যাখ্যা’ সংক্রান্ত হওয়ায় তা এডিআরের আওতায় নিষ্পত্তি না করা অধিকতর সমীচীন ছিল।

১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে বলা আছে, কর রেয়াত গ্রহণ, নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান, হিসাবরক্ষণ, দাখিলপত্র পরীক্ষা, দণ্ড আরোপ, দাবিনামা জারি ও কর ফেরত প্রদান সংক্রান্ত বিরোধ এডিআর ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যাবে। অপরদিকে আইনের ৪১(গ)(২) ধারায় বলা আছে, জালিয়াতি বা ফৌজদারি অপরাধ সংক্রান্ত মামলা এবং জনস্বার্থে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন-এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ‘আইনগত বিষয় বা তার ব্যাখ্যা’ সম্পর্কিত বিরোধ এডিআরের আওতায় নিষ্পত্তি করা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য বলেন, এনবিআর পর্যালোচনা কমিটির যে কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে অনুযায়ী আইন-বিধির সব বিধান বিশ্লেষণ করে পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া হবে তা এনবিআরই নির্ধারণ করবে।

যেভাবে বিরোধের সূত্রপাত : ২০১০-২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে তামাক পাতা ক্রয়কে ‘জোগানদার’ সেবা হিসাবে বিবেচনা করে তার বিপরীতে ১৫৭ কোটি টাকা উৎসে ভ্যাট পরিশোধে পৃথক দুটি দাবিনামা জারি করা হয়। কিন্তু বিএটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তামাক পাতা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেনা হয়, তাই অপ্রক্রিয়াজাত তামাক পাতার ওপর উৎসে ভ্যাট কর্তন প্রযোজ্য নয়।

তাছাড়া তামাক পাতা কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত কৃষিপণ্য। ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে বলা আছে, ৬০ লাখ টাকার নিচে টার্নওভার রয়েছে-এমন কৃষকদের নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। ফলে তাদের ভ্যাট চালান ইস্যুর বিষয়টি প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া ২০০০ সালে এক আদেশে তামাক পাতা প্রসেসিংয়ে ভ্যাট প্রযোজ্য নয় মর্মে উল্লেখ আছে।

অন্যদিকে এনবিআরের পর্যালোচনা কমিটির মতে, আইনের প্রথম ও দ্বিতীয় তফশিলে ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য ও সেবার তালিকা দেওয়া রয়েছে, সেখানে তামাক পাতার কথা উল্লেখ নেই। সে হিসাবে ক্রেতার উৎসে কর কর্তনের দায় থাকে। তাছাড়া জোগানদারের সংজ্ঞায় বলা আছে, পণের (অর্থ) বিনিময়ে উৎসে কর্তনকারী সত্তার কাছে দরপত্র বা কোটেশন বা অন্য যে কোনোভাবে যে কোনো পণ্য বা সেবা সরবরাহ করা হলে তা জোগানদার সেবাভুক্ত হবে।

আইনে জোগানদার হিসাবে স্কুলের টিফিন সরবরাহ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, তুলা সরবরাহ, ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ক্র্যাপ পেপার সরবরাহ, প্লাস্টিক বর্জ্য সরবরাহ এবং স্টিল মিলের ভাঙারি সরবরাহকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে। যদিও ২০০৪ সাল থেকে উৎপাদন পর্যায়ে তামাক পাতাকে অব্যাহতি দেওয়া আছে।

পর্যালোচনা কমিটির মতে, তামাক পাতা উৎপাদন পর্যায়ে অব্যাহতি থাকায়, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ফাঁকি হয়নি। তবে ক্রেতা উৎসে কর্তনকারী সত্তা হওয়ায় এবং উৎপাদনকারী থেকে সরবরাহের বিপরীতে ভ্যাট চালান না থাকার কারণে বিএটির উৎসে ভ্যাট কর্তনের দায় থেকে যায়।

প্রসঙ্গত, এর আগে অনুমোদনহীন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিএটি ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকার দাবিনামা মওকুফ করে দেয় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট), যা পরবর্তীতে এনবিআরের ঊচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto