ফিরেই আটক, ৫০ বছরের বাসিন্দাকেও ছাড় দিচ্ছে না মার্কিন আইন

যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধশতাব্দী ধরে বসবাসরত ৬৪ বছর বয়সী লিউয়েলিন ডিক্সন সম্প্রতি ফিলিপাইন সফর শেষে দেশে ফিরলে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) তাকে সিয়াটল-টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করে।
ডিক্সন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের এজউড, পিয়ার্স কাউন্টিতে বসবাস করেন এবং ইউডব্লিউ মেডিসিনে ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত, তাকে ২৮ ফেব্রুয়ারি আটক করা হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ২০০১ সালে সংঘটিত আর্থিক জালিয়াতির একটি পুরনো অপরাধ, যেটি মার্কিন অভিবাসন আইনে “নৈতিক অধঃপতনের সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধ” (CIMT) হিসেবে চিহ্নিত।
ডিক্সনের পরিবার জানায়, তিনি কখনো জেলে যাননি এবং ওই ঘটনার পর থেকে তার বিরুদ্ধে আর কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ নেই।
তবে, ১৯৯৬ সালের ‘অবৈধ অভিবাসন সংস্কার ও দায়িত্ব আইন’ (Illegal Immigration Reform and Immigrant Responsibility Act) অনুযায়ী, এমন একটি একক অপরাধও গ্রিন কার্ডধারীদের দেশে ফেরত পাঠানোর (deportation) জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
তার আইনজীবী বলেন, তৎকালীন আইন অনুযায়ী অপরাধ স্বীকারের ফলে অভিবাসন-সংক্রান্ত কী পরিণতি হতে পারে, সে সম্পর্কে ডিক্সনকে অবহিত করা হয়নি।
অন্যদিকে, ৪২ বছর বয়সী ম্যাক্সিমো “ম্যাক্স” লন্ডোনিও, যিনি ১২ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রিন কার্ডধারী, তাকেও ১৫ মে একই বিমানবন্দরে ফিলিপাইন থেকে ছুটি কাটিয়ে ফেরার সময় আটক করে মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (CBP)। তিন সন্তানের জনক লন্ডোনিও বিমান শিল্পে চাকরি করেন। তাকে আটক করা হয় ২০০২ সালের একটি পুরনো CIMT অপরাধের ভিত্তিতে।
ফিলিপাইন কনস্যুলেট ইতোমধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং এই ঘটনা দুটি গ্রিন কার্ডধারীদের পুরনো অপরাধের কারণে নতুন করে কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়, তা নতুন করে সামনে এনেছে।
CBP এক বিবৃতিতে জানায়, “গ্রিন কার্ডধারীরা যদি নৈতিক অধঃপতনের সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধে দণ্ডিত হন, তাহলে তারা তাদের বৈধ স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা হারাতে পারেন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের ফেরত পাঠানো আইনত বৈধ।”
CBP আরও জানায়, “ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংক্রান্ত ফেডারেল আইন অনুযায়ী অধিকাংশ ভ্রমণকারীর ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো যায় না, তবে এই তথ্য নিশ্চিত করা যেতে পারে।”
ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট (INA) কী বলছে?
১৯৫২ সালে পাশ হওয়া INA আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত প্রধান আইনি কাঠামো। বহুবার সংশোধিত এই আইন অভিবাসন ব্যবস্থা পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই আইনে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
- ভিসা নিষেধাজ্ঞার নিয়ম, অর্থাৎ কোন পরিস্থিতিতে কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
- কোন ধরনের ভিসা রয়েছে, এবং কারা তা পেতে পারেন (যেমন: মার্কিন নাগরিকের পরিবারের সদস্য, দক্ষ পেশাজীবী, উদ্বাস্তু)।
- নাগরিকত্বের নিয়ম, কীভাবে কেউ মার্কিন নাগরিক হতে পারেন।
- ভিসার সীমা, প্রতি বছর কতজনকে ভিসা দেওয়া হবে।
- বহিষ্কারের নিয়ম, কারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে অনুপযুক্ত বিবেচিত হলে ফেরত পাঠানো যেতে পারে।
- কিছু ব্যতিক্রম বা ছাড়ের সুযোগও রয়েছে, যেখানে ভিসার অযোগ্য ব্যক্তিদেরও বিশেষ ক্ষেত্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।