ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি

♦ নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ ♦ কাছে টানা হচ্ছে হেফাজতে ইসলামকে
কোনো ধরনের উসকানি বা পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। সব প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে নির্বাচন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করবে দলটি। দলটির নেতারা অনুধাবন করতে পারছেন সরকারের ভিতরের একটি অংশ, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু খুচরা রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। ওইসব দলের মূল টার্গেট যে কোনো মূল্যে বিএনপিকে ঠেকানো। সে কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি। সেই সঙ্গে জামায়াতকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য হেফাজতে ইসলামসহ অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি মোর্চা গড়ে তুলবে। বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা
সূত্রে জানা গেছে, দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে সতর্কও করা হয়েছে, তাঁরা যেন প্রতিপক্ষের কোনো প্রকার পাতানো ফাঁদে পা না
দেন। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো কাজে কেউ যেন না জড়ান সে ব্যাপারেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনের আগে কোনো প্রকার বাহানা কিংবা অজুহাত সৃষ্টি করে জাতীয় নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা যাতে না হয়, সেজন্য দলটির পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণার সব বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এখন বাকি আছে জুলাই সনদ। এটি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি হার্ডলাইনে রয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জুলাই সনদ নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যে কারণে এ ইস্যুতেও বিএনপি খুব সাবধানে অগ্রসর হবে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর জন্য নানাভাবে ফাঁদ পাতা হতে পারে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সব ফাঁদ কৌশলে ও ধৈর্যসহকারে দলটি মোকাবিলা করবে। বিএনপি মনে করে বর্তমান সংকট উত্তরণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
অন্যদিকে জামায়াতের ইসলামি জোট বা মোর্চার কাউন্টার হিসেবে হেফাজতে ইসলামকে কাছে টানছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসাকেন্দ্রিক এ ইসলামি সংগঠনটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে হেফাজতের সঙ্গে অনেকটা বোঝাপড়াও হয়ে গেছে তাদের। সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুজন প্রভাবশালী সদস্যের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমদ এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর বিষয়টি ক্লোজ মনিটরিং করছেন দলের হাইকমান্ড তারেক রহমান নিজে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোরকমের পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি কারও উসকানিতে পা দেবে না। সবকিছু ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করবে। কারণ বিএনপি মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বিএনপি। কেউ কেউ নির্বাচন বিলম্বিত বা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু এ দেশের জনগণ তাদের তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে।’ অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ইস্যুতে একটা ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে একটি পক্ষ। ‘রাতের বেলায় সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে বিভিন্ন হলে হানা দেওয়া, ভাইস চ্যান্সেলরকে দিয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করানো’ এসব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ বিঘ্নিত করার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘অনেক চেষ্টা চলছে রাজনৈতিক ও নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার। ফেব্রুয়ারিতে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠান না হয় এজন্যে পরিকল্পিতভাবে একটার পর একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনকি পায়ে পাড়া দিয়ে দ্বন্দ্ব বাধানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের কেউ যাতে কারও কোনো পাতানো ফাঁদে পা না দেন, সেজন্যে তাঁদের প্রতি ইতোমধ্যে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।;
এদিকে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তার পরও আমরা আগামী নির্বাচনে কোন দলকে সমর্থন দেব কিংবা না দেব, সেটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ডের ওপর। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। সম্প্রতি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ চট্টগ্রাম এসেছিলেন। তিনি আমাদের সংগঠনের আমির মাওলানা মুহিব্বল্লাহ বাবুনগরী সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দোয়া নিয়ে গেছেন।’