USA

ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ দেশে দেশে: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ধরপাকড়

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানিসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বুধবার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ইসরাইলপন্থিরা। মুখোশ পরা একদল ইসরাইল সমর্থক ফিলিস্তিনপন্থিদের লাঠিপেটা করে। শুধু তাই নয় ফিলিস্তিনপন্থিদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালায় মার্কিন পুলিশ।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাদের তাঁবু কেড়ে নেয়। গত কয়েক দিনের তুলনায় বুধবার ক্যাম্পসগুলোতে অধিকসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্ষেত্রে সরাসরি পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করলেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন জো বাইডেন। ধারণা করা হচ্ছে, আরব ও মুসলিম ভোটারদের মনরক্ষার জন্যই বাইডেন এই কৌশল নিয়েছেন। খবর আলজাজিরা, এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের।       
বুধবার রাতে ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্রদের একটি ক্যাম্পে হামলা চালানোয় হিংসাত্মক সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাসে পুলিশের কয়েক ডজন গাড়ি টহল দেয়। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের অবসান ঘটাতে মঙ্গলবার গভীর রাতে অফিসাররা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। আমেরিকার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলমেট পরা পুলিশ দেখে কিছু ছাত্র হতাশ হয়ে পড়েন।
ধাতব প্রতিবন্ধকের আড়াল থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাত্র মার্ক টরে বলেন, ‘আমি মনে করি না আমাদের ক্যাম্পাসে এত পুলিশ বাহিনী থাকা উচিত।
তিনি বলেন, কলাম্বিয়া এবং নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ রাতে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে।

সেখানে ছাত্রদের ওপর পুলিশ অফিসারদের ‘রুক্ষ এবং কঠোর আক্রমণাত্মক’ হামলার কৌশলের নিন্দা করেন তিনি। জোস নামে নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র বলেন, ‘আমাদের লাঞ্ছিত ও নৃশংসভাবে গ্রেপ্তার এবং মুক্তি পাওয়ার আগে আমাকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
মেডিক্যালের এক ছাত্রী বন্দি আহত ছাত্রদের চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। ইসাবেল নামের ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমরা মাথায় গুরুতর আঘাত, খিঁচুনির মতো অসুস্থতা দেখেছি। পুলিশ ক্যাম্পে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কাউকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ক্যাবান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কলাম্বিয়া এবং নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিরতে প্রায় ৩শ’ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মেয়র এরিক অ্যাডামস উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ‘বাইরের আন্দোলনকারীদের’ দায়ী করেছেন। কলাম্বিয়ার ছাত্ররা বহিরাগতদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মিনুচে শফিক বলেন, ঘটনার আকস্মিকতা ‘আমাকে গভীর দুঃখে ভরিয়ে দিয়েছে।’ এর আগে তিনি পুলিশে কল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি দুঃখিত আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছি।
বিক্ষোভকারীরা গত মাস থেকে বহু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়েছে। প্রায়ই গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের যুদ্ধে ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা তাঁবু স্থাপন করে।
ইসরাইলের প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সমর্থন অনেক প্রতিবাদকারীকে ক্ষুব্ধ করেছে। তারাও প্রতিবাদে শামিল হয়েছে।  হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন পিয়েরে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, স্বল্পসংখ্যক ছাত্রই এই বিঘœ ঘটাচ্ছে এবং তারা যদি প্রতিবাদ করতে চায়, আমেরিকানদের আইনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা করার অধিকার আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কলাম্বিয়াতে পুলিশের প্রতিক্রিয়ার সমর্থন জানিয়েছেন।
উইসকনসিনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কলেজের সভাপতিকে আমি বলছি অবিলম্বে ক্যাম্পগুলো সরিয়ে ফেলুন। মৌলবাদীদের পরাজিত করুন এবং সমস্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের ক্যাম্পাস ফিরিয়ে নিন। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ কলাম্বিয়ার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল এবং তারা বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেড ডিঙ্গিয়ে হ্যামিল্টন হলে প্রবেশ করে দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে লোকেদের হাতকড়া পরিয়ে বের করে নিয়ে আসে। তারা তাঁবু ছাউনিগুলোও সরিয়ে দেয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসে পাল্টা প্রতিবাদকারীরা ফিলিস্তিনিপন্থি ক্যাম্পে রাসায়নিক পদার্থ ছিটিয়েছিল এবং পুলিশ পৌঁছানোর আগে সেখানে কাঠের বোর্ড এবং ধাতব ব্যারিকেডগুলো ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button