Bangladesh

প্রশ্ন অনেক, উত্তর খুঁজছে সবাই, দুই বছরেরও কম সময়ে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের জন্য নতুন মার্কিন স্যাংশন

যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ঘোষণা দেওয়ায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঘূর্ণি বইছে। এ নিষেধাজ্ঞার কথা চাউর হওয়ার পর বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ। কারা কারা, কতজন, কোন সুনির্দিষ্ট কারণ, আর কোন কোন দেশ অনুসরণ করবে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরতদের পরিবারের সদস্যদের কী হবে, আরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কিনা– এ ধরনের নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সচেতন মহল।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় পড়েছেন সরকারি, বিরোধী দলের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এ সংখ্যা কত, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আলোচনায় রয়েছে সংখ্যাটি খুব একটা বড় নয়। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেয়ালে দেয়ালে ভিসা নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তিদের নানারকম তালিকা ঘুরে বেড়ালেও এর কোনো সত্যতা মেলেনি।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ‘দেয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

তারা জানিয়েছে, আরও যাদের দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা হবে, তাদের ওপরও ভবিষ্যতে এই নীতি কার্যকর হতে পারে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে– ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

এদিকে সাধারণ মানুষের মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে চিন্তা বা ভয়ের কারণ নেই বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। সমকালকে তিনি বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উৎকণ্ঠা অনেকের মধ্যে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল, তখন বলে দিয়েছিল, যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ব্যাহত করবে, তাদের ওপর এ নীতি প্রয়োগ করা হবে। ফলে যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তাদের এ নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আর যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবেন, তারা যদি এ প্রক্রিয়ায় কোনো রকম বাধা সৃষ্টি না করেন, তাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ভিসা নীতির তালিকা নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা থাকতে পারে জানিয়ে সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ভিসা দেওয়া বা না দেওয়া একটি গোপনীয় বিষয়। আইনত যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়টি প্রকাশ করে না।

কী মানদণ্ড অনুসরণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে সব তথ্য-উপাত্ত সতর্কভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে জানতে পারবেন, তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে– সে প্রশ্নের উত্তর এখনও কারও কাছে নেই। যাদের পরিবার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাস করছে, তাদের কী হবে– সে বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশাময়। এখন পর্যন্ত দেওয়া বিবৃতি বা ঘোষণায় এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

তালিকা নিয়ে আগ্রহ

ভিসা দেওয়া বা না দেওয়া কিংবা কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্বের অবস্থা একান্ত গোপনীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। সাধারণত ভিসা নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তিদের নাম বা তালিকা প্রকাশ করে না দেশটি। অতীতে অন্য দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞায় কতজনের ওপর দেওয়া হয়েছে, শুধু সেই সংখ্যা প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটিও প্রকাশ করা হয়নি। ভিসা নিষেধাজ্ঞায় থাকা বাংলাদেশিদের নাম বা তালিকা না দিলেও কতজনের ওপর এটি প্রয়োগ করা হয়েছে, তা ঢাকাকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে ঢাকার তরফ থেকে বিষয়টি এখনও গোপন রাখা হয়েছে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় কারা রয়েছেন, তারা কীভাবে জানতে পারবেন– এ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার সমকালকে বলেন, এ নীতির আওতায় যাদের ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাদের ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দেব। তাদের জানিয়ে দেওয়া আমাদের রীতিতে রয়েছে। যাদের এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নেই, তাদের এ বিষয়ে কোনো তথ্য থাকবে না, তবে ভিসা আবেদনের পর তারা জানতে পারবেন। এ ভিসা নীতি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির আওতায় রয়েছেন– বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা–কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরাও এ নীতির আওতায় পড়বেন।

প্রতিটি দেশের ভিসা নীতি তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো নীতি কার্যকর করলে সাধারণত পশ্চিমা মিত্ররা একই পথ অনুসরণ করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি অনুসরণ করার ঘোষণা কোনো দেশ দেয়নি। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের ভিসা না দেওয়ার নীতি রয়েছে কানাডার।

গত ২৪ মে বাংলাদেশ নিয়ে ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ওইদিন থেকে এটির কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২৪ মের আগে কোনো ধরনের কার্যক্রমের জন্য এ নীতি কার্যকর নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে

বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। বাংলাদেশের আগে এ ধরনের নীতি ২০২২ সাল থেকে আরোপ শুরু হয়। আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া, উগান্ডা, নাইজেরিয়ারসহ কয়েকটি দেশের ওপরও এ নীতি আরোপ করা হয়েছে। ফলে ঠিক কত দিনে কিংবা কীভাবে ওয়াশিংটনের এ নীতি থেকে মুক্তি মিলবে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো উদাহরণ নেই।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি আইনের ধারা ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) এর অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশিকে ভিসা দিতে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। গত ৩ মে বাংলাদেশকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল তারা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা নিয়ে বাংলাদেশে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তাকে সমর্থন করতেই এ নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button