ফেনীতে এখনও ঘরছাড়া ৮৩৫০ পরিবার
- বানভাসি মানুষের আনুমানিক ক্ষতি ৫৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার
- প্রায় এক হাজার পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে
- লক্ষ্মীপুরে ছড়াচ্ছে ডায়রিয়া
- ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি ১২৫ রোগী
ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ৭০ হাজার ৪১৫টি আধা পাকা ও কাঁচা ঘর, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বানভাসি মানুষের আনুমানিক ৫৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বসতবাড়িতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ঘর মেরামতের ব্যয়-ক্ষতি বিবেচনা করা হয়েছে। বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৭ হাজার ৩৫০টি পরিবার এখন অন্যের ঘরে (আত্মীয় বা প্রতিবেশীর) আশ্রয় নিয়েছে, প্রায় এক হাজার পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে মাথায় কেবল প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তথ্য অনুযায়ী, ফেনী সদর উপজেলায় ২৫৫ টি আধা পাকা ঘর সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এছাড়া আধা পাকা ঘর আংশিকভাবে ক্ষতি হয়েছে ফেনী সদরে ৬৮২টি, ফুলগাজীতে ৩৫টি, দাগনভূঞায় ৮২০ টি, ছাগলনাইয়ায় ১ হাজার ৫০টি, সোনাগাজীতে ৪৫টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার ৯৫টি কাঁচা ঘরের মধ্যে ফুলগাজী উপজেলায় ২০০টি, দাগনভূঞায় ৯৬০টি, ছাগলনাইয়ায় ৫ হাজার ৭০টি, পরশুরামে ৫৬৯টি, ফেনী সদরে ৬৯৬টি, সোনাগাজীতে ৬০০টি; এতে ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
ফেনীতে আংশিকভাবে ক্ষতি হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৩৩টি কাঁচা ঘরের। যার মধ্যে ফুলগাজীতে ১ হাজার ৪৬৫টি, দাগনভূঞায় ১ হাজার ৯৮০ টি, ছাগলনাইয়ায় ২ হাজার ২৭০ টি, পরশুরামে ২ হাজার ৮২৫টি, ফেনী সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫৩৮ টি ও সোনাগাজীতে ৪১ হাজার ৩৫৫ টি; যার ক্ষতির পরিমাণ ৩২৬ কোটি ৪৭ লাখ।
দাগনভূঞা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, দাগনভূঞার কয়েকটি ইউনিয়নে এখনো পানি না নামায় প্রায় এক হাজার পরিবার এখনো আশ্রয়ণ প্রকল্পে রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জনশুমারিতে ফুলগাজীতে মোট পরিবারের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪৭৫টি, যাদের সবাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, এবারের বন্যায় ফেনীতে ১০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে চাহিদা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেলে কাজ শুরু হবে।
লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে ডায়রিয়া
জেলাটিতে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়েরিয়া, জ্বর, সর্দি ও চর্মরোগ। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিনে (শুক্রবার পর্যন্ত) জেলার ৫টি উপজেলায় শিশু সহ দেড় হাজারের অধিক বানভাসী মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ওষুধপত্রের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাহির থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের।
শুক্রবার জেলার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তিল ধারনের জায়গা নেই। এক একটি বেডে একাধিক রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের ডায়রিয়ার ওয়ার্ডের ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তিই আছে ১২৫ জন রোগী। এক দুজন নার্স দিয়ে এতজন রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্টকর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে ১০ জন ডাকে ওষুধ দিতে। তার উপরে স্যালাইন ও ওষুধ সংকট। এখন রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে ওষুধ কিনে চিকিৎসা করাচ্ছে।
ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ লিলু রানী দাস বলেন, গত তিন দিনে ৩ শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। মেঝেতে হাঁটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জেলার ৫টি উপজেলার ৪০০ আশ্রয় কেন্দ্রে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসা দিলেও তা অপর্যাপ্ত।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. আহমদ কবির জানান, বন্যার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে জেলার প্রায় দেড় হাজারের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইনসহ ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। ৩ হাজার স্যালাইন পেয়েছি সদরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।